গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ৯১-এ(এ) সংশোধনের ফলে তফসিল ঘোষণার পর ভোটের দিনের আগে ইসি নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমি এ প্রশ্নের উত্তর দেবো না। আপনি বুঝে নিজেই উত্তর দেন।’
সোমবার (১০ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আরপিও সংশোধনী বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সিইসি এই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। এর আগে অবশ্য আরপিও সংশোধন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেও তা স্থগিত করে কমিশন। পরে সংসদে পাস হওয়া বিলটি আইন আকারে পাস হওয়ার পরপরই মুখ খোলেন সিইসি।
‘ইলেকশন’র জায়গায় যে ‘পোলিং’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের প্রসঙ্গ টেনে কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এটা আমরা তো বুঝি। আপনারা যা বুঝেন তা বুঝতে থাকেন। আমরা জানি আমরা বুঝি। এটা নিয়ে আপনারা যদি চিন্তাভাবনা করেন, চিন্তাভাবনা করতে থাকেন।’
এছাড়া তফসিল ঘোষণার পরদিন যদি মনে হয়, ভোটের পরিবেশ নেই, তাহলে ভোট বন্ধ করতে পারবেন কিনা—এমন বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘সেটা হাইপোথেটিক্যাল। আমি রিপ্লাই করতে যাবো না। ওই ধরনের পরিবেশ হতে দিন, ওই রকম পরিবেশ হলে দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’
কমিশন ভুল করতে পারে, কুঠার মারে নাই
‘ইলেকশন’ শব্দটির পরিবর্তে ‘পোলিং’ শব্দটি কেন আনা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ইলেকশন শব্দটা হচ্ছে জেনাস। ইলেকশনের আন্ডারে পোলিং। পোলিংয়ের আন্ডারে কখনও ইলেকশন হয় না। তো যেটা হচ্ছে, একটা নির্বাচন করে যিনি নির্বাচিত হলেন, উনি পোলড হবেন না, উনি নির্বাচিত হবেন। আর পোলিংটা হবে যেই অংশটাতে ভোটাররা গিয়ে ভোট দেবেন। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটাকে পোলিং বলা হয়। আমাদের আরপিওতে দেখবেন—ইলেকশন আর পোলিং শব্দটা ডেফিনেশনে আছে। কাজেই এই জিনিসটা বুঝবেন। এটাকে বিশাল করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে যে নির্বাচন কমিশন তার পায়ে কুঠার মেরে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন ভুল করতে পারে, কিন্তু কুঠার মারে নাই। আমরা বলছি, এটা সুচিন্তিতভাবে কারেকশন করেছি। এখানে আসলে ইলেকশন হবে না, পোলিং হবে।’
আপনারা কি ভোট বন্ধ করতে পারবেন, এই প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘সুযোগ নাই কেন। আইনে কোথায় নাই? যদি ওর (নির্বাচনের) আগের দিন বিভিন্ন কারণে একটা ইলেকশন….। একটা বেঞ্চমার্ক থাকে যে এই এই কারণে নির্বাচন বন্ধ করতে পারবেন। এই এই কারণে বন্ধ করতে পারবেন না। যদি এমন কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তখন অসম্ভব পরিস্থিতি কমিশনের কাছে মনে হলে কমিশন কেন পারবে না। এটা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন হলো কেন, আমি বুঝতে পারলাম না।’
আইনের বাইরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সেটি হলে সেটাকে বলা হয়— ইনহেরেন্ট পাওয়ার। আইনে কি লেখা—নির্বাচনের আগে ভূমিকম্প হয়ে ৫০ লাখ মারা গেলে ভোট বন্ধ করতে হবে। ওই কথা তো লেখা নেই। তারপর কি আমরা নির্বাচন করবো? সেই পরিস্থিতিতে কমিশন বসে আইন-কানুন দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।’
সিইসির দাবি কমিশন ভোট বন্ধ করতে পারবে
নির্বাচনের আগে কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কমিশন ভোট বন্ধ করতে পারবে কিনা, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন ভূমিকম্প হয়ে লাখো লোক মারা গেছে, কমিশনের কিছু ইনহেরেন্ট পাওয়ার আছে, কমিশন পারবে না কেন? অনিয়ম যদি হয়, নির্বাচনের আগে, আমাদের বিধান আছে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত করে অনিয়ম যিনি করেছেন তার প্রার্থিতা বাতিল করার সুস্পষ্ট একটা বিধান আছে। আমরা যদি দায় নিরূপণ করতে পারি যে কে অনিয়ম করেছেন, তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন চালিয়ে নিতে পারবো। আর পোলিং বা ইলেকশন শব্দটির কারণে কোনও হেরফের হবে না। এক্সিসটিং বিধানের কারণে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবো।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করবো যারা বিজ্ঞজন আছেন, আমরা পুরো জাতি প্রত্যাশা করছি, একটা সুন্দর নির্বাচন হোক। নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনকে হেয় করা বা খাটো করা যেমন বাঞ্ছনীয় নয়, যেমন নির্বাচন কমিশনকে তারা যদি গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন, আমরা উপকৃত হবো। আমরা যেকোনও গঠনমূলক সাজেশন বিবেচনায় নিতে সদা প্রস্তুত। আগামী নির্বাচনটাকে সুন্দর করার জন্য আমরা প্রত্যাশা করি যে কোনও আইন বা বিধি বিধানে ভালো কোনও সংশোধন সম্ভব হয়, আমরা হয়তো আগামীতেও করবো।’