বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থার উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান রেখে সংসদে পাস হওয়া বিলটিকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিনি বলেন, এই বিল দুরভিসন্ধিমূলক।
গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান বিল-২০২০’ বিল সংসদে পাস হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের পরও আপদকালীন ব্যয় নির্বাহে পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ সংরক্ষণ করতে পারবে। তারপর জমা থাকা অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
সংসদে পাস হওয়া বিলের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডেফিনেটলি (নিশ্চিতভাবে) এটি একটি কালো আইন। এই আইনটা করে তাদের (সরকার) যে দুরভিসন্ধি সেটাকে লিগ্যালাইজ (বৈধ) করছে। দুরভিসন্ধিটা হচ্ছে তারা তো অর্থনীতিকে একেবারে ব্যাঙ্করাফট (দেওলিয়া) করে ফেলেছে। গত কয়েকদিনের পত্র-পত্রিকাগুলোতে আমরা দেখতে পাবো যে, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিচ্ছে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা এবং পত্র-পত্রিকায় যা বেরিয়েছে তাতে অর্থনীতির নেগেটিভ চিত্র ছাড়া পজেটিভ চিত্র কোথাও দেখা যায়নি’। তিনি বলেন, ‘এই আইন থেকে প্রমাণিত হয়েছে সরকার সবখান থেকে টাকা নেওয়া শুরু করেছে। এটা দুর্নীতির একটা অংশ বলতে পারেন। কারণ এই অর্থগুলো ব্যবহার করবে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে, মেগা প্রজেক্টের ক্ষেত্রে যেখানে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই বিলের খসড়া অনুমোদন করা হয়। সরকারের ব্যাংক ঋণের ভার অনেক বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর স্থিতিতে থাকা ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা উন্নয়নের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা থেকে ওই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনার যুক্তি দেখিয়ে এই আইনটি করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যেসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কিছুটা প্রফিট করে অর্থ জমা করেছে সেখান থেকে যদি সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে মেগা প্রজেক্টে খরচ করা হয় সেখানে দুর্নীতিকে আরও প্রশস্ত করা হবে।’
দেশের অর্থনীতির সংকটের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একমাত্র প্রবাসীদের আয় রেমিটেন্স ডলারের হিসেবে কিছুটা পজেটিভনেস (ইতিবাচকতা) দেখা গেছে। তাছাড়া বাকি সবগুলো খাতের সূচক নেগেটিভ (নেতিবাচক)। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় সমস্যা রপ্তানি আয় কমে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে গার্মেন্টস খাত; যার ওপর আমাদের সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয় সেখানকার অবস্থা খুব খারাপ।’
উল্লেখ্য, সাংবাদিকদের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আলোচনার সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন দলটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।
আরও পড়ুন: বিরোধীদের আপত্তির মুখে স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ কোষাগারে নিতে বিল পাস