বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। যুক্তরাজ্য সফরে আইটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, যা একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার প্রতি তার অটল প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তার নিজের কোনও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই এবং নির্বাচন শেষ হলেই ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য মুখিয়ে আছেন।
ড. ইউনূস বলেন, ভোটের সততা নিশ্চিত করতে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রেখেছেন, যা সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি সমতল ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং নতুন প্রজন্মের ভোটারদের ক্ষমতায়ন করবে, যারা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সত্যিকার অর্থে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।
ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এজেন্ডার একটি মূল ভিত্তি হলো প্রধান জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক সংস্কার। তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সংবিধান উভয় ক্ষেত্রেই মৌলিক পরিবর্তনের সুপারিশ করার জন্য কমিশন গঠনের পরিকল্পনা করেছেন। উপরন্তু, একটি ‘ঐক্য প্রতিষ্ঠা কমিশন’ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যাতে সব রাজনৈতিক দল এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে একমত হতে পারে, যার লক্ষ্য একটি ঐক্যবদ্ধ ‘জুলাই সনদ’, যা জাতিকে সামনের দিকে পরিচালিত করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অতীত অপরাধ এবং ব্যাপক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. ইউনূস বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, চীনে তার প্রাথমিক সফর বোয়াও ফোরামের জন্য পূর্ব-নির্ধারিত একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, যা দিল্লির চেয়ে বেইজিংকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ইচ্ছাকৃত ইঙ্গিত ছিল না। তিনি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শক্তিশালী ও সহায়তামূলক সম্পর্কের ওপরও জোর দিয়েছেন, সাহায্যের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন তবে সম্ভাব্য তহবিল হ্রাস সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
ইউনূসের জন্য একটি জরুরি মানবিক উদ্বেগ হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা। তিনি কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন যে ইউএসএআইডি তহবিল প্রত্যাহার এবং মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবর্তনের আশার অনুপস্থিতি শিবিরগুলোতে একটি অস্থির ‘বিস্ফোরণ’ ঘটাতে পারে। তিনি তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের অপরিহার্যতার ওপর জোর দিয়েছেন।
অর্থনৈতিকভাবে, ইউনূসের প্রশাসন পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীলতার ওপর নিবদ্ধ। ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং আস্থা পুনরুদ্ধার ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চলছে।
আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও, ড. ইউনূস বাংলাদেশের সামনে থাকা গভীর চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে গভীর দুর্নীতি এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনবিশ্বাস পুনর্গঠনের জরুরি প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তার সরকার সংস্কার প্রক্রিয়াকে সহজতর করছে, তবে এই পরিবর্তনগুলোর চূড়ান্ত রূপ এবং পরিধি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্জিত ঐকমত্য দ্বারা নির্ধারিত হবে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক সংসদীয় আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট ক্যাথরিন ওয়েস্টের সঙ্গে লন্ডনে তার হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে তার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।