X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন, ৫৭ ধারা বাতিল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৩৪আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৫৮

মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক

জেল জরিমানার বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছ মন্ত্রিপরিষদ। আইনটি সংসদে পাস হলে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বিকালে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

কেন এই আইন করতে হলো- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সাইবার ক্রাইমের আধিক্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে এ আইন করার প্রয়োজন হয়েছে। আগে সাইবার ক্রাইমের জন্য কোনও আইন ছিল না। এখন এই জাতীয় সব অপরাধের বিচার এই আইনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনে ডিজিটালের সংজ্ঞা, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করা, ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তাহলে তাকে সাত বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। বেআইনিভাবে অন্য সাইটে প্রবেশ করার পর যদি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন তবে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। আবার কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ডিভাইসে প্রবেশ করে তাহলে এক বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা  জরিমানা বা উভয় দণ্ড। কেউ যদি কারও ডিভাইসে প্রবেশে সহায়তা করে তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি কারও কম্পিউটারের সোর্স কোড পরিবর্তন বা ধ্বংস করে তাহলে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনও ধরনের প্রপাগান্ডা চালায় তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে আইনটিতে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয়ভীতি দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করে তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখায় তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

২৮ ধারায় বলা হয়েছে,কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও  অনুভূতিতে আঘাত করে তাহলে তাকে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ মানহানিকর কোনও তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

৩০ ধারায় বলা হয়েছে, না জানিয়ে কোনও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করলে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনও ধরনের তথ্য উপাত্ত যে কোনও ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে। এর জন্য ১৪ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারাটিই ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা হিসেবে ফিরে এলো কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না’।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬২ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে।

ধর্মীয় অনুভূতির সংজ্ঞা কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘ পেনাল কোডে ধর্মীয় অনুভূতির যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে সেটা এখানে প্রযোজ্য হবে।’

৫৪ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারার সব অপরাধ জামিন অযোগ্য।

তবে ৫৪(খ) ধারায় বলা হয়েছে, ২০, ২৫, ২৯ এবং ৪৮ ধারার সব অপরাধ জামিনযোগ্য।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ আইনে কোথাও কোনও ধারায় সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়নি।’

ইতোমধ্যেই ৫৭ ধারার করা চলমান মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে− জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতীতের মামলাগুলো যথারীতি চলবে। তবে আদালতকে মনে করতে হবে এ সংক্রান্ত কোনও আইন নেই। তিনি যে রায় দেবেন সেটাই চূড়ান্ত।’

এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সভায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৮ এবং সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন:
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ বাড়ছে ২৫ বছর


 

/এসআই/এসএনএইচ/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাভিকে বরখাস্ত করতে যাচ্ছেন বার্সা প্রেসিডেন্ট
জাভিকে বরখাস্ত করতে যাচ্ছেন বার্সা প্রেসিডেন্ট
ইসরায়েলে অস্ত্র বহনকারী জাহাজকে  নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলে অস্ত্র বহনকারী জাহাজকে নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
প্রধানমন্ত্রী পুলিশের সুযোগ-সুবিধা অনেক বৃদ্ধি করেছেন: আইজিপি
প্রধানমন্ত্রী পুলিশের সুযোগ-সুবিধা অনেক বৃদ্ধি করেছেন: আইজিপি
ঈদ উপলক্ষে বাজারে এলো ওয়ালটনের বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য
ঈদ উপলক্ষে বাজারে এলো ওয়ালটনের বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক