X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

জয়কে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ জুলাই ২০২১, ১৪:৫২আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২১, ১৭:২৫

ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধকালীন বন্দিদশায় তার জন্ম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া নামে নামকরণ, বৈরী পরিবেশে তার শিক্ষা, জয়ের পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা- সার্বিক বিষয় উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিচারণে। করোনা মহামারির কারণে জন্মদিনে মা-সন্তান একত্রিত হতে না পারার কষ্টের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় সন্তান জয়কে নিয়ে তিনি স্মৃতিচারণ করেন। আজ ২৭ জুলাই সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন। ১৯৭১ সালের এদিন তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী ‘২৭ জুলাই তার জন্য একটি বিশেষ দিন’ উল্লেখ করে তার মাতৃত্বের শুরুর দিনগুলোর ঘটনাবলি তুলে ধরলেন। একাত্তরের সেই দিনগুলোর ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গও মিলেমিশে একাকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ দেশের কোথাও কেউ পাকিস্তানের পতাকা ওড়ায়নি। দেশের সবখানে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়। ওই সময় ইয়াহিয়া খান ঢাকায়। সেদিন তাকে সবাই অস্বীকার করেছিল। ৩২ নম্বরের বাড়িতেও আমার বাবা সেদিন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন।

ওই সময় সন্তানসম্ভবা ছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সব সময় আমার বাবার হাত-পায়ের নখ কেটে দিতাম। এটা আমার একটি নিয়মিত কাজ ছিল। সেদিনও পতাকা ওড়ানোর পর দুপুরে বাবা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমি একটা মগে পানি নিয়ে যখন তার হাতের নক কেটে দিচ্ছি, তখন তিনি আমাকে বলছিলেন- হ্যাঁ, ভালোভাবে কেটে দে, জানি না এই সুযোগ আর পাবি কিনা। তবে তোর ছেলে হবে। আর সেই ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেবে। তার নাম জয় রাখবি।

এ ঘটনার ঠিক দুদিন পরের পঁচিশে মার্চ গণহত্যার কালরাত্রির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তারপর আমাদের বাসাটা আক্রমণ করে। তাকে (বঙ্গবন্ধু) গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এই আক্রমণের কিছু মুহূর্ত পূর্বে আমি, আমার বোন রেহানা ও আমার এক খালাতো বোনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আব্বা একরকম জোর করেই আমাদের পাঠিয়ে দেন। আমার ভাই কামাল আগেই চলে গিয়েছিল ব্যারিকেড দিতে। জামাল আর রাসেল মাকে ছেড়ে যাবে না বলে মায়ের সঙ্গে থেকে যায়। পরে আমাদের বাসায় আক্রমণ করে বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের কয়েক দিন পরেই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাসহ তার পরিবারের সবাইকে গ্রেফতার করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ১৮ নম্বর রোডের একটি অনেকটা পরিত্যক্ত একতলা বাসায় রাখা হয়। যখন আমার সন্তান প্রসবের সময় হয়েছিল, পাকিস্তানি মিলিটারিরা আমাকে হাসপাতালে যেতে দিয়েছিল। কিন্তু আমার মাকে তারা যেতে দেয়নি। হাসপাতালে তখন ডাক্তার নূর ইসলাম সাহেব ছিলেন। আমাদের সুফিয়া খাতুন, ডাক্তার ওয়াদুদ সাহেব, আমাদের মুহিত সাহেবের বোন প্রফেসর সাহেলাও ছিলেন। জয়ের জন্মটা মেডিক্যাল কলেজেই হয়।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন বন্দি, সেই বন্দি অবস্থায় জয়ের জন্ম। তার নাম জয়ই আমরা রেখেছিলাম। জন্মের পর জয়কে নিয়ে আমি ফিরে আসি বাংলোতে, সেই কারাগারেই। আমি জয়কে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়ানো। পাকিস্তানি একজন কর্নেল জিজ্ঞেস করেন, ওর নাম কি? আমি বলি যে 'জয়'। তিনি বলেন, জয় মানে? তো আমি বলি- জয় মানে জয়, জয় মানে ভিক্টরি। তো (পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা) খুব ক্ষেপে যায়। শিশু (জয়), তাকেও তারা গালি দেয়। কাজেই এরকম একটি পরিবেশে জয়ের জন্ম। আমরা সেখানে হলেই থাকতাম, কোনও প্রাইভেসি ছিল না।

‘ওই সময় খাওয়া-দাওয়ার কোনও ঠিক ছিল না’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওকে (জয়কে) নিয়ে যখন একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়িতে শেল্টার নিই, জানি না কীভাবে বেঁচেছিলাম, খাওয়া-দাওয়ার কোনও ঠিক-ঠিকানা ছিল না। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম আমার বাচ্চাটা যেন সুস্থ হয়। আমার মা-ও সব সময় সেই দোয়াই করতেন। 

