X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সিআইএ

‘ঢাকার পরিস্থিতি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে’

শেরিফ আল সায়ার
০৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০১আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪, ১৫:৩০

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ইস্যুভিত্তিক ব্রিফ করতো। তারই অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের শুরুর দিন থেকেই নিয়মিত সেই ব্রিফে রয়েছে তৎকালীন পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। ৩ মার্চ মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার কেন্ট ব্লাডের একটি মন্তব্যও সেই গোপন নথিতে যুক্ত করে সিআইএ। সেখানে শেখ মুজিবের আসন্ন (৭ মার্চ) জনসভার কথা উল্লেখ করে জানানো হয়, ‘ঢাকার পরিস্থিতি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে।’

২০১৬ সালে উন্মুক্ত হওয়া মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এই গোপন নথিতে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে কনসাল জেনারেলের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে যে হতাশা এবং ক্ষোভ গ্রাস করছে, তা বর্ণনা করা কঠিন। শেখ মুজিব আগামী রবিবার এক বিশাল জনসমাবেশে তাঁর পরিকল্পনা ঘোষণা করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কর্মবিরতি, কর প্রদানে অস্বীকৃতি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কাজ বন্ধ এবং পশ্চিম পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের মতো অসহযোগিতার নীতির কথা বলতে পারেন। তবু ঢাকার পরিস্থিতি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে।’

শুধু তাই নয়, ৪ মার্চও ব্লাডের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ‘কনসাল জেনারেল ব্লাড বিশ্বাস করেন, রবিবারের মধ্যে নাটকীয় কোনও পরিবর্তন না ঘটলে, মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।’

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ২ মার্চ প্রেসিডেন্টকে গোপন নথিতে জানায়– সংবিধানের খসড়া তৈরি করার জন্য ইয়াহিয়া খান (জাতীয় পরিষদের) অধিবেশন ডাকার কথা ছিল। কিন্তু সেই অধিবেশন স্থগিত করা হয় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের অনৈক্যের কারণে। সংবিধানের বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তানের যে দাবি—সেটি কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রের মধ্যে আটকে ফেলবে। পূর্ব ও পশ্চিমের মতবিরোধের জন্য এটিকেই প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের আশঙ্কার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলে, ‘পূর্ব পাকিস্তান আশা করেছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের আপত্তি সত্ত্বেও জাতীয় পরিষদে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে এই দাবি আদায় করে নেবে।’

গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য ছিল—ইয়াহিয়া খান জানতেন যে অধিবেশন বাতিল হলে পূর্ব পাকিস্তানে এর জোরালো প্রতিবাদ হবে। কিন্তু ইয়াহিয়া খানের অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে গোপন নথিতে পরোক্ষভাবে বোঝানো হয়— যদি এই অধিবেশন হয়, তাহলে পশ্চিম পাকিস্তানে অস্থিরতা আরও বেড়ে যেতে পারে। 

১৯৭১ সালের ২ মার্চ সিআইএ প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে আরও জানায়, শেখ মুজিব যদি কঠোর অবস্থান নেন, এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণাও করেন—তাহলে (ইয়াহিয়াকে) আরেকটি সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি কি পূর্ব পাকিস্তানকে পৃথক হতে দেবেন, নাকি সশস্ত্রে দেশকে একত্রিত রাখার চেষ্টা করবেন।

সিআইএ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে শেখ মুজিবের গোপন আলাপের কিছু তথ্য ৫ মার্চ (১৯৭১) মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের নেতা মুজিব বিদেশি সাংবাদিকদের একটি দলকে গোপনে জানিয়েছেন—রবিবারের জনসভায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক সংবিধানের খসড়া করার আহ্বান জানাবেন। এরপর কী ধরনের ফেডারেশন গঠিত হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।

এ তথ্যটি দিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের মনোভাব উল্লেখ করে জানায়, পৃথক সংবিধান করার প্রস্তাবটি স্বাধীনতা ঘোষণার চেয়ে কম কঠোর মনে হতে পারে। কিন্তু মুজিব বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে এই পরিকল্পনাটি পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতার সমান হবে। 

একই দিনের প্রতিবেদনে সিআইএ উল্লেখ করে, যদি পূর্ব পাকিস্তানে বড় ধরনের অভ্যুত্থান হয়, তাহলে সেটি সামাল দিতে পশ্চিম পাকিস্তান প্রস্তুত কিনা, সে বিষয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা শুরু হওয়ার আগে পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় ২০ হাজার সৈন্য ছিল। তবে এদের মধ্যে এক-পঞ্চমাংশ ছিল বাঙালি, যারা পূর্ব পাকিস্তানি সহকর্মীদের (আন্দোলনকারী) সঙ্গেই রয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা মনে করে, বড় অভ্যুত্থান মোকাবিলা করার জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য বিমান ও সমুদ্রপথে নিয়ে আসার সক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পর্যাপ্ত নয়। যেকোনও ক্ষেত্রেই, সেনাবাহিনী ভারতের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষার জন্য তাদের দায়িত্বরত ইউনিটকে সরিয়ে আনতে চাইবে না। এই সীমাবদ্ধতার পরও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে যতক্ষণ পর্যন্ত বড় কোনও বিদ্রোহ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সৈন্য আছে।

৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পরদিন ৮ মার্চ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে জানায়, মুজিব অসহযোগিতার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, এতে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সরকারের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়বে। এরপর সিআইএ তাদের মতামতে উল্লেখ করে, যদি সরকারি অফিস বন্ধ রাখার বিষয়ে মুজিবের আহ্বান মেনে নেওয়া হয়, তবে তিনি এবং তার আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে ‘ডিফ্যাক্টো কর্তৃপক্ষ’ হওয়ার দিকে আরও এগিয়ে যাবে।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি হত্যায় সন্দেহভাজন যুবক গ্রেফতার
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার