X
বুধবার, ২১ মে ২০২৫
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংঘাতে না জড়িয়েই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ

শেখ শাহরিয়ার জামান, কক্সবাজার থেকে
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৫আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৩৯

কক্সবাজারে  রোহিঙ্গারা কোনও ধরনের সংঘাতে না জড়িয়েই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য বাংলাদেশ বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কোনও শক্তি প্রয়োগ করতে চায় না সরকারের শীর্ষ নীতি-নির্ধারণী মহল। এ প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা; দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বিভিন্ন রাষ্ট্রকে সংবেদনশীল করা।’

সরকারের  এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে—রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা, যেন সব ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা শুরু করেছি। বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সহজ হবে। এর ফলে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গারা আবার বাংলাদেশে আসতে পারবে না। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে যে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফেরত যায়, সেখানে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে বা অন্য ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হলে তারা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে।’

গত বছরের অক্টোবরের আগে বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ অনিবন্ধিত ও ৩৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ছিল। গত বছরের অক্টোবর মাসে সামরিক বাহিনীর হামলা শুরু হলে জুলাই মাস পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। চলতি বছরের আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ নিরীহ রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ শুরু হলে সেপ্টেম্বর ৪ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

নিরাপত্তা ও সীমান্ত সহযোগিতা

সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিছিন্নতাবাদী বা উগ্রবাদীদের দমনের অজুহাত দেখিয়ে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তাদের অভিযান পরিচালনা করে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার চাইলে এ বিষয়ে আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।  সীমান্ত নিরাপদ রাখা ও উগ্রবাদ দমন সংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এ সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য চুক্তি করতেও আগ্রহী সরকার।’

সীমান্ত নিরাপদ রাখার জন্য বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস প্রতিষ্ঠা প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সিকিউরিটি কো-অপারেশন চুক্তি ও সীমান্তে যৌথ টহলের প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানোর প্রস্তাবও করেছে বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি, এসব উদ্যোগের কোনোটিরই কোনও স্পষ্ট জবাব মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা পাইনি।’

অপপ্রচার

সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে মিয়ানমার বিভিন্ন সময়ে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি, যেন এ ধরনের অপপ্রচার কোনও ভিত্তি না পায়।’ তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনামলের শেষদিকে তারা একটি কমিশন গঠন করে। সেখানে নৃত্বাত্তিকভাবে তারা প্রমাণ করেছে, রোহিঙ্গারা হাজার বছর ধরে রাখাইনে বসবাস করছে।এ ধরনের আরও অনেক তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে। আমরা সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করি। তাদের অপপ্রচার যেন কাউকে প্রভাবিত না করে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাঙালি বললেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময়ে তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে অভিহিত করে আসছে।  

আন্তর্জাতিক যোগাযোগ

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স তৎপর। তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তাদের সঙ্গে আলোচনা  করে থাকে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন সাধারণ পরিষদ বৈঠকের সময়ে বিষয়টি বড় আকারে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য একাধিক দেশ রাখাইনের অভ্যন্তরে একটি সেফ জোন করার কথা বিবেচনা করছে। যার প্রতি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন আছে।’ তিনি বলেন, ‘তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ একাধিক রাষ্ট্র এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
ভারতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী কুড়িগ্রামে পুশইন, আটক ৫
রোহিঙ্গাদের জন্য ৩১৬ কোটি টাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান
নাফ নদে আরাকান আর্মির গুলিতে বাংলাদেশি দুই জেলে আহত
সর্বশেষ খবর
চা রফতানি বাড়াতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা
চা রফতানি বাড়াতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা
দুটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলো কাজী অ্যান্ড কাজী টি 
দুটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলো কাজী অ্যান্ড কাজী টি 
হামজা-শমিতদের ম্যাচের টিকিট মিলবে ২৪ মে
হামজা-শমিতদের ম্যাচের টিকিট মিলবে ২৪ মে
সড়ক পারাপারের সময় প্রাণ গেলো নারীর
সড়ক পারাপারের সময় প্রাণ গেলো নারীর
সর্বাধিক পঠিত
ধানমন্ডি থানা থেকে ৩ জনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনায় হান্নান মাসউদকে শোকজ
ধানমন্ডি থানা থেকে ৩ জনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনায় হান্নান মাসউদকে শোকজ
কে হচ্ছেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব 
কে হচ্ছেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব 
পাসপোর্টের সেই বিতর্কিত তিন পরিচালকের ‘বিদায়ঘণ্টা’ বাজছে
পাসপোর্টের সেই বিতর্কিত তিন পরিচালকের ‘বিদায়ঘণ্টা’ বাজছে
এজলাসের ভিডিও ভাইরাল: বিচারককে আইনের আওতায় আনার দাবি
এজলাসের ভিডিও ভাইরাল: বিচারককে আইনের আওতায় আনার দাবি
‘ফ্যাসিবাদের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে তালিকা প্রকাশ জুলাই ঐক্যের
‘ফ্যাসিবাদের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে তালিকা প্রকাশ জুলাই ঐক্যের