দেশের ১৩টি জেলা এখন বন্যাকবলিত, আরও বেশ কিছু অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। দেশের বেশ কিছু নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, নদ-নদীর পর্যক্ষেণাধীন ৯০টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৫৭টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে ১৪টিতে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ৫৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেলে আরও এলাকা প্লাবিত হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, আবহাওয়া অধিদফতর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের নদ-নদীর পর্যক্ষেণাধীন সমতল স্টেশনগুলোর মধ্যে ১৮টিতে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ধরলা নদীতে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার, গাইবান্ধার ঘাঘট নদীতে ৪৪ সেন্টিমিটার, চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে ৩৭ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে যমুনা নদীতে ৮৪ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে যমুনায় ৫৪ সেন্টিমিটার, কাজিপুরে যমুনায় ৬৬ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে ৭৩ সেন্টিমিটার, বাঘাবাড়িতে আত্রাই নদীতে ১০ সেন্টিমিটার, এলাসিনে ধলেশ্বরী নদীতে ৪৯ সেন্টিমিটার, ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদীতে ৪ সেন্টিমিটার, কানাইঘাটে সুরমা নদীতে ৪৭ সেন্টিমিটার, অমলশীদে কুশিয়ারা নদীতে ৪০ সেন্টিমিটার, শেওলায় কুশিয়ারা নদীতে ৪৯ সেন্টিমিটার, জারিয়াজঞ্জালে কংস নদীতে ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে, যা পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। গঙ্গা ও পদ্মার পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা এবং কুশিয়ারার পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে।’ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর জুন মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতমাসে দেশের সব জায়াগায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়নি। জুনে ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ৩৪৭ মিলিমিটার, কিন্তু তার তুলনায় ২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেট বিভাগে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৯৫০ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগেও জুন মাসে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘জুলাই মাসজুড়ে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে মাসের প্রথমার্ধে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের কথা আগে থেকেই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। জুলাই মাসে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে কিছু কিছু স্থানে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই দুই মাসেই বঙ্গোপসাগরে দু’একটি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে।’
গত ১২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘বন্যাকবলিত ১৩ জেলায় ৩ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন চাল, এক কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক বরাদ্দ ও ৯টি আইটেমের সাড়ে ১৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত মার্চ মাসে আগাম বন্যায় ফসলহানির কারণে এর বাইরে সিলেট অঞ্চলের জেলাগুলোয় প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার পরিবারকে ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসকদের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
/সিএ/এএম