মাঠপর্যায়ে গিয়ে শিক্ষা অর্জন করা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। এরই ধারাবাহিকতায় মাঠপর্যায়ের গবেষণা কার্যক্রমে অংশ নেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক বর্ষের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
ঠাকুরগাঁওয়ের একটি এনজিও ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ এবং গ্রামীণ সমাজের পরিবারের প্রকৃত চিত্র নিয়ে গবেষণা করা হয়।
প্রায় তিনশ শিক্ষার্থীর ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান, শিক্ষার্থীদের পোশাক, প্রয়োজনীয় খাতা-কলম, পানির বোতল ও ওষুধসহ বেশ কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বিভাগীয় শিক্ষকরা। ‘রুরাল সোসাইটি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ও মাইনোরিটি অ্যান্ড ইন্ডিজেনাস সোসাইটি’ কোর্সের অংশ হিসেবে ফিল্ড ওয়ার্কে সার্বিক পর্যবেক্ষণে ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুর রশিদ এবং সহযোগী অধ্যাপক আশরাফি বিনতে আকরাম।
ঠাকুরগাঁওয়ে এনজিও ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনটি ব্যাচকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ইএসডিও প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এবং জায়গা ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন শিক্ষার্থীরা।
গ্রুপ-১: শিক্ষার্থীরা গিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের পরিষদ পাড়া। সেখানে গিয়ে তারা মুসোহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন। তথ্য অনুযায়ী মুসোহ নৃগোষ্ঠীর লোকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং ঋষি সম্প্রদায় ভুক্ত। অধিকাংশ মুসোহ নৃগোষ্ঠী ধনিক গোষ্ঠীর জমিতে বসবাস করেন। তাদের নিজস্ব জমি না থাকলেও বর্তমানে জীবন ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
গ্রুপ-২: শিক্ষার্থীরা গিয়েছিলেন ওরাওঁ নৃগোষ্ঠী গ্রামে। প্রধানত ওরাওঁরা খ্রিষ্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একসঙ্গে বসবাস করেন। ২৯টি পরিবারের মধ্যে ২০টি পরিবার হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং নয়টি পরিবার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। মোট জনসংখ্যা প্রায় ১২৮ জন। ওরাওঁদের ভাষা ওরাওঁ এবং একক ও যৌথ পরিবার দুটিই রয়েছে তাদের মধ্যে। একই গোত্রে বিয়ের প্রচলন নেই, বর পক্ষ কনে পক্ষকে পণ দিয়ে বউ নিয়ে আসার নীতি রয়েছে ওরাওঁদের মধ্যে। বাৎসরিক উৎসবের মধ্যে রয়েছে কারাম উৎসব, কারাম পূজা ও আসারি পূজা। তাদের নিজস্ব জমিজমা নেই। অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
গ্রুপ-৩: শিক্ষার্থীরা গিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের শ্রীকৃষ্ণপুর সাঁওতাল পট্টিতে। সেখানে তাদের সঙ্গে ইএসডিও’র প্রতিনিধির পাশাপাশি ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক আশরাফি বিনতে আকরাম। তারা সাঁওতালদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সঙ্গে তাদের পূর্ববর্তী অবস্থা, সংস্কৃতি, জীবনচর্চা, খাদ্যাভাস, সামাজিক রীতি-নীতি ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন শিক্ষার্থীরা।
গ্রুপ-৪: শিক্ষার্থীরা ঠাকুরগাঁও জেলার ৬ নম্বর আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের সমৃদ্ধি কর্মসূচির শিক্ষা সহয়তা কেন্দ্রে যান। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র পরিবারের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।
গ্রুপ-৫: শিক্ষার্থীরা গিয়েছিলেন রহিমানপুর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ঋষি সম্প্রদায়ের একটি পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠী, যারা বর্তমানে হতদরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। তাদের প্রায় ৪২টি পরিবারে ১৩০ জন লোক বসবাস করেন।
গ্রুপ-৬: শিক্ষার্থীরা ঠাকুরগাঁওয়ের ১০ নম্বর জামালপুর ইউনিয়নে গেছেন। এলাকায় যে সমস্ত কাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সেখানকার সমস্যা এবং উন্নতি বা সমাধানের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন তথ্য সংগ্রহকারীরা।
গবেষণারত শিক্ষার্থীরা জানান, এই তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে লিখিত পরীক্ষাসহ একটি পেপার জমা দিতে হবে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের লিখিত পরীক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে মাঠপর্যায়ে অর্থাৎ বাস্তব জীবনের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ এবং তা জানা একজন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সমাজ ও সমাজের মানুষদের নিয়ে কাজ করতে চাই। সবাই একসঙ্গে উন্নয়নের পথে চলতে চাই।