বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে চিঠি লিখেছেন ইউরোপীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। গত ৯ জুন ইউরোপের চারটি দেশের নাগরিকরা এই চিঠি লেখেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে। সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি এই কথা জানান তারা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে লেখা চিঠিতে ইউরোপীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং মানবাধিকারের প্রতি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউরোপীয় এবং বিশ্বব্যাপী নাগরিক সমাজের সদস্যরা, বাংলাদেশের বর্তমান সংকট সম্পর্কে আমাদের গম্ভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছি।
চিঠিতে তারা বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ৩ লক্ষ ৫৯ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। সাংবাদিকরা ভয়ভীতির সম্মুখীন হয়েছেন, ৩৫৬ টি হয়রানির মামলা, ১৪০ টি হত্যার অভিযোগ এবং সাংবাদিকদের ১৬৭ টি স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ প্রতীকগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ১ হাজার ৫০০ টিরও বেশি ম্যুরাল এবং ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। শাহরিয়ার কবির এবং ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের মতো মানবাধিকার রক্ষাকারীদের নির্বিচারে জেলে পাঠানো হয়েছে বা লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যও সক্রিয়ভাবে মুছে ফেলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'জাতির পিতা' উপাধি বাতিল করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন 'ধানমন্ডি ৩২' বিখ্যাত জাদুঘর ভেঙে ফেলা, স্বাধীনতা যুদ্ধের সমস্ত জাদুঘর এবং আর্কাইভ ভেঙে ফেলা, বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধাদের কারাদণ্ড দেওয়া এবং যুদ্ধাপরাধের সাজা বাতিল করেছে। ২০২৫ সালের ১২ মে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা একটি ঐতিহাসিক এবং বিপজ্জনক ভাঙনের প্রতীক।
ইউরোপীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে ড. ইউনূসের সাথে আপনার বা আন্তর্জাতিক নেতাদের যেকোনো ধরনের যোগাযোগ এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বৈধতা দেবে যারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পরিত্যাগ করেছে, উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলির সাথে অংশীদারিত্ব করেছে এবং ব্যাপকভাবে অধিকার লঙ্ঘন করেছে। পরিবর্তে, আমরা অনুরোধ করছি যে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করবে এবং গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।
তারা আরও বলেন, আমরা যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ করছি যে তারা যেন এই শাসনব্যবস্থার সাথে যেকোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ত্যাগ করে; কারণ এই শাসনব্যবস্থা আমাদের ভাগ করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নীতির তীব্র বিরোধিতা করে। পরিবর্তে, আমরা বাংলাদেশি জনগণের ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার প্রতি আপনার অব্যাহত সমর্থনকে উৎসাহিত করি।
ইউরোপীয় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে চিঠিটি লিখেছেন, যুক্তরাজ্যের ইবিএফ কমিউনিকেশনসের ডিরেক্টর ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, ব্রাসেলসের সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা, জার্মানির বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপের ক্লাউস স্ট্রেস্পেল, কবি, নাট্যকার এবং তুরস্কের আর্থ সিভিলাইজেশন নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়কারী তারিক গুনের সেল।