X
সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
৩০ বৈশাখ ১৪৩১

৫২ হাজার নতুন কর্মীর সৌদি যাওয়া আটকে যাচ্ছে?

সাদ্দিফ অভি
০২ অক্টোবর ২০২০, ১৭:১০আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:১৯





মতিঝিলে বিমানের অফিসের সামনে টিকিট ও তথ্যের জন্য ভিড় সৌদি প্রবাসীদের

করোনা সংক্রমণের কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে সব দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সৌদি সরকার। তখন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ৮৬ হাজার ভিসা ছিল। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ ভিসা সৌদি আরবের। সৌদি দূতাবাসের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তারা ২৫ হাজার নতুন ভিসা নবায়ন করে দেবে’। তাতে প্রায় ৫২ হাজার ৪০০  নতুন কর্মীর সৌদি যাওয়া এই মুহূর্তে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, এত কর্মীর ভিসা নবায়ন না করা হলে পথে বসা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রাও বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তবে তারা এখনও স্পষ্টভাবে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

বায়রা’র দেওয়া তথ্যমতে, মার্চ পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ভিসার পরিমাণ ছিল ৮৬ হাজার। এরমধ্যে ৮৬-৯০ শতাংশ ভিসাই সৌদি আরবের। বাকিগুলো বিভিন্ন দেশের। সেই হিসেবে ৭৭ হাজার ৪০০ ভিসা শুধু সৌদি আরবের। এসব ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আগেই। তাই কর্মীর সৌদি আরব যেতে এগুলো নবায়ন করতে হবে। কারণ, প্রতিটি ভিসার মেয়াদ ছিল ৩ মাসের।
শ্রমবাজারে কর্মী ইস্যুতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, যারা মার্চে ভিসা পেয়েছিল কিন্তু সেটা ব্যবহার করতে পারেনি সেগুলো বাতিল করে আবার রি-ইস্যু করবে। সৌদি দূতাবাসের লোকবল কম আছে, তাদের ধারণা ২৫ হাজারের মতো নতুন ইস্যু করতে হবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে কিন্তু সবাই যাবে। সেটাই আমাদের তারা আশ্বাস দিলো যে ধৈর্য ধরতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পরও সংশয়ের মধ্যে আছে রিক্রুটিং এজেন্সি এবং সৌদিগামী কর্মীরা। রিক্রুটিং এজেন্সির সংশয় হলো, ভিসা নবায়ন না করলে এই টাকা কর্মীদের ফেরত দেওয়া নিয়ে। আবার নতুন প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ এবং অর্থেরও বিষয় আছে। আর কর্মীরা সংশয়ে আছে টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে এবং আদৌ যেতে পারবে কিনা সেই সংশয়ে।
সৌদি আরবের টিকিটের জন্য ঢাকায় আসা মাহির উদ্দিন জানান, তিনি তার ছোট ভাইয়ের ভিসার জন্য এজেন্সির কাছে টাকা জমা দিয়েছেন। মেডিক্যালসহ সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরও করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যেতে পারেনি। তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে এজেন্সি। এখন যেতে হলে ভিসা নবায়ন করতে হবে। কিন্তু দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেটিও সম্ভব হয়নি। তার এজেন্সি জানিয়েছে, দূতাবাস থেকে ভিসা রিনিউ করার এখনও কোনও নির্দেশনা তারা পায়নি।
পল্টন এলাকার এক রিক্রুটিং এজেন্সির ম্যানেজার জানান, তারা এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন। ভিসা সব রিনিউ হবে নাকি ২৫ হাজার, এই বিষয়ে এখনও তারা কিছুই জানেন না। তবে সব ভিসা রিনিউ করা না হলে এজেন্সিকে পথে বসতে হবে বলেও জানান তিনি।  
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যখন সব দেশের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায় তখন বায়রার পক্ষ থেকে সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম আমরা কী পরিমাণ ভিসা কার হাতে আছে। সেটার সংখ্যা ৮৬ হাজার, এরমধ্যে ৯০ শতাংশ হলো সৌদি আরবের। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন ২৫ হাজার ভিসা রিনিউ হবে। আমরাও শুনেছি কিন্তু আমাদের এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। বাকি ভিসা যেগুলো এজেন্সির কাছে আছে এগুলোর কী হবে আমরা এখনও জানি না। যদি এগুলো রিনিউ না হয় তাহলে সবাই পথে বসে যাবে। ১৫০০-২০০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে যদি আমার মাত্র ২৫ হাজার লোক যায় তাহলে কি ধারণা করা যায়, কি অবস্থা হবে এজেন্সিগুলোর। কর্মীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা আমি কীভাবে ফেরত দেবো?
তিনি আরও বলেন, সৌদি দূতাবাস খোলার পর আমাদের যে ভিসাগুলো আছে তার জন্য একটা গাইডলাইন দিয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ করে যত কর্মী যেতে পারবে যাবে, না পারলে যাবে না। তার জন্য আমার নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ভিসা বাতিল করে নতুন করে আবার ভিসা আনতে হবে, সেখানে যাদের নিয়োগকর্তা ভিসা দিবে না তারা যেতেই পারবে না। যাদের পাওয়া যাবে তাদের আবার নতুন প্রসেস করে পাঠাতে হবে। এখনও আমরা জানি না কতগুলা ভিসা আমরা পাবো। অনেক প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেছে করোনার কারণে, তারা হয়তো লোক নেবে না অথবা যেখানে ৫০০ কর্মী দরকার ছিল সেখানে ১০০ নিচ্ছে। ২৫ হাজার ভিসা নবায়নের বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার না।  
সঠিক তথ্য সরকারের হাতে না থাকায় বলে এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, প্রথমত কী পরিমাণ লোক আটকে আছে , ভিসা করার পর কী পরিমাণ লোক যেতে পারেনি এই তালিকা সরকারের কাছে থাকা খুব জরুরি ছিল। তাহলে কিন্তু আমরা বুঝতে পারতাম যে আমাদের কত লোক যেতে পারছে না। তাতে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো। সেই কাজটি কিন্তু আমরা করতে পারিনি। যার কারণে সমস্ত সংকটের মূলে কিন্তু তথ্য না থাকা। অথচ এটা কিন্তু কোনও কঠিন কাজ ছিল না। আমরা আগে থেকেই জানতাম যারা ছুটিতে আসছে তাদের ফেরত যাওয়া নিয়ে এবং যারা টাকা পয়সা দিয়ে ফেলেছে যাওয়ার উদ্দেশে তাদের জন্য একটি সংকট তৈরি হতে পারে। এখানে বায়রার হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। প্রবাসে যারা আছে তারা কিন্তু নিজেরাই তাদের চাকরির মেয়াদসহ অন্যান্য কাজ নিজেরাই করে নিচ্ছে, সেখানে কিন্তু আমাদের বেশি কাজ করতে হচ্ছে না। আমরা অ্যাক্টিভ হয়ে একটু আগে থেকে যদি উদ্যোগ নিতে পারতাম তাহলে কিন্তু সংকট কিছুটা কম হতো।
তিনি আরও বলেন, এখনও কিন্তু অনেক লোক আছে বিভিন্ন দেশে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমরা যেহেতু তালিকা করতে পারিনি তাই এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। এখনও যদি সরকার সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করে তাহলে আমাদের জানতে হবে আগে কারা কারা টাকা দিয়েও যেতে পারেনি। এখানে সরকার মধ্যস্থতা করতে পারতো। যে লোক ৪ লাখ টাকা দিয়েছে সে যদি এখন যেতে না পারে তাহলে বায়রা তাকে কত টাকা ফেরত দেবে, সৌদির জন্য টাকা দিয়ে দেওয়ার পর সেই টাকা যদি ফেরত না দিতে পারে তাহলে সেই টাকা কে দেবে? রিক্রুটিং এজেন্সি করোনার কারণে হয়তো বলবে টাকা দিতে না পারার কথা। তাহলে সেই কর্মী কোথায় যাবে, কোন আইনে আশ্রয় নেবে। আমার কাছে মনে হয় সামনের দিনগুলোতে এই ধরনের সংকট আরও বাড়তে পারে। তাই সরকারের উচিত তথ্য সংগ্রহ করে একটা নীতিমালা তৈরি করে ফেলা।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভিসার অপেক্ষায় ২১ হাজার হজযাত্রী
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ কমলো ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা
সৌদি আরবের দেওয়া টার্গেট পূরণ: ভিসা হয়েছে ৮৫ ভাগ হজযাত্রীর
সর্বশেষ খবর
খারকিভের সীমান্ত শহরে প্রবেশের দাবি রাশিয়ার
খারকিভের সীমান্ত শহরে প্রবেশের দাবি রাশিয়ার
সিভিল এভিয়েশনের শূন্য পদ পূরণে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ
সিভিল এভিয়েশনের শূন্য পদ পূরণে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ
এবারও বিদ্যালয়টির কোনও শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি
এবারও বিদ্যালয়টির কোনও শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি
মায়ের সুরে মেয়ের গান (ভিডিও)
মায়ের সুরে মেয়ের গান (ভিডিও)
সর্বাধিক পঠিত
‘কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলে সুযোগ-সুবিধা পাবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’
‘কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলে সুযোগ-সুবিধা পাবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’
ফুটপাত থেকে দোকান ছড়িয়েছে প্রধান সড়কে, আসছে নতুন পরিকল্পনা 
ফুটপাত থেকে দোকান ছড়িয়েছে প্রধান সড়কে, আসছে নতুন পরিকল্পনা 
রাজধানীতে ব্যবসায়ী দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রাজধানীতে ব্যবসায়ী দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
মধ্যপ্রাচ্যে এরদোয়ানের দ্বৈত খেলা: ফিলিস্তিনের প্রশংসা করে ইসরায়েলকে সহায়তা
মধ্যপ্রাচ্যে এরদোয়ানের দ্বৈত খেলা: ফিলিস্তিনের প্রশংসা করে ইসরায়েলকে সহায়তা
কুড়িগ্রামের যে স্কুলে শতভাগ ফেল!
কুড়িগ্রামের যে স্কুলে শতভাগ ফেল!