X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ, হাজার হাজার পাকসেনা অবরুদ্ধ

উদিসা ইসলাম
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর চতুর্মুখী অগ্রযাত্রার মুখে হাজার হাজার হানাদার পাকিস্তানি কাপুরুষ সৈন্যরা দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার খবর আসতে থাকে। একেকটি এলাকা মুক্তাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা আসছে। হেরে যাওয়া বাহিনী বুঝতে পারে পালানোর পথ নেই। তাই রণাঙ্গনেই তারা মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর কাছে অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের ১১তম খণ্ডে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশে হানাদার সৈন্যদের দখলকৃত সব কয়টি বিমানবন্দর মিত্রবাহিনীর বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে শত্রুর সব বিমানঘাঁটি এখন অকেজো।’ স্থলভাগেও মুক্তিযোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং রেল সেতুগুলো উড়িয়ে দেওয়ার কারণে খানসেনাদের ঘাঁটি থেকে বের হবার কোনও পথ ছিল না।

এদিন (৭ ডিসেম্বর) যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে জেনারেল নিয়াজি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন রাওয়ালপিন্ডির হেড কোয়ার্টারে। রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সৈন্যরা দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুর ও যশোরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে।’

নিয়াজি লিখেছেন, ‘গত ১৭ দিনে যেসব খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে, তাতে জনবল ও সম্পদের বিচারে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। রাজাকারদের অস্ত্রসহ শটকে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের নিজেদের ট্যাংক, ভারী কামান ও বিমান সমর্থন না থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে।’

এদিনই সিদ্ধান্ত হয়, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশ সরকারের দফতর ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে। মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন ‘ভারতের স্বীকৃতির পর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে এটি ঠিক হয়েছে।’

পাকিস্তানি সেনাদের পালিয়ে যাওয়া, আটক হওয়ার যত কাহিনি

৭ ডিসেম্বর কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাদের ৩টি দল বিবির বাজার, ভাটপাড়া এবং বাঘেরচর দিয়ে এসে কুমিল্লা বিমানবন্দরে হানাদারদের ঘাঁটিতে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এসময় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় মুক্তিবাহিনীর। এরপর দুপুরের দিকে একপর্যায়ে টিকতে না পেরে হানাদার সেনারা বিমানবন্দরের অবস্থান ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যায়।

এদিন ভোরে সিলেট বিমানবন্দরে ছত্রীসেনাদের অবতরণ করায় ভারতীয় মিত্রবাহিনী। এর ফলে সিলেট বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন স্থান যৌথ বাহিনীর দখলে চলে আসায় এই অঞ্চল হানাদারমুক্ত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শাহবাজপুরে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এসময় হানাদার বাহিনী পিছু হটে।

একই দিনে আফসার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে হানাদাররা ভালুকা থানার অবস্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। কুড়িগ্রামে ভারতীয় বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার যোশির নির্দেশে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে কুড়িগ্রাম শহরে হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপরে ব্যাপক আর্টিলারি হামলা চালায়। এরপর হানাদার বাহিনী কুড়িগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ ও বগুড়া থেকে শুরু করে একের পর এক নানা এলাকা থেকে আসতে থাকে একই ধরনের খবর। চারপাশে প্রতিরোধের শেষ লড়াই চলছে তখন।

এদিন হানাদারমুক্ত হয় চুয়াডাঙ্গা। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আগমনের খবর শুনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর চলাচল বন্ধ করার জন্য আগের দিন সন্ধ্যায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপরের ব্রিজ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। এরপর দর্শনার দিক থেকে মিত্রবাহিনী চুয়াডাঙ্গায় এসে পৌঁছালে ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চুয়াডাঙ্গা শহর ও আলমডাঙ্গা ছেড়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে যায়। সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল ও সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ৯ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা মোংলা ও সুন্দরবনের বিশাল এলাকা হানাদারমুক্ত করে।

সে সময়ের দৈনিক যুগান্তর এই দিন একটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশ করে। যা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে সন্নিবেশিত আছে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা আপসে পায়নি। লড়াই করে ছিনিয়ে নিয়েছে। দিতে হয়েছে তাকে রক্তমূল্য। যা সে পেয়েছে তা রাখার জন্য দরকার আরও রক্তের। পূর্বের বাঙালি তার জন্য তৈরি। সেই যুদ্ধ শেষের দিনগুলোতে সবাই যেন টের পাচ্ছিলেন এবং বিজয়ের ডাক শুনছিলেন।

 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
সর্বশেষ খবর
ঢাকা-রাজবাড়ী রুটে দুই কমিউটার ট্রেনের উদ্বোধন
ঢাকা-রাজবাড়ী রুটে দুই কমিউটার ট্রেনের উদ্বোধন
মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ডিবি
পদ্মশ্রী পাওয়া শিল্পী এখন দিনমজুর!
পদ্মশ্রী পাওয়া শিল্পী এখন দিনমজুর!
সিলেটে এয়ার অ্যাস্ট্রার বিজনেস পার্টনার মিট
সিলেটে এয়ার অ্যাস্ট্রার বিজনেস পার্টনার মিট
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়