X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
বদলে যাওয়া পঞ্চগড়

যোগাযোগে বিপ্লব, লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়াও

মাহফুজ সাদি, পঞ্চগড় থেকে ফিরে
১৫ জুলাই ২০২৩, ১৭:০০আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩, ১৫:৩৮

আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে গত ১৫ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এক সময় পিছিয়ে থাকা এই জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। দেশের প্রথম ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত এই জেলার অজপাড়াগাঁয়ে বিদ্যুতের আশীর্বাদে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগায় ক্যাশলেস সুবিধা পাচ্ছেন নাগরিকরা। সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প ও অবকাঠামো খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাবান্ধা এখন আমদানি-রফতানি ‘হাবে’ পরিণত হয়েছে। থমকে থাকা ছিটমহলেও গতির সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপির শাসনামলে এমন উন্নয়নের কথা চিন্তাও করা যেতো না, যা গত ১৫ বছরে হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যে বিএনপি সরকারের (২০০৬) সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের (২০২৩) উন্নয়ন চিত্রে চোখ রাখলে পঞ্চগড়ের বড় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই উন্নয়ন জেলার ১২ লাখ মানুষের জনজীবনে সুফল বয়ে এনেছে, জীবনমান বদলে দিয়েছে। সম্প্রতি পঞ্চগড়ে গিয়ে দেখা যায়, সড়কপথ এবং রেলপথের উন্নয়ন মানুষের মুখে মুখে। কৃষিভিত্তিক এই জেলার মানুষ বলছে, রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুফল মিলছে। সেই সঙ্গে উৎপাদিত ফসল দ্রুত সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।

সড়কের উন্নয়ন

খাতভিত্তিক উন্নয়নচিত্রে দেখা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন ৭২ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্তকরণের মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়ে-২-এর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এলজিইডির আওতায় ৩০৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হলেও ২০০৯-২০২২ সালের মধ্যে ৭৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৬৯০টি সড়ক পাকা হয়েছে। ফলে এই জেলায় মোট পাকা সড়কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৯৫ কিলোমিটার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচ উপজেলায় ২০১৮-২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৬.৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ককে এইচবিবি (হেরিং বোন বন্ড) সড়কে উন্নীত করা হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত জেলায় ব্রিজ/কালভার্টের সংখ্যা ৪৮৮টি (মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১১,৬৮৫ মিটার) থাকলেও ২০০৯-২০২২ সালে বেড়েছে আরও ৪৯২টি (মোট দৈর্ঘ্য ১১.৭৪২ মিটার)। এখন মোট ব্রিজ/কালভার্টের সংখ্যা ৯৮০টি (মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩.৪২৭ মিটার)। এছাড়া জেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ভবন নির্মাণপূর্বক ৩৭টি হাট বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। উন্নত করা হয় ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কও।

দেবীগঞ্জ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নওশাদ জামিল ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন জেলা সদরে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিএনপির শাসনামলে জেলার প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়া অনেক সড়কই মাটির ছিল। আওয়ামী লীগের গত তিন আমলে এসব রাস্তা পাকা হয়েছে। প্রধান সড়কগুলোও প্রশস্ত হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ এখন তার সুফল পাচ্ছে। বিশেষ করে যাতায়াত ও কৃষিপণ্য পরিবহনে সবচেয়ে বেশি সুফল মিলছে বলে মনে করেন নওশাদ জামিল।

রেলপথের উন্নয়ন

সড়কের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ রেলপথেও পঞ্চগড় গত ১৫ বছরে এগিয়েছে। দেশের সবচেয়ে উত্তর জনপদের এই জেলা থেকে এখন রেলে করে রাজধানীতে যাতায়াত করা যায় সহজেই। ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড় সরাসরি আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। এটিই দেশের সর্বোচ্চ দূরত্বের ট্রেন সার্ভিস, ঢাকা থেকে যার দূরত্ব ৬৩৯ কিলোমিটার। এই সেবা চালুর মধ্য দিয়ে পঞ্চগড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার।

ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আবিদুর রহমান রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন কর্মস্থলে ফেরার জন্য। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর সঙ্গে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সরাসরি রেল চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে, ২০১৮ সালে। এখন রাজধানীতে আসতে তাদের ১২-১৩ ঘণ্টা সময় লাগলেও ভোগান্তি কমেছে—বিশেষ করে দুই ঈদের সময়।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এ জেলায় রেল ট্র্যাক নির্মাণ, রেল যোগাযোগে নতুন কোচ চালুকরণ, আধুনিক রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করা হয়েছে। যা গত ২০ বছরে আমূল পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে পঞ্চগড়ের সঙ্গে অন্য জেলার আধুনিক রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ৬টি ট্রেন চলাচল করছে। এরমধ্যে ৫টি আন্তনগর ও একটি লোকাল ট্রেন। ২০১১ সালে পঞ্চগড় জেলায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের নামে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার দৃষ্টিনন্দন একটি রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করা হয়। যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া হয়ে আন্তরাষ্ট্রীয় রেল যোগাযোগের জন্য আধুনিক রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর (ভারতীয় অংশ) আমদানি-রফতানির ‘হাব’ বাংলাবান্ধা

আওয়ামী লীগের আগেকার আমলে (১৯৯৭ সাল) চালু হওয়া পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাস্থ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এখন চতুর্দেশীয় আমদানি-রফতানির ‘হাবে’ পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশী ভারত সীমান্তে অবস্থিত এই বন্দর নিয়ে ২০১১ সালে দেশটির সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেন শেখ হাসিনা সরকার। ২০১৭ সালে ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হয় বন্দরটি দিয়ে। ২০১৬ সালে বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় ভারত ও ভুটানের পাশাপাশি নেপালেও যাতায়াতের রুটে পরিণত হয়েছে। বর্তমান চিকিৎসা,পড়াশোনা ও ব্যবসার জন্য অনেকে এই রুট ব্যবহার করছেন। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাবান্ধা দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর। এটি ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে। এই তিন দেশে আমদানি-রফতানির পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ যাতায়াত করে। সড়কপথে চার দেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এনেছে এই বন্দর।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাবান্ধা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পার্ট, প্লাস্টিক পণ্য, গ্রাস শিট, ওষুধ, আলু, জুস, কটন ব্যাগ ও খাদ্যসামগ্রী রফতানি করা হচ্ছে ভারতে। দেশটি থেকে পাথর, ভুট্টা, পেঁয়াজ, ওয়েল কেক, আদা, গম, চাল, ফল এবং নেপাল ও ভুটান থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি করা হয়। বর্তমানে এ বন্দরের কলেবর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে আধুনিক বন্দরে রূপান্তরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে, যার বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। বন্দরকেন্দ্রিক প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই বন্দরের অবকাঠামোগত মূল উন্নয়নটা হয়েছে গত ১৪ বছরে। বন্দরের সাড়ে ১০ একর জায়গাও এখন যথেষ্ট মনে হচ্ছে না, আরও সাড়ে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। আগে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ ও ভারতের পণ্যবাহী ট্রাক মাল লোড-আনলোড করতো। এখন উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে মালামাল খালাস করছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। এর বিপরীতে ৪০-৫০ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়।

ভারতে চিকিৎসা নিয়ে আসা দিনাজপুরের এরশাদ হোসেনের সঙ্গে বাংলাবান্ধা বন্দরের জিরো পয়েন্টে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়েছিলাম। আমার মতো আরও অনেকে এই বন্দর দিয়ে ভারতে যান চিকিৎসার জন্য। বন্দরটি আধুনিকায়নের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। তা ছাড়া ঢাকা যেতে যে সময় লাগে, তার অনেক কম সময়ে এখান দিয়ে ভারতের অনেক স্থানে যাওয়া যায়।

ক্যাশলেস সুবিধা

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদে ক্যাশলেস সেবার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নে এই সেবা চালু রয়েছে। এর মাধ্যমে নগদ অর্থ ছাড়াই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট করতে পারছেন বাসিন্দারা। ক্যাশলেসে ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ভূমিহীন সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, অবিবাহিত সনদসহ ১৯টি সেবা দেওয়া হচ্ছে।

তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদে ক্যাশলেসের সুবিধাভোগী জাহানারা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দুই বছর ধরে মাতৃ ভাতা পাচ্ছেন তিনি। প্রথম ছয় মাস কাগজপত্র সই করে টাকা সংগ্রহ করতে হতো। ক্যাশলেসের কারণে পরের দেড় বছর মোবাইল ফোনেই চলে আসে টাকা। তিন চার মাস পরপর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার থেকে সেই টাকা তোলেন।

ক্যাশলেস সেবার আরেক সুবিধাভোগী প্রতিবন্ধী জহুরুল ইসলাম বলেন, গত ১৯ বছর ধরে সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। আগে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হতো। গত তিন বছর মোবাইলে ভাতার টাকা চলে আসছে। এই সুবিধা প্রতিবন্ধী হিসেবে আমার জন্য অনেক বড় বিষয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

