রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার সব খাল এবং বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী যত দ্রুত সম্ভব পুনরুদ্ধার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) তার কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর নাব্য রক্ষা ও দূষণ রোধে প্রণীত মহাপরিকল্পনার আলোকে জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা ও আশপাশের নদী ও খাল পুনরুদ্ধারের জন্য সাতটি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো– গাজীপুর, গড়ানচটবাড়ি, সাভার, পূর্বাচল, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচর। প্রধানমন্ত্রী এই সাতটি চিহ্নিত হটস্পটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই হটস্পট কৌশল বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। বৈঠকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
এর আগে সভায় সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা নদীদূষণ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে। আমাদের বাংলাদেশের বেঁচে থাকাও এই নদীর ওপর নির্ভর করে।
বিগত বছরগুলোতে নদীদূষণ, দখল বন্ধ ও নাব্য পুনরুদ্ধারে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় আসার পর তারা সবসময় নদীগুলো রক্ষা ও নাব্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।
অপরিকল্পিত নিম্ন উচ্চতার সেতু নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সেতুগুলো মানুষের জন্য উপকারী হলেও নির্মাণের সময় নৌযান চলাচলের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি এবং সে কারণেই নৌচলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সেতুগুলো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কারিগরি ও সমন্বয় কমিটি গঠনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ভিত্তিক একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দেশ রক্ষায় নদী বাঁচাতে হবে
বাংলাদেশকে রক্ষা করতে চাইলে নদীগুলোকে বাঁচানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারের লক্ষ্য ছিল নদী রক্ষা, নাব্য বজায় রাখা এবং দূষণ থেকে রক্ষা করা। তার সরকারের প্রথম মেয়াদে নদী ড্রেজিং শুরু হয়েছিল এবং জমি পুনরুদ্ধারের জন্য পলিমাটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ড্রেজিং করতে হবে এবং নাব্য বজায় রাখতে হবে। নদীভাঙন রোধকল্পে আমাদের ড্রেজিং করতে হবে। একসময় নদী শাসনের নামে উর্বর ফসলি জমিতে বেড়িবাঁধ তৈরি করা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। নদীর ধারে যেসব শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে সেগুলোর বর্জ্য সাধারণত নদীতে যায়। স্যুয়ারেজ লাইনের সমস্ত বর্জ্যও নদীতে যায়, যার ফলে দূষণ বাড়ছে। আমরা যাই করি না কেন, প্রথমেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে দুর্গন্ধ আসা খুবই বেদনাদায়ক।
রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে বাঁচাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, নদী শাসনের জন্য নদীর গভীরতার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে এবং আমাদের অবশ্যই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের লক্ষ্যে নদীর পাশাপাশি একটি বাফার জোন তৈরি করতে হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা
সরকার প্রধান পরিবেশ সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে যেকোনও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপরেও জোর দেন। তিনি বলেন, আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সবাইকে সব নগরীর জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছি। আমরা যে পরিকল্পনাই গ্রহণ করি না কেন সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পানির প্রবাহ সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে অতীতে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিকল্পিতভাবে হয়নি। পাকিস্তান আমলে এটি ঘটেনি এবং এমনকি ১৯৭৫ সালের পর অবৈধ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী যারা অস্ত্র নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল তারাও দেশের সামগ্রিক সমন্বিত ও পরিকল্পিত উন্নয়নে মনোযোগ দেয়নি। পরিবেশগত সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়েছে এবং নদীগুলোও দখল করা হয়েছে। সূত্র: বাসস।