তিনি বলেন, আজ সেই জয়ের জন্মদিন। আজ তার ৫০ বছর বয়স হলো। এই করোনার কারণে আমরা সবাই এক হতে পারলাম না, এটা আরেকটা দুঃখ। তবে আপনারা দিনটিকে স্মরণ করছেন এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পেছনে জয়ের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, এটা কিন্তু জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা। 

১৯৮১ সালে দেশে আসার পর বারবার গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই গৃহবন্দি অবস্থায় আমার আব্বার বন্ধু আজিজ সাত্তার চাচা জয় আর পুতুলকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেখানে স্কুল থেকেই কম্পিউটার শিক্ষা নেয়। জয় যখন ছুটিতে আসতো কম্পিউটার নিয়ে আসতো। জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার শিখেছি। আমাদের মধ্যে আলোচনা হতো, আমাদের দেশে কীভাবে কম্পিউটারের শিক্ষা প্রবর্তন করবো। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, জয় প্রতি মুহূর্তেই আমাকে পরামর্শ দিতো। তখন বলতো কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে হবে। কম্পিউটারকে মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে হবে, তাহলেই মানুষ এটা শিখবে। সেই সঙ্গে মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আর সেভাবেই আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। 

সরকার গঠনের সময়কালের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন সরকার গঠন করি তখন দেখতাম কেউই কম্পিউটার ব্যবহার করে না। টেবিলে একটি ডেস্কটপ রাখা থাকতো মাত্র। অনেকে হাত দিতে সাহস পেতো না। সরকার গঠনের পর আমি নির্দেশ দিলাম প্রত্যেকটা ফাইল কম্পিউটার টাইপ করে আসতে হবে। সেভাবেই দেখতে চাই। এরপর আমি একটি জাতীয় কমিটিও করে দিয়েছিলাম নতুন প্রযুক্তির প্রচার ও প্রসারের জন্য। ওই সময় পাঁচ বছরে মানুষ আস্তে আস্তে কিছু ব্যবহার করা শুরু করে। তখন ল্যাপটপ ও কম্পিউটার প্রতিটি অফিসে ব্যবহার করা শুরু হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে পেরেছি। ধাপে ধাপে এ পর্যন্ত যত কাজ আমরা করেছি, সবগুলোই কিন্তু জয়ের পরামর্শ মতো। কারণ, সে ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নেয়। এরপর ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নেয়। এরপর ২০০৭ সালে হার্ভার্ড থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি করে। আমি তাকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে জোর করে ভর্তি করাই। কিন্তু ওই সময়ে বন্দি হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে কোনও সাহায্য করতে পারিনি। তবে সে নিজেই তার পড়াশোনা কন্টিনিউ করে এবং পাবলিক সার্ভিসের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি করে।

তিনি বলেন, আজকে আমরা বাংলাদেশটাকে ডিজিটাল করতে পেরেছি, প্রযুক্তি শিক্ষাটাকে পপুলার করতে পেরেছি। তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে জয়, আমার বোনের ছেলে রাদওয়ান- তারা সবাই কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছে। শুভ ফলটা আজ বাংলাদেশ পাচ্ছে। 

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, চিন্তা করি এই করোনাকালে আমাদের যদি এই সুযোগটা না থাকতো! ডিজিটাল ডাটা যদি ওপেন না থাকতো। আমরা কি অবস্থায় যেতাম? আমাদের সরকার চালানো মুশকিল হয়ে যেত। মানুষের জীবনযাত্রায় বিরাট এক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতো। আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা নিয়েছি বলেই কিন্তু এটা সম্ভব হচ্ছে।

/ইএইচএস/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ তিন জনের পক্ষে শুনানি ৭ জুলাই
হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে আহতদের ওপর থুতু দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা: অ্যাটর্নি জেনারেল
দুই বছর আগের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও ছয় সাংবাদিকসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
সর্বশেষ খবর
ব্যবসার নামে প্রতারণা: শত কোটি টাকা আত্মসাৎকারীর গ্রেফতার ও বিচার দাবি
ব্যবসার নামে প্রতারণা: শত কোটি টাকা আত্মসাৎকারীর গ্রেফতার ও বিচার দাবি
ট্রাম্পের ব্যয়ের বিলকে সমর্থন করা আইনপ্রণেতাদের শাস্তির হুমকি ইলন মাস্কের
ট্রাম্পের ব্যয়ের বিলকে সমর্থন করা আইনপ্রণেতাদের শাস্তির হুমকি ইলন মাস্কের
সাবিনা ইয়াসমীনের কন্ঠে নতুন দেশাত্মবোধক গান
সাবিনা ইয়াসমীনের কন্ঠে নতুন দেশাত্মবোধক গান
এক দিনে গ্রেফতার ১২৯০
এক দিনে গ্রেফতার ১২৯০
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা          ‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’