সরকারি তথ্যমতে, ২০০৬ সালে বয়স্ক ভাতাভোগী ১০ হাজার ২০ জন থাকলেও ২০২৩ সালে এই সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ২০১ জনে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা ২০০৬ সালে পেতো ৬ হাজার ৭৪০ জন। ২০২৩ সালে তা চারগুণ বেড়ে হয়েছে ২৩ হাজার ৫৭১ জন। ২০০৬ সালে পঞ্চগড়ে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পেতো ১ হাজার ২৭০ জন, বর্তমানে পাচ্ছে ১৬ হাজার ৫২৮ জন। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি এবং উপবৃত্তি বর্তমান সরকার বাংলাদেশে প্রথম চালু করেছে ২০১৭-২০১৮ সালে, যার আওতায় বর্তমানে ১৭৪ জন ভাতা ও ১৭২ জন উপবৃত্তি ইতোমধ্যে পেয়েছে।

ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছে চা

কৃষির ক্ষেত্রে পঞ্চগড়ে ২০০৫-০৬ থেকে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ফসলের গড় নিবিড়তা ছিল ১৯৮ শতাংশ, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ২২২ শতাংশ হয়েছে। এ জেলায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৮ জন কৃষককে কৃষি সহায়তা কার্ড দেওয়া হয়েছে। ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৪২ জন কৃষককে দশ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৫৪ হাজার ৩৯০ জন কৃষককে বিভিন্ন ধরনের কৃষি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন জানায়, ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে পঞ্চগড়ের মাত্র ৯২৫ একর জমিতে চা চাষ হতো। বর্তমানে ১৭ হাজার ৭৯ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এ জেলায় ৯টি বড় এবং ৮ হাজার ৩৫৫টি ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে। বর্তমানে ১৫ হাজারের বেশি শ্রমিক এতে যুক্ত আছেন। লাভ বেশি হওয়ায় অনেকে এখন সমতলে চা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে সমতলে চা চাষ শুরু হয় পঞ্চগড়ের মাধ্যমে। চা শিল্পের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণে এই জেলায় বর্তমানে বিকাশমান শিল্পের জায়গা দখল করেছে চা। দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে পঞ্চগড়ে।

পঞ্চগড়ে বর্তমানে ১৭ হাজার ৭৯ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে

ছিটমহল বিনিময়

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৭৪ সালে সই হওয়া স্থল সীমানা চুক্তি এবং ২০১১ সালের প্রটোকল কার্যকরের পরিপ্রেক্ষিতে ছিটমহল বিনিময় হয়। পঞ্চগড় জেলার ৩৬টি ছিটমহলে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত (রাত ১২টার পর) থেকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলসমূহ বাংলাদেশের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই বছরের ১ আগস্ট ভোর ৬টায় বিলুপ্ত ছিটমহলসমূহে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয়। ৩৬টি ছিটমহলের ১১৯৩২৭৮ একর জমিতে মোট জনসংখ্যা ১৯ হাজার ২৪৩ জন। দীর্ঘ ৬৮ বছর যাবৎ ওই এলাকায় কোনও ধরনের উন্নয়ন না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাবেক ছিটমহলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

 

অন্যান্য খাতে উন্নয়ন

২০০৬ সালে পঞ্চগড়ের চার উপজেলায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল ছিল। বর্তমানে জেলায় চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। জেলার একমাত্র ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালকে আটতলাবিশিষ্ট ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে।

২০০৬ সালে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো ৩.৮ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ১৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে ৪৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় থাকলেও ২০২৩ সালে ১০০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। দেড় দশকের ব্যবধানে শিক্ষার হার ৪৮ থেকে ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

একসময়ে পঞ্চগড়ে শিল্প কারখানা বলতে ছিল চিনিকল, সেই ধারণা এখন অতীতে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নে। বর্তমান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানে এসেছে আমূল পরিবর্তন। দেশের প্রথম ভূমি ও গৃহহীন জেলা ঘোষণা করা হয়েছে পঞ্চগড়কে। মডেল মসজিদ নির্মাণ, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ ছাড়াও অনেক উন্নয়ন কাজ এখনও চলমান রয়েছে।

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিটুমিন গলে যাওয়া মহাসড়ক পরিদর্শনে দুদক
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন, দেখে দুদক বললো ‘নিম্নমানের কাজ’
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বশেষ খবর
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা