X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

রোহিঙ্গা নির্যাতন: বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা বড় চ্যালেঞ্জ

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২৪আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৪৩

নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের ঢল মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের দায়বদ্ধতা ও বিচার প্রক্রিয়ার তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে প্রথম শুনানি শুরু হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। সাধারণত এ ধরনের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হতে পাঁচ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত কূটনীতিক তৎপরতায় সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অভিযুক্তদের দায়বদ্ধতা ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে নির্যাতনের দুই বছরের মাথায়। আর আইনি পদ্ধতির মধ্যে অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়ই জেনোসাইড কনভেনশন সই করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, এ ধরনের অপরাধ যে রাষ্ট্রে হবে ওই রাষ্ট্র দুর্বৃত্তদের বিচার করতে বাধ্য। কিন্তু এ ধরনের কোনও উদ্যোগ মিয়ানমার নেয়নি।’ আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস -আইসিজে) প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে, একটি প্রাথমিক আদেশ দেওয়া যার মাধ্যমে প্রথমত গণহত্যার কোনও প্রমাণ নষ্ট করা যাবে না। দ্বিতীয়ত ওই প্রমাণাদি সংরক্ষণ করা।
তিনি বলেন, ‘শুধু তাই না- তৃতীয় কোনও দেশ যাতে মিয়ানমারের বিতর্কিত অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে না পারে সে বিষয়েও একটি আদেশ আসতে পারে।’

বিচারিক প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ
অভিযুক্তদের দায়বদ্ধতা ও বিচারের পুরো প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যেকোনও বিচারিক প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ হয়ে থাকে।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট কিংবা আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের যেকোনও মামলা অনেক দিন ধরে চলে এবং এর ফলে এর সম্পূর্ণ সুফল পেতে দেরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের সদস্য মিয়ানমার। এটি জাতিসংঘের একটি অংশ। এ আদালতে জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন ১৯৪৮ ব্যবহার করে বিচার পাওয়া সম্ভব।’ এই কোর্টের সমস্যা হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ‘গণহত্যা করার ইচ্ছা ছিল’ এটি প্রমাণ করা দুরূহ বিষয়।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বসনিয়া ও সার্বিয়া মামলায় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিল যে সেখানে গণহত্যা হয়নি। কারণ নিশ্চিতভাবে এটি প্রমাণ করা যায়নি যে তৎকালীন নেতাদের গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল।’ তিনি বলেন, ‘আইসিজির রায় সব দেশের বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওই রায় যদি না মানা হয় তবে কী হবে সেটি পরিস্কার করে বলা নেই।’
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্টের সদস্য নয় মিয়ানমার। এটিকে তারা স্বীকৃতিও দেয় না। এর ফলে রায়ের বাস্তবায়নে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে তিনি জানান।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্টে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট-আইসিসি) ফৌজদারি মামলার বিচার হয় এবং সেজন্য এর তদন্তও দীর্ঘদিন ধরে চলে।’ দুর্বৃত্তদের অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য বিশেষায়িত তদন্ত দল আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্টে। বিভিন্ন মামলায় তারা সফলতার সঙ্গে তদন্ত শেষ করেছে।

তবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মিয়ানমার এই কোর্টকে স্বীকৃতি দেয় না সেই কারণে দুর্বৃত্তদের অনুপস্থিতিতে বিচার হবে। এই কারণে অনেক সময় এর গুরুত্ব কমে যায়।’ এছাড়া এই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা সম্ভব এবং এর ফলে রায়ের কার্যকারিতা পেতে আরও বেশি সময় লাগে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার থেকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার। ১৯৭৮ সালে প্রথম দফা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল আসতে শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালেও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তৃতীয়বার ২০১৭ সালে দেশটির সরকারি বাহিনীর নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা

                মিয়ানমারের বিচারই কি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান?

                রোহিঙ্গা নির্যাতনের তদন্তে অনুমোদন দিলো আইসিসি

               মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন তদন্ত দল ঢাকায়

               আইসিসি'র তদন্তের উদ্যোগ সেনাবাহিনীর মর্যাদায় আঘাত: মিয়ানমার

              মিয়ানমারের বিচারে আরও একধাপ এগোচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত

 

 

/এসএসজেড/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশু ধর্ষণ মামালায় আসামির যাবজ্জীবন
শিশু ধর্ষণ মামালায় আসামির যাবজ্জীবন
ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুল হকের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ 
ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুল হকের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ 
আবার শুরু...
আবার শুরু...
বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ফিরেছেন শানাকা
বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ফিরেছেন শানাকা
সর্বাধিক পঠিত
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত