X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা 

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
১১ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:০০আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:০৩

মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণের সময় কোনও মাছ ধরা নৌযান যাতে নদী বা সাগরে যেতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩ বাস্তবায়ন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়। ফলে গত বছর প্রায় আট লাখ পাঁচ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদন হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ পাওয়া গেছে।’

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষ্টির উল্লেখযোগ্য একটি অংশজুড়ে রয়েছে ইলিশ মাছ। বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ ভাগের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। দেশে ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, গুণগত মানে সমৃদ্ধ করা, বড় আকারের ইলিশ উৎপাদনের সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রকম নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাটকা নিধন না করা আর মা ইলিশ সংরক্ষণ।’

এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর সরকার আরও বেশি তৎপর রয়েছে, যাতে মা ইলিশ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, গুণগত মান বেড়েছে, বড় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করতে যাচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জলপথে, স্থলপথে এমনকি আকাশ পথে মা ইলিশ রক্ষায় পর্যবেক্ষণ করবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা এই ২২ দিন ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবে, তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার ভিজিএফ সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ইলিশসমৃদ্ধ ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় এ সহায়তা পৌঁছে গেছে। এর আওতায় মোট পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে মোট ১৩ হাজার ৮৭২ দশমিক ১৮ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

শ ম রেজাউল করিম জানান, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকার নানা সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশ আহরণ আশাতীতভাবে বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ইলিশের আহরণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমকি ৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকার পর্যাপ্ত ইলিশ উৎপাদনে সহায়তা করছে জানিয়ে মন্ত্রী যোগ করেন, ‘এ বছর মা ইলিশ বা জাটকা ধরে ফেললে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন কমে যাবে। ইলিশের উৎপাদন কমে গেলে যারা ইলিশ আহরণ করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বড় ইলিশ উৎপাদন হলে যারা এখন ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত তারাই সে সময় ধরবেন, তারাই বিক্রি করবেন, বেশি মূল্য তারাই পাবেন।’

সাংবাদিকদের মন্ত্রী আরও জানান, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা ও জলবায়ুর কারণে ইলিশের বিচরণ ও গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়। অপরিকল্পিত ড্রেজিং, যানবাহন থেকে নির্গত পোড়া তেলের দূষণ, অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ আহরণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরও সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট রয়েছে।

ইলিশ রফতানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। ভারতে সীমিত পরিসরে ইলিশ রফতানি হয়ে থাকে, যা প্রতিবেশি দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৫৪১ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি করা হয়েছে, যা থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৪৩৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার তিন হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানির অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়েছে, যা থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৬২ লাখ মার্কিন ডলার।’

ইলিশের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত  সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ইলিশ উৎপাদনে ব্যয় না থাকলেও ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন খাতে ব্যয় রয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে যারা ইলিশ আহরণে বিরত থাকে তাদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানাভাবে সরকার সহায়তা করে। তবে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা লাভের কারণে ইলিশের দাম যে পর্যায়ে সহনীয় থাকা উচিত, তার চেয়ে বেশি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নানাভাবে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে তারা বেশ কিছু কাজও করেছে। মাছ আহরণের কেন্দ্র থেকে বিপণন পর্যন্ত আরও বেশি কঠোর নজরদারি এবং দেখভাল করা হলে ইলিশের দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।’

/এসআই/আরকে/
সম্পর্কিত
চট্টগ্রামে ফিশারিজ সেন্টারের উদ্বোধন করলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
‘কাপ্তাই লেকের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে’
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
সর্বশেষ খবর
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী