X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

তখন বিজয় দৃশ্যমান হতে শুরু করে

উদিসা ইসলাম
০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাঙালি বীর সন্তানদের সঙ্গে যুদ্ধে একের পর এক পরাজিত হতে থাকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী। তখন প্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনী দেশে ঢুকেছে। তারা এখন জানে কী করতে হবে। অন্যদিকে ক্রমাগত পরাজয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী দিশেহারা। এসবের মধ্যে বাংলা মায়ের দামাল সন্তানরা চির মুক্তির সন্ধানে প্রচণ্ড গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

বলাবাহুল্য, ডিসেম্বরের শুরু থেকে সময় যত এগোয়, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যেন ততই দৃশ্যমান হতে থাকে। কিন্তু পরাজয় নিশ্চিত জেনেও চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় মেতে ওঠে হিংস্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজি তার রাজাকার, আলবদর ও সেনাবাহিনীকে দেশের চারদিকে ছড়িয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। তখনও হানাদার বাহিনী বুঝতে পারেনি তাদের পতন আসন্ন।

অপরপক্ষে মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে শুরু করেছিলেন, দিনবদল শুরু হয়েছে। নয় মাসের অক্লান্ত যুদ্ধদিন শেষ না হোক, যুদ্ধ এখন তাদের হাতের মুঠোয়, বিজয়ের পথে তারা হাঁটছেন।

ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই ত্রিমুখী যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। এসব দেখে ভারত সরকার বুঝে নেয়, পাকিস্তান যুদ্ধ করবেই। তবে ভারত তখনও রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু এই মিত্রশক্তি একই সঙ্গে রাজনৈতিক সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল। তখন থেকে ভারতের প্রস্তুতিও জোরদার হয়েছিল।

২ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সেক্টরে মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমণ করলে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেয়। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। আখাউড়া রেলস্টেশনে চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর যুদ্ধ। সম্মুখযুদ্ধে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আখাউড়া এলাকা।

কসবা থেকে মুকুন্দপুর আর আখাউড়া থেকে উজানিসার পর্যন্ত তিন দিনের এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানিদের ধরাশায়ী করে ফেলে। কুমিল্লা-সিলেট সিঅ্যান্ডবি রোডের সংযোগ মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-ঢাকা রেল যোগাযোগও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তিন দিনের যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।

একই সঙ্গে এদিনে চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা হানাদারদের সঙ্গে খণ্ড খণ্ডভাবে সম্মুখযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ শমসেরনগর বিমানবন্দর মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ দখল করে নেয়। মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকিস্তানি সৈন্যদের শক্ত অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে একযোগে আক্রমণ করে অনেক পাকিস্তানি সৈন্যকে হতাহত করতে সক্ষম হয়।

একাত্তরের এই দিনে ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা রাজধানী ঢাকাকে দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করে ঢাকার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ছিলেন সম্মুখ সমরের যোদ্ধা। সে সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা তখন রাজধানীকে দখলমুক্ত করতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাকার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল। ভারত পাশে আছে, সে তথ্যও বাতাসে তখন ঘুরছে। পরাজয়ের গ্লানি ঢাকতে বেশ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালাচ্ছে তখন পাকিস্তানি বাহিনী।

তিনি বলেন, চূড়ান্ত যুদ্ধ দেখে আমরা টের পাচ্ছিলাম বিজয়ের দিকে হাঁটছি আমরা। অদম্য সাহস আর প্রবল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তখন তাদের লক্ষ্যে স্থির।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেলো পাকিস্তান
সার্কের বিকল্প নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ পাকিস্তান-চীনের: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
পাকিস্তানের জন্য ৩৪০ কোটি ডলার বাণিজ্যিক ঋণ নবায়ন করেছে চীন
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক