X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘দেবী’র নকল: ক্ষমা চাইবেন শেখর, ক্ষতিপূরণ চান শাওন

ফাতেমা আবেদীন
৩০ আগস্ট ২০১৬, ২০:৩৪আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০১৬, ২১:০৬

টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষমা চেয়েছেন ছবিটির পরিচালক

 

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দেবী’ হুবহু নকল করে পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয়েছে ‘ইএসপি-একটি রহস্য গল্প’ নামের একটি ছবি। সম্প্রতি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল জি-বাংলা সিনেমায় এই ছবিটি প্রচারিত হয়। এরপরেই বাংলাদেশি দর্শকদের নজরে আসে ছবির কাহিনী নকলের বিষয়টি। তবে শেখর দাস পরিচালিত এই ছবিতে কাহিনীকার হিসেবে নাম দেখানো হয়েছে শিবাশীষ রায়ের। ইতোমধ্যে এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী, অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন। সে সময় তিনি আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে বলেন। তিনি দাবি করেন, ছবির নির্মাতাকে ক্ষমা চাইতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে আজ সন্ধ্যায় ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া শেখর দাসের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন। সাক্ষাৎকারে ছবির গল্পটি তিনি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার এক স্কলারের কাছ থেকে নিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে যদি এটি চুরি করা গল্প হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা চাইবেন বলেও জানান।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাক্ষাৎকারটি বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশি অভিনেত্রী শাওন আপনার বিরুদ্ধে কাহিনী নকলের অভিযোগ এনেছেন

শেখর দাস: আমি এ ঘটনায় হতভম্ভ। আমার ক্যারিয়ারে এ ধরনের কাজ করিনি। শুধুমাত্র ‘নয়নছাপার দিন রাত্রি’ ছবিটি ছিল একটি গল্প থেকে নেওয়া। সেসময় আমি কপিরাইটের সব নিয়ম-কানুন মেনেই গল্প নিয়েছিলাম। এখন আমি কেনও নিজের স্বভাব পরিবর্তন করব। আমি এই ছবির কপিরাইট শিবাশীষ রায় থেকে নিয়েছি। কপিরাইট আইনের যেসব আইনি বিধি-ব্যবস্থা রয়েছে তার সবই মেনে কাজ করা হয়েছে। 

কিন্তু শাওন এটি মানছেন না, তিনি দাবি করছেন, ছবির চরিত্রগুলোর নাম ও ধর্ম ছাড়া সব এক, এমনকি সংলাপগুলোও এক...

শেখর দাস: আমি এটা বিশ্বাস করতেই পারছি না।এই অভিযোগের পর আমার কাঁপুনি উঠে গেছে। শিবাশীষ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সাবেক ছাত্র। সে প্রায়ই আমার কাছে আসতো তার লেখা স্ক্রিপ্ট নিয়ে।  এটাও এমনই একটি স্ক্রিপ্ট ছিল, যেটিকে আমি ছবি বানিয়েছি।

দেবী

আপনি শিবাষীষকে রয়ালিটি দিয়েছিলেন?

শেখর দাস: হা আমি তাকে রয়ালিটি দিয়েছি। ২০০০ সালে সে ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে পাস করে। সে প্যারা-সাইকোলজি এবং মেটাফিজিক্স নিয়ে ভীষণ আগ্রহী ছিল। তার বন্ধুদের সঙ্গেও সে প্রায়ই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতো। সে আমাকে জানিয়েছিল, বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের ছলেই এই  কাহিনীর আইডিয়া পেয়ে যায় সে। আমার এই মুহূর্তে ঠিক মনে নেই তাকে কাহিনীর জন্য ঠিক কত টাকা দিয়েছিলাম। তবে যতদূর মনে পড়ে ১০-২০ হাজারের মতো টাকা দিয়েছিলাম।

আপনি হুমায়ূন আহমেদের কোনও লেখা পড়েছিলেন?

