X
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
৯ আষাঢ় ১৪৩২

যুদ্ধ পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল করতে পারে

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৭ মে ২০২৫, ২২:০০আপডেট : ০৭ মে ২০২৫, ২২:০০

ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রথমে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ এবং পরবর্তীকালে সীমান্তে দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (৬ মে) মধ্যরাতে পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে ঢুকে এয়ারস্ট্রাইক করে ভারত। এই আক্রমণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে পুরোপুরি যুদ্ধ শুরু না হলেও যুদ্ধের দামামা শোনা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগেও ভারত ও পাকিস্তান বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এবার উত্তেজনা কমানোর জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটি সময়ই বলবে। তবে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।

তাদের মতে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা, অবিশ্বাস বৃদ্ধি, বহুপক্ষীয় সহযোগিতায় প্রভাব, উগ্রবাদের ক্ষেত্র বিস্তৃতিকরণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রভাব এ অঞ্চলে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘যেকোনও ধরনের যুদ্ধ বা যুদ্ধ পরিস্থিতি গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় বিঘ্ন ঘটাবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এই অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।’

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি হয়তো প্রশমিত হবে, কিন্তু রাজনৈতিক উত্তেজনা সহসা কমবে বলে মনে হয় না এবং এর যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।’

আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘কোনও পক্ষই এখন পর্যন্ত তাদের সামরিক কার্যক্রমকে যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেনি। এমনকি বুধবার (৭ মে) পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে—ভারতের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’

অর্থনৈতিক প্রভাব

যেকোনও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে। উত্তেজনা শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান তাদের আকাশসীমায় প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে এবং এ কারণে বিমান চলাচল করছে ঘুরপথে। ফলে বাড়ছে খরচ এবং ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির।

এ বিষয়ে সাবেক আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘ঘুরপথে বিমান চলাচলে যে ক্ষতি সেটি অর্থনীতির সামান্য একটি অংশ। গোটা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর এর প্রভাব পড়বে।’

এই অঞ্চল অস্থিতিশীল হলে বা উত্তেজনা থাকলে এখানে দেশীয় বিনিয়োগ কম হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আসতে নিরুৎসাহিত হবে। অপরদিকে বাণিজ্য ও ব্যবসা করার খরচ বেড়ে যাবে বলে তিনি জানান।

কানেক্টিভিটি

উত্তেজনা শুরু হওয়ার পর থেকে উভয় দেশ তাদের আকাশসীমায় প্লেন চলাচল সীমিত করেছে। ফলে অনেক বিমানকে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে এবং এর ফলে বাড়ছে সময় ও অর্থ। দুই দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে কানেক্টিভিটি অন্যতম। মানুষের মধ্যে যোগাযোগ থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন পর্যন্ত– সবকিছু কানেক্টিভিটির ওপর নির্ভর করে। এই উত্তেজনা অত্র অঞ্চলে কানেক্টিভিটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘কানেক্টিভিটি শুধু মানুষ বা পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এখন চিন্তা, ধারণা, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কানেক্টিভিটি আছে। এর সবগুলো এখন সীমিত হয়ে পড়বে।’

উগ্রবাদের উত্থান

যেকোনও ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদে বিশ্বাসীরা সুযোগ নেয় এবং মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। এই পরিস্থিতিতে উগ্রবাদ শুধু ওই দুই দেশে নয়, এটি অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানে ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদের সমর্থক রয়েছে। এই পরিস্থিতির কারণে এদের প্রভাব বলয় বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটি শুধু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেটি অন্য দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হতে পারে।’

বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা

বৈশ্বিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই সদস্য। দুই দেশের এই সংঘাত বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ সীমিত করবে। শুধু তাই না, এর ফলে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় তারা অন্য দেশগুলোকেও তাদের পক্ষে এবং অন্যের বিপক্ষে কাজ করার জন্য প্রভাবিত করতে পারে।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান  উভয়ই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় অবদান রেখে থাকে। দুই দেশের কূটনীতিকরা অত্যন্ত দক্ষ হিসেবে পরিচিত এবং তাদের একটি প্রভাব বলয় আছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত পরিস্থিতি বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে মিলে কাজ করার সুযোগকে খাটো করবে এবং এর ফলে বাংলাদেশের মতো অন্য অনেক দেশের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ঢাকা, বেই‌জিং ও ইসলামাবাদের বৈঠক নিয়ে যে কারণে ধোঁয়াশা
পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু চুক্তি পুনর্বহাল করবে না ভারত
ভারতে ‘বাংলাদেশি এক যুবকের’ চার বছরের কারাদণ্ড
সর্বশেষ খবর
এক দিনে গ্রেফতার ১৭৯৭
এক দিনে গ্রেফতার ১৭৯৭
তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে ইসরায়েলের বিমান হামলা
তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে ইসরায়েলের বিমান হামলা
আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের উদ্যোগ ইতিবাচক: মির্জা ফখরুল
আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের উদ্যোগ ইতিবাচক: মির্জা ফখরুল
রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানো নিয়ে রুলের শুনানি ৭ জুলাই
রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানো নিয়ে রুলের শুনানি ৭ জুলাই
সর্বাধিক পঠিত
ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহে প্রস্তুত একাধিক দেশ: রাশিয়া
ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহে প্রস্তুত একাধিক দেশ: রাশিয়া
লালমনিরহাটে মহানবীকে কটূক্তির অভিযোগে সেলুনের কর্মী বাবা-ছেলে আটক
লালমনিরহাটে মহানবীকে কটূক্তির অভিযোগে সেলুনের কর্মী বাবা-ছেলে আটক
এক্সিম ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি আখতার হোসেনের পদত্যাগ
এক্সিম ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি আখতার হোসেনের পদত্যাগ
আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি আন্দোলনকারীদের, বৈঠক করবেন আসিফ নজরুল
আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি আন্দোলনকারীদের, বৈঠক করবেন আসিফ নজরুল
কর ফাঁকি: মৌসুমী-ফারিয়া-সাবিলা নূরসহ ২৫ তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দ
কর ফাঁকি: মৌসুমী-ফারিয়া-সাবিলা নূরসহ ২৫ তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দ