নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে ‘অন্যায়ের’ অভিযোগে ইন বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়াকে তিরস্কার ও সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে আগামী দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সঙ্গে তৎকালীন শৃঙ্খলা কমিটির আরও ৫ শিক্ষককে তিরস্কার ও এক বছরের জন্য সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজীদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত রেজিস্ট্রার দফতর থেকে এক নোটিশের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে ৬৪তম রিজেন্ট বোর্ডে ফয়েজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সঙ্গে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে চাইলে আগামী ছয় বছরের মধ্যে তার ক্রেডিট সম্পূর্ণ করতে পারবে। আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ লাখ টাকা দেবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ফয়েজের বিরুদ্ধে মামলাকারী ফার্মেসি বিভাগের তৎকালীন ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রীতম আহমদকে তিরস্কার করা হলো। ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ফয়েজ আহমেদসহ অন্য ইস্যুতে যেসব শিক্ষককে (প্রফেসর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর, প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, প্রফেসর ড. বিপ্লব মল্লিক, নাজমুস সাকিব ও মোঃ আনোয়ার হোসেন) একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে, তাদের এ নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) তামজীদ হোসাইন চৌধুরী বলেন, ফয়েজের সঙ্গে হওয়া অন্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। এ ক্ষেত্রে আইন বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান বাদশা মিয়াকে দুই বছরের বহিষ্কার দেওয়া হয়েছে। তিনি এই সময়ে কোনও প্রকার একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজে থাকতে পারবে না। এ ছাড়াও তৎকালীন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যদের তিরস্কার করা হয়েছে এবং এক বছরের জন্য সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের ছবিতে একটি কমেন্ট করায় সাময়িক বহিষ্কার করে পাঁচ দিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে দীর্ঘ চার বছর ক্লাসে ফেরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদকে। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর মুহম্মদ মুমিন আদদ্বীন নামক একটি আইডি থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ নামক একটি গ্রুপে নোবিপ্রবির বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ভিপি নুরের ছবি এডিট করে পোস্ট করেন। সেই পোস্টটি সমালোচনা করে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি শাহরিয়ার নাসের আবার পোস্ট করেন। সেখানে ফয়েজ কমেন্ট করে বলেন, এখানে দুঃসাহসের কিছু তো দেখছি না। এই একটি কমেন্টের কারণে তাকে জেল জুলুম খাটিয়েও বেআইনিভাবে ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এসব কারণেই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন।
শেখ হাসিনার পতনের পর অধ্যাপক ড. হানিফ মুরাদকে আহ্বায়ক করে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন।