X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্নমানের হেলমেটে ঝুঁকিতে বাইকযাত্রীরা

জুবায়ের আহমেদ
১১ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০১আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৪২

ঢাকায় মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনের শুরুটা রাইড শেয়ারিং অ্যাপ দিয়ে। তবে ধীরে ধীরে নিয়মের বাইরে গিয়ে এখন মুখে মুখে দরদাম করেও যাত্রী উঠছেন বাইকে। মোটরযান আইন অনুযায়ী, মোটরসাইকেলে যাত্রী থাকলে চালকসহ দুজনকেই হেলমেট পরতে হবে। এ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপের পর মোটরবাইক রাইডারদের অতিরিক্ত হেলমেট বহন করতে দেখা যায়। তবে প্রশ্ন উঠেছে এই হেলমেটের মান নিয়ে। মূলত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে এই হেলমেট পরায় বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘নিয়মরক্ষার’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহারে উদ্দেশ্য সাধনতো হচ্ছেই না, বরং এতে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, আইনে হেলমেটের মান বিষয়ে উল্লেখ না থাকায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা।

বাইকারদের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, নিম্নমানের এই হেলমেটগুলো আড়াইশো থেকে তিনশো টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায়। আবার চাইলে টোকাইদের কাছ থেকে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় চুরির হেলমেটও কেনা যায়; এ ধরনের হেলমেটে এখন সর্বত্র। এই হেলমেটের ফিতাগুলো থাকে ঢিলেঢালা, কিছু কিছু হেলমেটে সেই ফিতা আটকানোর ক্লিপও নেই। বেশিরভাগ হেলমেটই যাত্রীদের মাথায় যুতসই ভাবে বসে না।

নিম্নমানের হেলমেটে ঝুঁকিতে বাইকযাত্রীরা

যাত্রীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে প্রেসক্লাবের সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা বাইক চালক ফিরোজ হোসেন জানান, এই হেলমেটগুলো নেওয়ার একটা কারণ কম দামে পাওয়া যায়। আর দ্বিতীয়ত ভালো হেলমেট থাকলে চুরি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশও হেলমেট নিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সুরক্ষিত হেলমেট (পুরো মুখমণ্ডল ঢাকা) ব্যবহার করতে অনেক যাত্রীও অনীহা প্রকাশ করেন বলে জানান আরেক মোটরবাইক চালক শামীম হোসেন। তার কথায়, অনেক যাত্রী বড় ধরনের হেলমেট পরতে চায় না। হাতে নিয়ে বসে থাকেন এবং এর জন্য মামলাও খেয়েছি। অনেকে আবার বলে এই হেলমেট পড়লে গরম লাগে,  তাই হালকা হেলমেট ব্যবহার করি।

কীভাবে যাত্রী সুরক্ষায় ভালো হেলমেট এর ব্যবহারে বাইক চালকদের আগ্রহ বাড়ানো যায় জানতে চাইলে তিনি পরামর্শ দেন, হেলমেটের জন্য যে মামলাগুলো হয়, সেখানে মামলা না দিয়ে জরিমানা হিসেবে পুলিশই ভালো হেলমেট কেনাতে বাধ্য করতে পারে।

পারভেজ নামে আরেক বাইক চালক বলেন, ‘মূলত পুলিশের চাপেই হেলমেট পরা হয়।’

যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়ে কখনো ভেবেছেন কি না জিজ্ঞাস করতে তিনি বলেন, 'ওইভাবে কখনো ভাবিনি, বিষয়টা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ নেই, তাই এমনি চলে যাচ্ছে।’ তবে পুলিশ যদি এই ধরনের হেলমেট আটক করে, তাহলেই এ ধরনের হেলমেট উঠে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সবুজ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘এগুলো তো হেলমেট না, ক্যাপ। বেশিরভাগ হেলমেট লুজ, ফিতা কোন মত প্যাঁচায়া চলতে হয়। আবার বাইক চলার সময় জোরে বাতাসে মাথা থেকে সরে পিছনে চলে যায়।’

নিম্নমানের হেলমেটে ঝুঁকিতে বাইকযাত্রীরা
আমিন নামে মাঝবয়সী এক যাত্রী হালকা ধরনের হেলমেটেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন জানিয়ে বলেন, ‘বড় হেলমেটগুলো গরম লাগে। ঘামে ভেজা থাকে বলে জীবাণুও থাকতে পারে। তাই এই হেলমেটই ভালো, বাতাস লাগে।’

কিন্তু এতে ঝুঁকি মনে হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কোনও ঝুঁকি নাই, জ্যাম বেশি। জ্যামই বড় সমস্যা, হেলমেট না।’

যাত্রীদের ব্যবহৃত মানহীন হেলমেটের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে হাইকোর্ট মোড়ে দায়িত্বরত সার্জেন্ট নুর ইসলাম বলেন, ‘হেলমেটের মান নিয়ে যাচায়-বাছাইয়ের কোনও আইনি নির্দেশ নেই। আইনানুযায়ী শুধু মাথায় হেলমেট না থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু কী ধরনের হেলমেট পরতে হবে এরকম কোনও বাধ্যবাধকতা এখনও করা হয়নি। হলে অবশ্যই আমরা বিষয়টা দেখবো।’

নিম্নমানের হেলমেটে ঝুঁকিতে বাইকযাত্রীরা


বাইক চালকদের অভিযোগের কথা জানালে তা প্রত্যাখ্যান করে সার্জেন্ট নুর ইসলাম বলেন, ‘সার্জেন্ট বা ট্রাফিক পুলিশ কখনও কারো হেলমেট নেয় না। কাউকে এমনি এমনি মামলা দেয় না। বাইক রাইডাররা বড় রাস্তাগুলোর এমন এমন জায়গায় বাইক পার্কিং করে, যেকোনও গাড়ি মোড় নিতে গেলে জ্যাম লেগে যায়। সেখান থেকে বাইকারদের বারবার সরিয়ে দিলেও তার স্থায়িত্ব থাকে ১ মিনিট। আমরা চলে গেলে তারা আবার ওই একই জায়গায় এসে দাঁড়ায়। যেখান সেখান থেকে যাত্রী উঠায়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই মামলা দেয় অনেকে। আবার অনেকে বাইক রেখে দূরে বসে থাকে, তখন তার হেলমেট নিয়ে পুলিশ বক্সে রাখি। যাতে কেউ হেলমেট নিতে আসলে তাকে জরিমানা করতে পারি। তখন তারা মামলা খাওয়ার ভয়ে আর হেলমেট নিতে আসে না। আমি এক জায়গায় সাত দিন ডিউটি করি, যে কেউ এসে তাদের হেলমেট দাবি করলে আমি দিতে বাধ্য।

গ্রিন রোড সিগনালে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মীর সবুজ বলেন, ‘এগুলো অবশ্যই অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ একটা হেলমেট। কিন্তু হেলমেটের মান নিয়ে কোনও আইনি নির্দেশনা নেই। আমরা শুধু মাথায় হেলমেট না পড়লে আইনের ব্যবহারটা করি।'

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ধ্রুব এষ হাসপাতালে
কামরাঙ্গীরচর নাগরিক পরিষদের সঙ্গে মেয়র তাপসের মতবিনিময়
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
সর্বশেষ খবর
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন