X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিবিএস কি পিছিয়ে আছে?

সাদ্দিফ অভি
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:৩২

দেশের নানা খাতের নানা বিষয়ভিত্তিক পরিসংখ্যান তৈরির কাজ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তবে সংস্থাটির সাম্প্রতিক অনেক প্রতিবেদনই পুরনো তথ্যের ওপর নির্ভর। কৃষি, গৃহস্থালি, শ্রম, টুরিজম, ব্যবসা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবেশ, জলবায়ু, হাইজিন, তামাক, অভিবাসন, আবাসন, দুর্যোগসহ নানা খাতের হালনাগাদ তথ্য ও জরিপে পিছিয়ে আছে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি। আবার কিছু তথ্য নিয়ে আছে বিতর্কও। খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিবিএস’র তথ্য হালনাগাদ না হওয়ার সমালোচনা করেছেন বেশ কয়েকবার।

পুরনো তথ্যে নতুন প্রতিবেদন

বিবিএস’র বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই সাম্প্রতিক তথ্য ব্যবহার করা হয়নি। আবার অনেক প্রতিবেদন দুই থেকে চার বছর আগে করা হলেও তার কোনও হালনাগাদ তথ্য কিংবা জরিপ নেই। গত জুলাই মাসে ‘বাংলাদেশ সিলেক্টেড স্ট্যাটিকস’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস। সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরের বিদ্যুৎ খাতের তথ্য, কৃষি-পোলট্রি-মৎস্য খাতের তথ্য, ২০২২ সালের জুন মাসের মোবাইল ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহার করা হলেও শ্রম ও কর্মসংস্থানের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের, দারিদ্র্য ২০১৮-১৯, আমদানি ও রফতানির তথ্য নেওয়া হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে। অথচ তারপরও আরেকটি অর্থবছর পার হয়েছে। আবার বৈদেশিক কর্মসংস্থানের তথ্য দেওয়া আছে ২০২১ সাল পর্যন্ত, যেখানে বিএমইটি প্রতি মাসে তথ্য হালনাগাদ করে তাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়। এই প্রতিবেদনে শুধু অর্থনৈতিক সূচকের তথ্যে সাম্প্রতিক অর্থবছরের তথ্য যুক্ত করা হয়েছে।  

সর্বশেষ পরিসংখ্যান দিবসের অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘ফ্রেশ ডাটা’ আসল শক্তি।  গতকালের পুরনো ডাটা আজ কেউ নেবে না। তাই তথ্য বা ডাটা যেন সঠিক সময়মতো পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, ‘একটা ডাটার জন্য তিন বছর, চার বছর অপেক্ষা করতে হবে, পাঁচ বছর আগের ডাটা দিয়ে চলতে হবে, এটা মানা যায় না।’ এসময় বিবিএস অনেক গুরুত্বপূর্ণ জরিপ কিংবা তথ্যে পিছিয়ে আছেও বলে জানান তিনি।  

কৃষিপণ্যের জরিপ প্রকাশ হয়েছিল ২০১৯ সালে

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই উৎপাদন ব্যাপক হারে বেড়েছে। তবে একজন কৃষক তার সব পণ্য বাজারে বিক্রির জন্য পাঠায় না। দেশের বাজারে সরবরাহকৃত খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য কৃষিপণ্যের সরবরাহ এবং মূল্য প্রধানত কৃষি খানা কর্তৃক বাজারে বিক্রি হওয়া কৃষি পণ্যগুলোর প্রকৃত পরিমাণের (স্থূল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত) ওপর নির্ভর করে। গ্রামীণ বাংলাদেশের কৃষি খানার আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে স্থূল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্তের কল্যাণকর প্রভাব আছে। তাছাড়া বাণিজ্য খাতের স্থূল মূল্য সংযোজনের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। স্থূল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্তের পরিমাণ যত বেশি হবে, বাণিজ্য খাতে স্থূল মূল্য সংযোজনের পরিমাণও তত বেশি হবে। স্থূল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত সম্পর্কিত সাম্প্রতিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিসংখ্যান-কৃষি বিপণন, রফতানি ও আমদানি সংশ্লিষ্ট তথ্যভিত্তিক রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও ২০১৯ সালের আগে তা নিরূপণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আর ২০১৯ সালের পর আর হালনাগাদ করা হয়নি।

‘বিতরণ ব্যবসা জরিপ-২০১৯’ প্রকাশ হয় ২০২১ সালে  

দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিতরণ ব্যবসা। বাণিজ্য খাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেমন- স্থূল মূল্য সংযোজন, কর্মসংস্থানের আকার,পরিচালন উদ্বৃত্ত, ব্যয়যোগ্য আয়, সঞ্চয় সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য তথ্য বের করার লক্ষ্যে এই জরিপ পরিচালনা করে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান জরিপ হয়েছিল ২০১৬-১৭ সালে

বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে হয়েছিল সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। এই সার্ভের মাধ্যমে দেশের বেকার সংখ্যা কত, কর্মসংস্থানের কী অবস্থা ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এই সার্ভে পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি অজ্ঞাত কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্তমানে ৫ বছর আগের পুরনো তথ্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া দেশে দারিদ্র্যের হার কত, সেই তথ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর আর জানা যায়নি।

এর বাইরে সেলফ এমপ্লয়েড প্রফেশনালস সার্ভে আর রিয়েল স্টেট অ্যাক্টিভিটি সার্ভে হয়েছিল ২০১১-১২ সালে। এর আর কোনও হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ জরিপ, যেটি গৃহস্থালি আয় ও ব্যয়ের ওপর করা হয়ে থাকে, সেটিও ২০১৬ সালের পর হালনাগাদ করা হয়নি।

গত মে মাসে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশ দারিদ্র্য মানচিত্র-২০১৬। এটির প্রকাশনা কাল ২০২০ সালের ডিসেম্বর। ২০১৯ সালে এটি তৈরির কাজ শুরু হয়। সেখানে ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ এবং ২০১১ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনাকে উৎস হিসেবে ধরে পুরনো উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া একইদিন প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশ অপুষ্টি মানচিত্র-২০১৯।

বিবিএস’র তথ্য নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, কিছু প্রতিবেদন তারা হয়তো দেরিতে প্রকাশ করে। এমনিতে তথ্যের মান নিশ্চিতে যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হয়, সেই প্রেক্ষাপটে একদম খারাপ কিছু বলার সুযোগ নেই। অফিসিয়াল পরিসংখ্যানের জন্য তারা কিন্তু একমাত্র প্রতিষ্ঠান। আমরা সব জায়গায় বিবিএস’র তথ্য ব্যবহার করি। তবে কোয়ালিটির কথা চিন্তা করলে কিছু সার্ভে পাওয়া যেতে পারে যে মান খারাপ কিংবা তথ্য সংগ্রহ কম হয়েছে। তবে সর্বোপরি খারাপ বলা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, কিছু পরিসংখ্যান আছে যেগুলো আমাদের এখনই দরকার নেই। যেমন– জনসংখ্যা আমাদের ১০ বছর পর পর হিসাব করা হয়। ১০ বছরের হিসাব কিন্তু বাকি ১০ বহর চালিয়ে যাই। কিন্তু যদি কোন শিল্পের বাস্তবতা দেখতে চাওয়া হয় সেটার জন্য তথ্য ছয় মাসের দরকার। সম্প্রতি জনশুমারি করেছে, এক মাসের মধ্যে প্রাইমারি রিপোর্ট দিতে পেরেছে, হয়তো ডিজিটালি করেছে বলে তাড়াতাড়ি হয়েছে। কিন্তু ম্যানুয়ালি অনেক কাজ করতে হয়তো একটু সময় লাগে, ওরা হয়তো সচরাচর সময় থেকে একটু বেশি নেয়। কিন্তু আমরা যারা গবেষণার কাজ করি সেই ডাটা ব্যবহার করি, এগুলো ব্যবহার করা যায়। অনেক পরিসংখ্যান আছে যেটা এক বছর আগে হলেও আমার কাজে লাগে। তবু ভালো পলিসির জন্য আরও আপডেটেড দরকার, যেটা বিবিএস সম্ভবত বুঝতে পেরেছে এবং এখন সেটি করতে চেষ্টা করছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তারপরও কিছু জনবল ঘাটতি আছে। কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় সক্ষমতা আরও বাড়ানো দরকার। এ বছর জনশুমারি ও গৃহগণনার পাশাপাশি দারিদ্র্যের অবস্থা জানতে খানা আয়-ব্যয় জরিপ এবং শ্রমশক্তি জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে ২০২৩ সালের মধ্যে অনেক হালনাগাদ তথ্য প্রস্তুত করা যাবে।  

বিবিএস’র মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত কাজ করি। একটি সেন্সাস প্রতিবছর কিংবা প্রতি মাসে করা সম্ভব না। অন্যদিকে একটি সার্ভে করে রিপোর্ট তৈরি করতে যে সময় যায় তারপর একই জিনিস আবার করতে মাঝে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। আমরা সার্ভে হোক কিংবা সেন্সাস হোক, নিয়মিতই করি।

শ্রম জরিপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের শ্রম জরিপ চলছে। এটি হয়তো দ্রুত রিপোর্ট আকারে প্রকাশ পাবে।

/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২
গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী