X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখবে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৩:৩২আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৫:১২

প্রধানমন্ত্রী শেখে হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেছেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ পাবে, তা পরিবেশবান্ধব হবে। এটা আমাদের দেশের কোনোরকম ক্ষতি করবে না। দেশের মানুষ খুব স্বচ্ছ বিদ্যুৎ পাবে। যে বিদ্যুৎ তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখে যাবে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য অবদান রাখবে।’

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি বা নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনকাজের উদ্বোধন করেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশবাসী বিদ্যুৎ পাবেন কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের কারণে জ্বালানি খাতে কঠোরতা দেখাতে বাধ্য হওয়া সত্ত্বেও সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। আমাদের যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং করোনাভাইরাসের কারণে মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে কারণ আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহনব্যবস্থায় মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি চলছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর আমি আবার এ ব্যাপারে উদ্যাগ নিই। সে সময় আমি রাশিয়ায় যাই। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে আলোচনা করি এবং এ নিয়ে আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করে আসি। তখন পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্টে সর্বাধিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টা আলোচনা হয় এবং এ নিয়ে কয়েক দফা মিটিং হয়। তারপর ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর আমরা প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করি।’

রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‌‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমি আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের যারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্র দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদের সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। এবং ধন্যবাদ জানাই পাবনার ঈশ্বরদীর জনগণকে কারণ তাদের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতা পেয়েছি।’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ কথা মনে রাখতে হবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার শক্তি ও এর ব্যবহারটা শান্তির জন্য, উন্নয়নের জন্য। বিশ্বের বুকে সেই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ আজ স্থাপন করেছে। আমাদের দেশের সব রকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমরা এটা করে যাচ্ছি। এই প্রকল্পের জন্য নদী শাসন থেকে শুরু করে সব রকম যন্ত্রপাতি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার কাজ অত্যন্ত সূচারুরূপে সম্পন্ন করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‌‘জাতির পিতা আমাদের এই অঞ্চলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে এখানে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একটা পশ্চিম পাকিস্তানে, একটা আমাদের দেশে। জমিও ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমাদের অঞ্চলে আর নির্মাণ করেনি পাকিস্তানি শাসকরা। বরং দুটিই তারা নিজ দেশে নিয়ে যায়। ফলে আমরা পূর্ব বাংলার মানুষ বঞ্চিত হই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা দেশের টাকা দিয়ে সমস্ত গ্যাস ফিল্ড ক্রয় করেন। ওই সময় আমাদের যখন দুরবস্থা, সেই সময়ও তিনি ভোলেননি যে এই সম্পদ বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ। আমাদের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদসহ সব সম্পদ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিত করে দিয়ে যান। রাষ্ট্রের মালিকানা নিশ্চিত করেন। সংবিধানের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়াও জীবনমান উন্নত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও আলোচনাও করেছেন। কিন্তু তিনি তা শেষ করে যেতে পারেননি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান্ট আমরা প্রণয়ন করি। এ বিষয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী সাদেক সাহেবের নেতৃত্বে আমি একটি কমিটিও তৈরি করে দিয়েছিলাম। কমিটি ভিয়েনাসহ অনেক জায়গা যায়। আমরা অনেক কাজ এগিয়ে নিয়ে আসি, নীতিমালা তৈরি করি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে জমি দেখে যায়। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতায় না আসতে পারায় এ কাজ আর এগোয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোটও এসব বিষয়ে কোনও কাজ করেনি।’

কোভিড পরিস্থিতির বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯-এ বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও সমস্ত কাজ স্থবির ছিল। কিন্তু রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা কাজ বন্ধ করেননি। এ কাজের সঙ্গে জড়িত আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররা, নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সবাই যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরমাণু শক্তি কমিশন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কেও ধন্যবাদ জানান।

আরও পড়ুন : 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি উদ্বোধন

বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ প্রতিদিনই এগিয়ে যাচ্ছে : রোসাটম মহাপরিচালক

এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন প্রকল্পের বড় অর্জন

দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধন আজ

/এসও/এনএআর/
সম্পর্কিত
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়াতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আসুন, আমরা মানবিক হই: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী
সর্বশেষ খবর
আমাকে হরণ করে গেরুয়া উৎসার
আমাকে হরণ করে গেরুয়া উৎসার
মিশা-ডিপজলের কমিটির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নিপুণের রিট
মিশা-ডিপজলের কমিটির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নিপুণের রিট
শিরোপার সুবাস পেতে শুরু করলেও গার্দিওলা বললেন, ‘কাজটা কঠিন হতে যাচ্ছে’
শিরোপার সুবাস পেতে শুরু করলেও গার্দিওলা বললেন, ‘কাজটা কঠিন হতে যাচ্ছে’
অযত্নে নষ্ট হচ্ছে রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজগুলো
অযত্নে নষ্ট হচ্ছে রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজগুলো
সর্বাধিক পঠিত
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল 
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল 
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা