X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পি কে হালদারের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ, পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার

নুরুজ্জামান লাবু
১৪ মে ২০২২, ১৬:২২আপডেট : ১৪ মে ২০২২, ১৭:১৯

বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত আলোচিত পি কে হালদার গ্রেফতার হয়েছেন কলকাতায়। শনিবার (১৪ মে) দুপুরে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

শুক্রবার (১৩ মে) ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট শাখা পশ্চিমবঙ্গের দমদম, ২৪ পরগনাসহ ১০টি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। এ সময় সন্দেহভাজন হিসেবে তিন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পি কে হালদার বলে নিশ্চিত করেছে ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট সূত্র। তবে অভিযানিক দল তখন জানিয়েছিল, পি কে হালদার পশ্চিমবঙ্গে শিবশঙ্কর হালদার পরিচয়ে পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন। 

ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস ও ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্টের (ইডি) অভিযানের খবর দিয়ে তিন জনের আটকের তথ্য দিয়েছে। যেখানে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রিতীশ কুমার হালদার ও প্রাণেশ কুমার হালদারের কথা বলা হয়েছে। প্রীতিশ হালদার পি কে হালদারের আপন ছোট ভাই।

ইডি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার পশ্চিমবঙ্গে নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার নামে পরিচয় দিয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তিনি জালিয়াতি করে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান কার্ড ও আঁধার কার্ড নিয়েছিলেন। তার সহযোগীরাও সেখানে জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালে কানাডায় পালিয়ে গেলেও পি কে হালদার ভারতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলে তারা ধারণা করছেন। স্থায়ীভাবে আত্মগোপন করে থাকার জন্যই তিনি জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। যাতে কেউ তার কোনও খোঁজ না পায়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত এগার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের পর কানাডায় পালিয়ে যান প্রশান্ত কুমার হালদার। দেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে ১১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে।

দুদকে পিকে হালদার সম্পর্কিত মামলাগুলোর অনুসন্ধান করছেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা অভিযানের বিষয়টি জানতেন। ভারতের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে তাদের তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে। কিন্তু কাদের গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের এখনো জানানো হয়নি।

ভারতে ৩০০ কোটি টাকা পাচার

ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট-ইডি’র বরাত দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার তার সহযোগীদের মাধ্যমে ভারতে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা পাচার করেছে। পুরো টাকাই হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণার অশোকনগরে সম্পত্তি কেনার পাশাপাশি আশেপাশের বিভিন্ন এলাকাসহ কোলকাতার অভিজাত এলাকাতেও বিনিয়োগ করা হয়েছে। অশোকনগরে পি কে হালদারের অন্যতম প্রধান সহযোগী সুকুমার মৃধার নামে চার বিঘে জমির ওপর একটি প্রাসাদোপম বাড়িরও সন্ধান পাওয়া গেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে দুদক গ্রেফতারের পর থেকে তারা এখনো বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পি কে হালদার ও তার পরিবারের সদস্যদের কর আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন সুকুমার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মালিক সুকুমার মৃধা। সেই সূত্র ধরেই সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার মাধ্যমে ভারতে অর্থ পাচার করেছেন তিনি। ভারতে সুকুমার মৃধা মাছ ব্যবসায়ী ও একাধিক মাছের ঘেরের মালিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। সুকুমার মৃধার মেয়ে জামাই সঞ্জীব ভারতের সম্পত্তি দেখভাল করতেন। ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট-ইডি’র কর্মকর্তারা শুক্রবার সঞ্জীবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

ইডির সূত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা ভারতে একাধিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন। যার পুরো অর্থই বাংলাদেশ থেকে পাচার করে নিয়ে যান। এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করেছে ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট।

বাংলাদেশের দুদকের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে পি কে হালদার এবং তার ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার কানাডার পাশাপাশি ভারতেও হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। সেই প্রতিষ্ঠানের সূত্র ধরেই পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা ভারতে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে বিপুল সম্পত্তি গড়ে তোলেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরে স্বপন মিত্র নামে এক ব্যক্তির বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছেন ইডির কর্মকর্তারা। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্বপন মিত্রও বাংলাদেশি নাগরিক স্বপন কুমার মিস্ত্রি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট- বিআইএফআইইউ’র অনুসন্ধানে পি কে হালদারের অর্থ পাচারের সঙ্গে পিরোজপুরের বাসিন্দা স্বপন কুমার মিস্ত্রি ও তার স্ত্রী পূর্ণীমা রানী হালদার, স্বপনের ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রী ও উত্তমের স্ত্রী অতসী মৃধার সম্পৃক্ততা পেয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পি কে হালদারের অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ঘনিষ্ঠ হিসেবে অন্তত ৭০ জনের একটি তালিকা করেছিল বিএফআইইউ ও দুদক। এর মধ্যে অনেকেই ভারতে গিয়ে নামের আংশিক পরিবর্তন করে জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিআইএফআইইউ’র একটি সূত্র বলছে, অর্থ পাচারের মাধ্যমে পি কে হালদার ভারতে যে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তা কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে এখন তারা চিন্তা-ভাবনা করছেন। ভারতে তার আরও অনেক সম্পত্তি রয়েছে বলে তাদের ধারণা।

/এনএল/এমএস/
সম্পর্কিত
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সর্বশেষ খবর
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা