X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসেও অধরা তনুর খুনিরা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা
২০ জুন ২০১৬, ০৮:০৭আপডেট : ২০ জুন ২০১৬, ২১:৫১

তনু হত্যাকাণ্ড সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ ছিল তার। গান গাইতেন, অভিনয় করতেন,বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন,সব সময় অন্যদের মাতিয়ে রাখতেন হাসি আনন্দে। হায়েনাদের থাবায় সেই তরুণীটি হারিয়ে গেছে আজ তিন মাস হলো। তার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে সারাদেশ কেঁদেছে, তার পিতা-মাতার বিচার চাওয়ার আকুতি ছুঁয়ে গেছে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়। কিন্তু, কঠোর পরিবেশ আর স্পর্শকাতর এলাকার নিজস্ব নিয়মের বেড়িতে থমকে আছে সেই বিচার প্রক্রিয়া। আজ তিন মাসেও তার হত্যাকারীদের কেউ চিহ্নিত হয়নি। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও হয়নি সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষা। এই হতভাগী তরুণীর নাম সোহাগী জাহান তনু। গত ২০ মার্চ বিকালে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতরে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে আর ফেরেননি তিনি। ওই রাতে সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায় তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ।
আরও পড়তে পারেন: দেশে ফিরেই পদত্যাগপত্র জমা দেবেন প্রধান নির্বাচক ফারুক
একটা মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে জল কতোটা ঘোলা হতে পারে তার সবই যেন দেখা গেছে তনু হত্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে। তার মৃত্যুর পরে দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনটিতে ধর্ষণের কোনও তথ্য না থাকায় সেটা মানেননি তার পরিবার সদস্যরা। এরপর পরিবার ও জনদাবির মুখে কবর থেকে লাশ উঠিয়ে করা হয় দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা। মামলাটি হাত বদল হতে থাকে একের পর এক গোয়েন্দা সংস্থার। সর্বশেষ মামলাটির দায়িত্ব পায় অপরাধ তদন্ত বিভাগ। তারা ডিএনএ পরীক্ষায় তিন ধর্ষকের বীর্যের আলামত পাওয়ার কথা জানানোর পরে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে সময়ক্ষেপন করতে থাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত বোর্ড। অবশেষে ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে নিয়ে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় সেটিতেও তথ্যের গরমিল থাকার অভিযোগে তা প্রত্যাখ্যান করে তনুর পরিবার। এমনকি সিআইডি’র পক্ষ থেকেও এই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে গোঁজামিল থাকার কথা বলা হয়েছে। সিআইডি যাদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করছে স্পর্শকাতর এলাকার অনুমতি না পাওয়ায় তাদের কাউকে এখনও ডিএনএ পরীক্ষার মুখোমুখি করতে পারেনি।    

সিআইডির একটি সূত্রের দাবি, বিশেষ এলাকা না হলে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার কিংবা ডিএনএ টেস্ট করা যেতো। কিন্তু সেখানে স্বাধীনভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ময়নাতদন্ত নিয়ে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী বোর্ডের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা ১২ জুন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে বলেন, মৃত্যুর ১০দিন পর মরদেহ ময়নাতদন্ত করায় তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা তা শনাক্ত করতে পারেনি বোর্ড। কারণ, ততদিনে তার শরীর পচে গেছে। এ কারণে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও তনুর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি। বরং মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন করতে পুলিশকে অধিকতর তদন্তসহ পারিপার্শ্বিক ঘটনা প্রবাহ তদন্ত করতে পরামর্শ দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। এছাড়া ধর্ষণের কথা বলা না হলেও মৃত্যুর আগে যৌন সংসর্গের কথা বলা হয়েছে।
অারও পড়তে পারেন: বিশ্বের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার শীর্ষে ‘ব্র্যাক’

তনুর মা আনোয়ারা বেগম দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন মিথ্যা বলে দাবি করে বলেন, ‘এ রিপোর্ট মিথ্যা। রিপোর্ট যদি মিথ্যা না হয় তাহলে তদন্তকারীরা কীভাবে বলল যে আমার মেয়ের যৌন সম্পর্ক ছিলো। আমি বার বার বলেছি আমার মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। আমার মেয়ের নাকে আঘাত, মাথায় আঘাত, শরীরে বুটের পায়ের দাগ, বুটের পারায় পায়ের রানের মাংস থেতলে ছিল, কিন্তু ডাক্তাররা কেন মৃত্যুর কারণ খুঁজে পায়নি। প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানা ভুল রিপোর্ট দিয়েছিলেন। তাকে বাঁচাতে দ্বিতীয় প্রতিবেদনও ভুল দেওয়া হয়। আমি মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার চাই।’
গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান এ বিষয়ে বলেন, ময়নাতদন্তের নামে ফরেনসিক বিভাগ নানা নাটক করেছে। তারা সময় ক্ষেপণ করেছে। তনুর হত্যার বিচারের দাবিতে আবারও আমরা আন্দোলনে নামবো।
কুমিল্লা টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ বলেন, প্রথম ময়নাতদন্তে তনুকে হত্যা ও ধর্ষণের আলামত মিলেনি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তেও হত্যার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়।
তবে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে সিআইডির ডিএনএ রিপোর্টকে দেখে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের কথা বলা হয়েছে। তবে একটি পক্ষকে বাঁচাতে সেখানে ফোর্সফুল কথাটি বলা হয়নি। 

নারী নেত্রী রোকেয়া বেগম শেফালী বলেন, সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স বা যৌন সম্পর্কের কথা বলে তনুর চরিত্র নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সিআইডি সঠিক তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি আলী আকবর মাসুম বলেন, তনুকে ধর্ষণ বা সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’র তথ্য প্রকাশের চেয়ে আইনগতভাবে তার মৃত্যুর কারণটি খুঁজে বের করাই ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের উচিত ছিল। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মো.ইব্রাহিম বলেন, দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। 

আরও পড়তে পারেন: বিশেষ অভিযানকে পূর্ণ সমর্থন দিল্লির
উল্লেখ্য,গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার পাশের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পর দিন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে তার প্রথম ময়নাতদন্ত করেন ডা. শারমিন সুলতানা। গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ জেলার মুরাদনগরের মির্জাপুর গ্রামের কবর থেকে উত্তোলন ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গত ৪ এপ্রিল ২ সপ্তাহের মধ্যেই দেওয়া হয় প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা ও ধর্ষণের আলামত না থাকায় দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ফরেনসিক বিভাগ। গত ১৬ মে তনুর কাপড়ে ৩ পুরুষের শুক্রানু পাওয়া যাওয়ার খবর সিআইডি থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আবারও আলোচনায় উঠে আসে প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং ডিএনএ প্রতিবেদনের এমন গরমিল তথ্যে ঝুলে যায় দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতের নির্দেশে ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তরের পর ১২ জুন দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেটি নিয়েও বিতর্কের ঝড় উঠে।

 

/টিএন/ আপ- এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন ওবায়দুল কাদের
স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন ওবায়দুল কাদের
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক