X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটে বাড়ছে মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যুঝুঁকি

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৫ জুন ২০১৬, ০০:৪৮আপডেট : ১৫ জুন ২০১৬, ১৪:৪৩

যানজট দিনেদিনে বাড়ছে যানজট। এ কারণে হাসপাতালগামী রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে মনে করেন নগরবাসী ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। কেউ কেউ বলছেন, মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়ার পথে যানজট বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কোনও কোনও সময়ে যানজটের কারণে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় হাসপাতালে নেওয়ার পথেই রোগীর মৃত্যু হয় বলেও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, রাজধানীতে তীব্র যানজটের কারণে রোগীকে হাসপাতালে নিতে বেগ পেতে হয় স্বজনদের। তবে,  রোগী হাসপাতালে নেওয়ার সময় কখনও কখনও ট্রাফিক সিগন্যালের সামনে অ্যাম্বেুলেন্স থাকলে সার্জেন্টরা আগে যেতে সুযোগ দেন, কখনও উল্টোপথে যাওয়ারও সুযোগ মেলে। কিন্তু দীর্ঘ যানজটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকলে নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করতে হয় স্বজনদের। বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় যারা অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অন্য কোনও বাহনে করে রোগী হাসপাতালে নিয়ে যান। যানজটের কারণে কত মানুষ সঠিক সময়ে হাসপাতালে না যেতে পেরে মারা গেছেন, তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে কোনও-কোনও সময় রাস্তায় রোগীর মৃত্যু হলেই কেবল আলোচনায় উঠে আসে।
গত বছর ২ নভেম্বর রাজধানীর ওয়ারী ও শ্যামলী থেকে পৃথক দুজন রোগীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাদের মৃত্যু হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয়, দুপুর ২টার দিকে ওয়ারীর আর কে মিশন রোড এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন এনামুল হক। তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে বাসা থেকে দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন মেয়ে এলিনা আক্তারসহ স্বজনরা। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি রাজনৈতিক দলের মিটিংয়ের কারণে সৃষ্ট যানজটে গুলিস্তানেই কেটে যায় আড়াই ঘণ্টা। গাড়ি থেকে নেমে বাবাকে কাঁধে-কোলে করে ঢামেক হাসপাতালে ছোটেন মেয়ে এলিনাসহ আত্মীয়রা। মানুষের প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে বিকেল সোয়া ৫টায় হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসক জানান, কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

একই দিনে শ্যামলীর রিং রোডে লেগুনার ধাক্কায় আব্দুল নামের এক ব্যক্তি আহত হলে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান চাচাতো ভাই মাহফুজুল আলমসহ কয়েকজন। সেখানে অবস্থা গুরুতর দেখে প্রাথমিক ব্যান্ডেজ শেষে তাকে দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছোটেন চাচাতো ভাই মাহফুজুল আলম। যানজটের কারণে সাড়ে তিনঘণ্টা পর দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পৌঁছানোর পর আর এগুতে না পেরে রোগীকে একটা স্ট্রেচারে নিয়ে হাসপাতালে দিকে ছুটেন তারা। ফুটপাতে মানুষের ধাক্কায় রোগী পড়েও গেয়েছিল কয়েকবার। শেষ পর্যন্ত বিকেল চারটার সময় আব্দুলকে হাসপাতালে পৌঁছালে ডাক্তার এসে জানান, রোগী মারা গেছেন।

একটি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স চালান আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, রোগীদের গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে যানজট হলে তো সমস্যাই হয়। কিন্তু তার আগে রোগীর পরিবারের ফোন পেয়ে তাদের ঠিকানা পর্যন্ত যেতেও যানজট পড়তে হয়। যানজটে রোগী হাসপাতালে নিতে রাস্তায় দুই-তিন ঘণ্টা পার হয়ে যায়। এখন একজন লোক স্ট্রোক করার পর কত সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন সে কথা ডাক্তাররা ভালো বলতে পারবেন। অনেক সময় দেখি অসুস্থ রোগী অ্যাম্বুলেন্সে বেঁচে আছেন কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার বলেন রোগী বেঁচে নেই।

এ প্রসঙ্গে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের মেডিসিন লেলিন চৌধুরী বলেন, নানা সমস্যা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসেন। একজন মুমূর্ষু রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে দেরি হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। সাম্প্রতিক ঘটনা নয় যদিও, একবার একজন শিক্ষক স্বজনদের নিয়ে তার অসুস্থ ভাইকে অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতালের দিকে রওনা দিয়েছেন। পথে তীব্র যানজটে আটকে থেকে অসুস্থ ভাইয়ের মৃত্যু হয়। সেটা দেখে অন্য ভাই স্ট্রোক করেন। পরে স্বজনরা হাসপাতালে আসলেও দুজনের মৃতদেহ নিয়ে ফিরতে হয়। এক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের উচিত নির্দিষ্ট কোনও হাসপাতালের কথা চিন্তা না করে কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। এতে অন্তত রোগীর জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত হবে।  

এ প্রসঙ্গে থাকা মহানগর পুলিশ যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যানজট রোধে পুলিশ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তবে রাস্তায় কোনও রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমাদের সব পয়েন্টে বলা আছে, যদি সিরিয়াস রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স থাকে, সোজা পথে ছাড়া গেলে সোজা ভাবে ছাড়তে হবে। প্রয়োজনে উল্টোপথে হলেও হাসপাতালে দ্রুত যেতে সহায়তা করতে হবে। এবং বাস্তবে সেভাবেই আমরা কাজ করি। দ্রুত রোগী হাসপাতালে নিতে সহায়তা করতে আমাদের অফিসাররা খুবই মানবিক।

জানা গেছে, নানা উদ্যোগ  নিলেও কমছে না যানজট। রাজধানীতে যানজটে দূর না হওয়ার পেছনে পরিকল্পনার অভাব ও  দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই প্রসঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানান, সমন্বিতভাবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, লাইসেন্সিং, পরীক্ষ-নিরীক্ষা, যানবাহন পরিচালনায় সমস্বয়ের জন্য আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের স্বতন্ত্র ‘মেট্রোপলিটন যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হবে।

আরও পড়তে পারেন: আজ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আপিলের রায়

/এমএনএইচ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
৩৫তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবজন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
খিলগাঁওয়ে ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