প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদিনের বেইজিং সফর সম্পন্ন করেছেন। ব্শে কয়েকটি লক্ষ্য নিয়ে এবার বেইজিং সফর করেন তিনি। এর মধ্যে ৫০০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ঋণ সহায়তা এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি ছিল অন্যতম। সফর শেষে ২৭ দফা যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে সাউদার্ন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (সিডি) বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও ঋণ সহায়তার বিষয়টি উল্লেখ নেই। এমনকি বাংলাদেশকে চীন যে ১৬০০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, সেটার কথাও স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক নিয়ে এই সফরের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছেন অনেকে। যদিও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণপ্রাপ্তি দিয়ে কখনও সফরের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ধারণ করা সঠিক নয়। বরং এটা ভুল বিবেচনা।
চীনের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার বিষয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সফরের আগে থেকেই আলোচনা হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল এবারের সফরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণার। কিন্তু শুধু ১০০ কোটি ইউয়ান (১৬০০ কোটি টাকা) সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে বেইজিং। সাবেক কূটনীতিকরা মনে করেন, এক সফরে ‘সব কিছু ঘটে যাবে’ বা ‘পেয়ে যাবো’ এবং সেটি বাস্তবায়ন না হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাদের মতে, এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘শুধু অর্থপ্রাপ্তি দিয়ে একটি সফরের সফলতা বা বিফলতা বিবেচনা করাটা ভুল। এর সঙ্গে রাজনৈতিক এবং অন্যান্য অনেক বিষয় জড়িত থাকে।’
ঋণ সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সফরের আগে যেভাবে বিষয়টি বলা হয়েছে এবং সে কারণে হয়তো প্রত্যাশা বেশি ছিল। যেহেতু কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি, সেজন্য এখন বিষয়টি সম্পন্ন করতে চীনের সঙ্গে আরও বেশি আলোচনা করা দরকার।’
এ বিষয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘ঋণ সহায়তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয়। আমরা টাকা চাইলেই তারা দিয়ে দেবে, বিষয়টি সেরকম নয়।’
‘বেইজিং আমাদের সহায়তা করবে জানিয়েছে এবং এ বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা অনুদান, সুদমুক্ত, সহজ শর্তে বাণিজ্যিক ঋণ দেবে। এখন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঋণের পরিমাণ, সুদের হার, মেয়াদসহ অন্যান্য বিষয় ঠিক করতে হবে’, বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বুধবার (১০ জুলাই) চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বেইজিংয়ের সেন্ট রেজিস হোটেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘চীনের প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক সহায়তার ক্ষেত্রে তোমাদের অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, সহজ শর্তে ঋণ এবং বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে একটি প্যাকেজ আমরা দেবো। এই লক্ষ্যে দুই দেশের কারিগরি কমিটি সেটি চূড়ান্ত করবে।’ একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এ সমস্যা সমাধানে সর্বত্র সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট।’’
তাইওয়ান প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে গত ১০ বছরে তিনটি শীর্ষ সফর হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছেন। অপরদিকে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন। ওই তিন সফর শেষে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে ‘ওয়ান চায়না পলিসি’কে বাংলাদেশ সমর্থন করে। এবারের সফরের যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর গৃহীত ২৭৫৮ নম্বর রেজুলেশনের বিষয়টি উদ্ধৃত করে ‘তাইওয়ান চীনের অংশ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ বলেন, ‘তাইওয়ান শব্দটি কিছু ডকুমেন্টে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কিছু ডকুমেন্টে ব্যবহার করা হয়নি। এটি নতুন নয়।’
গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই)
সাম্প্রতিক সময়ে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তিনটি নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই), গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই)। ২০২২ সালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফর করে জিডিআই’র বিষয়ে ঢাকাকে অবহিত করেন।
এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘এই উদ্যোগগুলো চীন জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে। তাই বেইজিং চাইবে এটি আলোচনা করতে এবং যৌথ বিবৃতিতে সেটির উল্লেখ রাখতে।’