‘আম্মা, আমি সৌদি আরব আসছি, এখন দাম্মাম বিমানবন্দরে। চিন্তা কইরো না। কাজের জায়গায় গিয়ে বিস্তারিত জানাবো।’ বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের দাম্মাম বিমানবন্দরে গিয়ে মাকে ফোন করে কথাগুলো বলেছিলেন মো. মামুন মিয়া। ২০ দিন আগে এটাই ছিল সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর পরিবারের সঙ্গে মামুনের শেষ কথা। এরপর থেকে আর খোঁজ নেই তার। ধারদেনা করে ৫ লাখ টাকা খরচ করে পরিবারের হাল ধরতে সৌদি আরবে যান তিনি। কিন্তু ২০ দিনেও খোঁজ মেলেনি তার।
জানা গেছে, ২৭ বছর বয়সী মামুন মিয়ার বাড়ি কুমিল্লায়। ৯ জনের সংসার। বাবা করেন কৃষি কাজ। মামুন কাজ করতেন দরজির দোকানে। সংসার চলতো টেনেটুনে। ভাগ্য বদলাতে ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন বাবা। ধার করে ৫ লাখ টাকা যোগাড় করে পাঠান সৌদি আরবে।
মো. মামুন মিয়া (পাসপোর্ট নাম্বার EF0415950) ২৬ মে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে (G9 165) সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রাও করে। আরব আমিরাতের শারজায় ট্রানজিট হয়ে তার ফ্লাইটটি দাম্মামে পৌঁছায়।
দাম্মাম বিমানবন্দরে নামার পর মামুন বাড়িতে ফোন (ইন্টারনেটের মাধ্যমে) করে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। মামুন তখন জানান, তিনি ঠিকমতোই পৌঁছেছেন। এরপর থেকেই খোঁজ নেই। তার ইমো ও ম্যাসেঞ্জার অ্যাকাউন্টও সক্রিয় নেই।
মামুনের বাবা মো. আমির হোসেন জানান, সৌদি আরবে ইয়ামামা সাপ্লাই কোম্পানিতে ক্লিনারের কাজের কথা বলে ভিসা দিয়েছিল বনানীর মুসা ইন্টারন্যাশনাল। তবে গ্রামের বাড়ির ইমরান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করি। ইমরানও এখন আর ফোন ধরছে না। সে কোনও দুর্ঘটনায় পড়লো কিনা সেটাও জানতে পারছি না।
ছেলের চিন্তায় মা জোহরা বেগমের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। দিশেহারা দিন পার করছেন তিনি। আমির হোসেন বললেন, এখন কোথায় যাবো দিশা পাচ্ছি না। ছেলেকে পাঠালাম সংসারের ভাগ্য বদলাতে, এখন জীবন অন্ধকার হয়ে গেলো।
মামুনের খালাতো ভাই মোহাম্মদ সাদেক বলেন, আমাদের পক্ষে তো সৌদি আরবে খোঁজ নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা মামুনের সন্ধানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সচিব, সৌদি আরবের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, জনশক্তি কমর্সংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন ই-মেইল করেছি। এখনও সাড়া পাইনি।
এদিকে, সৌদি আরব দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, মামুনের বিষয়ে তারাও খোঁজ করছে। সৌদি ইমিগ্রেশন ডাটাবেজ অনুযায়ী মামুন সৌদি আরবের ভেতরেই আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক নেই।
তবে রিক্রুটিং এজেন্সির দাম্মাম প্রতিনিধিরাও জানিয়েছেন, বিমানবন্দর থেকে কোম্পানির অন্য কর্মীরা কাজে যোগদান করেছেন। কিন্তু মামুন যোগদান করেননি। যে কোম্পানিতে মামুনের কাজ করার কথা ছিল সেখানে ১৫ হাজার বাংলাদেশি কাজ করেন। দূতাবাস থেকে ওই কোম্পানিকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। এতে করে পুলিশ তাকে খুঁজে পেলে আটক করে থানায় নিয়ে আসবে।