শেখর দাস: আমি কখনওই তার কোনও লেখা পড়িনি, তবে ১৭ বছর আগে, নন্দনে তার সঙ্গে একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলাম। তাকে যে খুব ভালো করে চিনি সেই দাবিও আমি করতে পারি না। আমি গল্পটির কপিরাইট নেওয়ার পরে সেটি রেজিস্ট্রেশনও করে নেই। আমি এই অভিযোগের পর সত্যিই হতভম্ব। যেহেতু এটি নকল বলে আমার কোনও ধারণাই ছিল না, তাই আমি কাহিনির ক্রেডিট লাইনেও শিবাশীষের কৃতিত্ব দেই। নকল করে ছবি বানানোর মতো লোক আমি নই। আমি শিবাশীষের গল্পটি নিয়ে অনেক পরিবর্তন আনি। আমি যদি জানতাম এটি হুমায়ূন আহমেদের গল্প, তাহলে সরাসরি তার কাছেই যেতাম ছবিটির গল্পের জন্য। আমার হয়তো গল্পের কপিরাইট কিনতে আরও অনেক টাকা লাগতো। তবে কাহিনীকার হিসেবে তার নাম দিতে পারলে আমার ছবির বাণিজ্যিক প্রচারেও বাড়তি পালক যোগ হতো।

এটাকে কি আপনি কাকতালীয় বলে মনে করেন?

 

ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শেখর দাস

শেখর দাস: আমি ঠিক জানি না, আমি আমার লেখকদের বিশ্বাস করি। আমি অবশ্যই ‘দেবী’ উপন্যাসটি পড়ব। এরপর আমি নিজের কাজের সঙ্গে এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করব। যদি এটি আমার ভুল হয়ে থাকে তবে ক্ষমা চাইবার জন্য আমি প্রস্তুত। আমি একজন দরিদ্র চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং আমার কোনও সঞ্চয় নেই। যদি কোনও অভিযোগ আসেই তবে সেটি লেখকের ওপরে বর্তাবে। তার নিজেকে ডিফেন্ড করতে হবে। একজন পরিচালক হিসেবে আমি সবসময় ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে। আমি কখনওই চাই না আমার ছবি অজান্তেও কারও কিংবা হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কিত কোনও ব্যক্তির আবেগে আঘাত করুক।

এদিকে শেখর দাসের মন্তব্য প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে মেহের আফরোজ শাওন বলেন,‘‘একজন নির্মাতার দৃষ্টিকোণ থেকে ‘ইএসপি: একটি রহস্য গল্প’র পরিচালকের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি। তিনি ক্ষমা চাইলে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন।’’

শাওন বলেন,‘আমি তার কথার প্রেক্ষিতে ধরেই নিচ্ছি এটি পরিচালকের অনিচ্ছাকৃত ভুল। তবে এটি বললেই তো শেষ হয়ে যায় না। এই ছবিটির পরিচালকের বাইরে কাহিনীকার ছিলেন, প্রযোজক ছিলেন। তারা নিশ্চয় নির্দোষ নন। একটি ছবি তৈরির আগে অনেক কিছু যাচাই-বাছাই করতে হয়। চরিত্র নির্ধারণ, কাহিনী বিন্যাসসহ আরও অনেক কাজ রয়েছে। এরমধ্যেই জানা হয়ে যায় গল্পটি কোথা থেকে এসেছে।’

শাওন আরও বলেন, ‘একজন হুমায়ুন ভক্ত হিসেবে আমি প্রকাশ্যে ও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেব। আর হুমায়ুন আহমেদের পরিবারের একজন হিসেবে আমি তার উপন্যাসের হুবহু নকল করার অভিযোগে ক্ষতিপূরণ দাবি করবো।’

শাওন জানান, ‘ইতোমধ্যে আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। যতোদিন পর্যন্ত ছবিটির প্রসঙ্গে কোনও আনুষ্ঠানিক সুরাহা না হয়, ততোদিন পর্যন্ত এটি যেন কোথাও প্রচারিত না হয়, সে বিষয়ে ইনজাংশন জারি করার চেষ্টা করছি। আর অবশ্যই এ ঘটনার জন্য আমি ক্ষতিপূরণ চাই। সেটি ছবিটির কাহিনীকার, প্রযোজক বা নির্মাতা যেই দায়ী হন না কেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

হ‌ুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ নকল করে ছবি নির্মাণ: আইনি লড়াইয়ে কলকাতা যাচ্ছেন শাওন

বাংলাদেশের ‘দেবী’ ভারতে চুরি!

 

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’