অমর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে যে কোনও ধরনের জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার আশঙ্কাও ‘উড়িয়ে দিচ্ছেন না’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে এসে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
হামলার আশঙ্কার কারণ হিসেবে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের রায়ের পর জঙ্গিরা কিছুটা ক্ষিপ্ত এবং তাদের নেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত মেজর জিয়া ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকাকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কোনও ধরনের ঝুঁকি আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। সেসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে আমরা মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
জঙ্গিরা যদি কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার চেষ্টা করে, সেই পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা আশা করি সে ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। জঙ্গিদের তৎপরতা বর্তমানে শূন্যের পর্যায়ে রয়েছে। আর তাদের মূল নেতা শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তাকে ধরার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। মেজর জিয়াকে ধরার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে মোটা অংকের পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, প্রতিবছরই লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে বেশকিছু বই আসে আর সেগুলো নিয়ে হইচই শুরু হয়। আমাদের প্রস্তুতি মিটিংয়ে এসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে প্রতিদিন যেসব শতশত বই প্রকাশিত হয় সেসব বই মনিটরিং করা সম্ভব নয় আর এতগুলো বই পড়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া খুবই কষ্টকর বিষয়। এসবের জন্য লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে গোয়েন্দা পুলিশ এবং সিটিটিসি সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। প্রতিদিন কি কি বই আসছে সেগুলো আমরা আলাদাভাবে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি। তবে রাতের বেলায় যারা স্টলে বই ঢোকাবেন আর সেসব বই থেকে যদি কোনো ধরনের হইচই সৃষ্টি হয় তাহলে সেই বইয়ের স্টল এর মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মানাতে থাকবে পুলিশের কড়াকড়ি উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। মেলার প্রবেশমুখে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা থাকবে। মেলার দর্শনার্থীরা যারা আসবে তাপমাত্রা মেপে মেলায় প্রবেশ করবে। মেলার ভেতর মাস্ক পরার বিষয়টি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যারা বইমেলার স্টলে থাকবে তাদের টিকা কার্ড দেখাতে হবে তা না হলে জরিমানা আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমরা সবাই হাতে হাত ধরে কাজ করবো।'
অমর একুশে বই মেলা একটি প্রাণের বইমেলা এটি যেন নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয় এবং সুন্দরভাবে শেষ হয় সেজন্য সবার প্রতি সহযোগিতা চান ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
পহেলা বৈশাখের মতো একুশে বইমেলাও জাতীয় জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মেলার নিরাপত্তাও এখন ডিএমপির বৃহৎ কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। মেলাকেন্দ্রিক এক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এ ছাড়া দোয়েল চত্বরে এবং শাহবাগ এবং নীলক্ষেত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। এসব এলাকায় তল্লাশি দল থাকবে সন্দেহমূলক কোন কিছু থাকলে তাদের তল্লাশি করা হবে। মেলা চলাকালীন যেন কোনও গাড়ি ঢুকতে না পারে সে বিষয়গুলো তারা মনিটরিং করবেন। মেলায় ঢোকার জন্য বাংলা একাডেমীর দুটি গেইট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারটি গেইট থাকবে। সেই সঙ্গে বাংলা একাডেমি থেকে বের হওয়ার জন্য দু’টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থেকে বের হওয়ার জন্য চারটি গেট থাকবে।
প্রতিটি প্রবেশ পথে 'আর্চ ওয়ে' রাখা হবে উল্লেখ করে ডিএমপি প্রধান বলেন, মেলায় থাকবে সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণে। মেলার আশপাশে এলাকাতেও থাকবে সিসিটিভি নজরদারি, সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি ডিবি এবং সিটিটিসি টিম কাজ করবে। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও থাকবে। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ভ্যান, সোয়াতের ভ্যান থাকবে। ডিএমপির পক্ষ থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে খাবার পানি সাপ্লাই ব্যবস্থা রাখা হবে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে পাশে একটি বেস্ট ফিডিং ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আসলে সেখানে মায়েরা সন্তানকে দুধ পান করাতে পারবেন।