X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ঈদের ছুটির জন্য প্রস্তুত হাসপাতাল, চিকিৎসাসেবার ব্যত্যয় ঘটলেই ব্যবস্থা’

জাকিয়া আহমেদ
১৮ মে ২০২০, ২২:৫৩আপডেট : ১৮ মে ২০২০, ২৩:০৯

ঢাকার আটটি হাসপাতাল

ঈদের ছুটিতে প্রায় হাসপাতালেই থাকে না রোগী। ঢাকা শহর ফাঁকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর চিরচেনা চিত্র। হাসপাতালের বেডগুলো প্রায় শূন্য হতে থাকে। আর এ ঈদের তিনদিনের ছুটির সময়ে সাধারণত হাসপাতালগুলোতে রোগী না থাকার কারণে চিকিৎসকরাও থাকেন একটু আয়েশী মুডে-থাকেন অনকলে। যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে তারা হাজির হয়ে যান। তবে এবারের পরিস্থিতি পুরোটাই অন্যরকম। নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে জনবল বাড়াতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার নার্স। শিগগিরই নিয়োগ দেওয়া হবে আরও পাঁচ হাজার টেকনোলজিস্ট।

ঢাকার একাধিক সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনোভাবেই এ মহামারির সময়ে কারও কোনও ছুটি থাকবে না, সবাইকে বুঝতে হবে অন্য বছরগুলোর মতো কোনও আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ আসেনি। তাই সবাইকে রোস্টার অনুযায়ী হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগীদের সেবা দিতে হবে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার ব্যত্যয় হলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

‘ফার্স্ট কনসিডারেশন যে কোনও উপায়েই চিকিৎসা চালিয়ে নিতে হবে, চিকিৎসা করতে হবে’ মন্তব্য করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ উন নবী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদের রোস্টার ইতোমধ্যেই করে ফেলা হয়েছে, বাতিল হয়েছে ছুটি। শুধুমাত্র ঈদের দিনের জন্য যারা নন-মুসলিম চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন তাদের রাখা হয়েছে, এছাড়া ঈদের আগে দিন-পরের দিন প্রতিদিনই সবাই যে যার রোস্টার অনুযায়ী কাজ করবেন। এমনকি যদি দরকার হয় ঈদের দিনে মুসলিম চিকিৎসকরাও কাজ করবেন। সবচেয়ে বড় কথা ট্রিটমেন্ট দিয়ে রোগীর সেবা করতে হবে, কোনও বিভাগ বন্ধ হবে না।

সলিমুল্লাহ হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, সুস্থ হওয়ার পর তারাও কাজে যোগ দেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ চিকিৎসকই যোগদান করেছেন, তবে যাদের সুস্থ হওয়ার পর ১৪ দিন পূর্ণ হয়নি বা যাদেরকে সুস্থ হওয়ার পরও বাসায় থাকার জন্য চিকিৎসকরা বলেছেন তারা হয়তো যোগদান করতে পারবে না। তবে আশা করছি কোনও সমস্যা হবে না ঈদের ছুটিতে বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ উন নবী।

নিশ্চয়ই এবারের ঈদ অন্যবারের মতো হবে না মন্তব্য করে দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচারক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনেক সিরিয়াস রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছেন এবং তাদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়তে থাকবে। তাই আমাদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

‘কেবলমাত্র ঈদের দিনে হয়তো সকাল এবং রাতের শিফটে ভাগ করে মুসলিম চিকিৎসকদের থাকতে বলা হবে, এইটুকুই আমাদের রিলাক্সেশন, আর কিছু নয়’।

অন্যান্য বছরে হাসপাতালের বেশিরভাগ রোগীরাই বাড়ি চলে গেলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ডিউটিটাও হালকা হয়ে আমরাও তখন ফ্লেক্সিবল থাকি, কিন্তু এবারে সে পরিস্থিতি নেই, এ হাসপাতালে রোগী আসতেই থাকবে, বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন। জানালেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রচুর চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন, ঈদের সময় হতে হতে তারা চলে আসবেন। এবারের ঈদের ছুটি নিয়ে আমাদের সেভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে,তাই যেভাবে রোস্টার চলছে সেভাবেই চলবে জানিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আর ঈদের সময়েও জরুরি অবস্থা চালু থাকবে, রোগী কমবে না।

‘একইসঙ্গে করোনার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার কারণে রেডিওলজিস্ট, আইসিইউ, শিশু বিভাগ এবং আংশিকভাবে প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ থাকলেও সেগুলো আবার চালু করা হয়েছে। করোনাতে আক্রান্ত ৮৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৪২ জন চিকিৎসক কাজে ফিরেছেন’। তাই কোনও সমস্যা হবে না, বলেন তিনি। 

রোস্টার অনুযায়ী হাসপাতাল চলবে জানিয়ে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. এম এ রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ছুটির দিন বা ঈদের দিন কিছুই ম্যাটার করে না, বরং ছুটির দিনে বেশি লক্ষ রাখা হয় কেউ যেন চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরত না যান, কেউ যেন বলতে না পারেন, ইব্রাহীম কার্ডিয়াক থেকে ফেরত গিয়েছেন। তাই এসব সময়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চিকিৎসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বেশি রাখা হয়, সার্ভিসকে আরও ‘স্ট্রেনদেনিং’ করা হয়।

অনেক চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা কোয়ারেন্টিনে ছিলেন, সে হিসেবে হাসপাতালে জনবলের ঘাটতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা কোয়ারেন্টিনে ছিলেন তাদের কেউ কাজে যোগ দিয়েছেন, খুলে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের সিসিইউ ( করোনারি কেয়ার ইউনিট)। তবে ঈদের সময়ে রোগী খানিকটা কম হতে পারে মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা. এম এ রশীদ বলেন, একইসঙ্গে বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক এখন অনেক কম রোগী জানিয়ে তিনি বলেন, লকডাউন চলছে, ঢাকার বাইরে থেকে রোগী আসতে পারছে না। তাই হাসপাতাল সার্ভিসে কোনও সমস্যা হবে না।

ঈদের ছুটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা ব্যস্থাপনাসহ অন্যান্য বিভাগগুলোকে কীভাবে রোগীদের সেবা দেওয়া হবে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ( হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জুলফিকার আহমেদ আমিন জানালেন এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে আগামী দুই থেকে একদিনের ভেতরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ঈদের কোনও ছুটি নেই জানিয়ে আবাসিক সার্জন ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক সিয়াম বলেন চিকিৎসকদের কোনও ছুটি নেই। অন্যান্য বছরে ঈদের ছুটিতে মুসলিম চিকিৎসকদের রোস্টারের বাইরে রাখা হলেও চলতি বছরে সেরকম কিছৃ হবে না আর হাসপাতাল চালাতে কোনও সমস্যা হবে না।

‘হৃদরোগ হাসপাতালের সার্ভিসে কোনও ঘাটতি হবে না কারণ, রোগীও কম’, বলেন ডা. আশরাফুল হক সিয়াম।

ঈদের ছুটিতে এবারে হাসপাতালগুলোতে রোগী ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এবারে কোনও বিশেষ নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিটি হাসপাতালকে রোগী নিতে হবে, রোগী কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, সঠিক মনিটরিং করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। আর সে ব্যবস্থা সরকারি-বেসরকারি সবার (সব হাসপাতালের) জন্য এবং এ নির্দেশনা  যথেষ্ট কঠিন। এখন কেবল সে নির্দেশনাকে বাস্তবায়িত করতে পারলেই হবে।

সচিব বলেন, সরকারি হাসপাতাল সরকারের অধীনেই, এসব হাসপাতালে কর্মরত কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে এক ভাবে ব্যবস্থা আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে লাইসেন্স বাতিল হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো কিছু শর্তের আওতায় চলে, শর্তের ব্যত্যয় হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটাও ওই শর্তের মধ্যেই বলা আছে। যদি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে হাসপাতাল চালালে তো হবে, সার্ভিসের মনোবৃত্তিও থাকতে হবে একইসঙ্গে।

/জেএ/টিএন/
সম্পর্কিত
যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২
পরিকল্পনাবিহীন ডিগ্রি অর্জনের কারণে বেকার থাকতে হচ্ছে: সালমান এফ রহমান 
কামরাঙ্গীরচর থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না: মেয়র তাপস
সর্বশেষ খবর
তৃতীয় ধাপের ভোটের আগে চাঙ্গা মোদির এনডিএ ও বিরোধীরা
লোকসভা নির্বাচনতৃতীয় ধাপের ভোটের আগে চাঙ্গা মোদির এনডিএ ও বিরোধীরা
উগান্ডার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ৪৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার
উগান্ডার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ৪৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার
চালুনি ও সুচ, চোরের মায়ের বড় গলা ও যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন
চালুনি ও সুচ, চোরের মায়ের বড় গলা ও যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন
প্রত্নসম্পদ আইন অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা
প্রত্নসম্পদ আইন অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