জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটা হ্যাক এবং ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইউটিউবের সহায়তায় তৈরি করতো মোবাইল অ্যাপস। সেই অ্যাপস দিয়ে নির্বাচন কমিশনের সার্ভার হ্যাক করে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটা সংগ্রহ করতো। এসব ডাটা জনগণের কাছে সহজলভ্য করতে নিজস্ব অ্যাপসটির মার্কেটিংও করে আসছিল তারা। এরই মধ্যে ডাটা হ্যাক করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। গত ৮ জুলাই গাজীপুরের কোনাবাড়ি বাঘিয়া দক্ষিণ পাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পান র্যাবের আভিযানিক কর্মকর্তারা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন– এস এম শাওন (২৯), খালেদ আহমেদ শান্ত (১৯) ও আল আমিন (২৩)।
র্যাব বলছে, চক্রটির সদস্য সংখ্যা চার। এর মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এস এম শাওন ভুয়া এনআইডি তৈরির মূলহোতা। সে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও যাচাই, স্মার্ট কার্ডের তথ্য যাচাই, নতুন তথ্য সংযোজন ও বিয়োজনকারী। সে অ্যাপগুলোর মার্কেটিংয়ের কাজ করতো এবং এর প্রধান দায়িত্বে ছিল। অপর আসামি খালেদ আহমেদ শান্ত সার্ভার হ্যাক করার অ্যাপটি তৈরি এবং অ্যাপগুলোর সহযোগী অ্যাপস ডেভেলপার হিসাবে কাজ করতো। আসামি আল আমিনের কাজ ছিল জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, তথ্য যাচাই করে এমন লোক সংগ্রহ করা। এছাড়া সে চক্রের অন্যতম সহযোগী ও পরামর্শদাতা। এই তিন জনের মধ্যে দুই জন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে চাকরি করেছে। এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব জানায়, আসামিরা অবৈধভাবে জাতীয় এনআইডি সার্ভারের এপিআই (এপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেইস) ব্যবহার করে ভুয়া এনআইডি তৈরি স্মার্ট কার্ডের তথ্য যাচাই, জাতীয় পরিচয়পত্রে নতুন তথ্য সংযোজন এবং বিয়োজন করে আসছিল। এছাড়াও তারা একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে শুধু এনআইডি নম্বর ও জম্মতারিখ দিয়ে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় সংক্রান্ত সব তথ্য অবৈধভাবে বের করে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট তৈরি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করে। আসামিদের ব্যবহৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটির সোর্সকোড চেক করে দেখা যায়, আসামিরা বিভিন্ন সরকারি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্ভিস ওয়েবসাইট থেকে অবৈধভাবে এপিআই সংগ্রহ করে নিজেদের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা আদায় করে আসছিল।
র্যাব-১-এ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইডিইএ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের সহকারী প্রোগ্রামার রুবেল চন্দ্র মজুমদারের (২৮) দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, শুধু চুক্তিবদ্ধ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার ব্যবহারের অনুমতি নেই। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহীতাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করতে পারে। সম্প্রতি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দুটি অ্যাপস সংশ্লিষ্টদের নজরে আসে, যার মধ্যে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভারে রক্ষিত তথ্য-উপাত্ত উম্মুক্তভাবে যাচাই করা হচ্ছিল। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের গুগল প্লে-স্টোরে থাকা দুটি অ্যাপস ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়। তারা এনআইডিধারী সব নাগরিকের তথ্য-উপাত্ত যাচাই এবং সার্ভারে রক্ষিত তথ্য বেআইনিভাবে সরবরাহ করছিল। যার ফলে জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারে রক্ষিত নাগরিকদের তথ্য হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে।
র্যাব-১-এর সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘র্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগতে অপরাধীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ভুয়া এনআইডি তৈরি ও অনলাইনে সাইবার ক্রাইম প্রতারণা সম্পর্কে র্যাব তথ্য পায়। নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত বাকিদেরও আইনের আওতায় আনতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও প্রকার অনুমোদন ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে বেআইনীভাবে প্রবেশ করে জাল এনআইডি তৈরি বা তৈরিতে সহায়তা করা এমনকি সোর্স কোড পরিবর্তন করে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য যেকোনও অননুমোদিত ব্যক্তি বা সংস্থা দ্বারা সংগ্রহ ও ব্যবহার করা প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ব্যাপারে আমাদের সাইবার নজরদারি চলমান থাকবে।’