X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শুনি মরিয়মের মা রহিমা বেগম কী বলেন

উদিসা ইসলাম
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৫৯আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:১৮

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রহিমা বেগমকে নেওয়া হয় রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। বহির্বিভাগের চিকিৎসক তাকে ভর্তির পরামর্শ দিলে ভর্তিও করান মেয়ে মরিয়ম মান্নান। কিন্তু রহিমা বেগম হাসপাতালে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন। তার ভয়, এখানে এসেও তারা তাকে মেরে ফেলবে। প্রশ্ন হলো, তারা কারা?

হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার আগে রহিমা বেগমের সামনে বসে এই প্রতিবেদকের কথা হয় তার মেয়ে মরিয়মের সঙ্গে। রহিমা বেগম আগের মতো আর চুপচাপ নন। মূল ঘটনার বাইরে চেনা মানুষের সঙ্গে নানা গল্প-কথা বলছেন, কিন্তু অসঙ্গতি আছে। এমন অনেক গল্প তিনি করছেন, যা হয়তো নিকট অতীতের ঘটনা না। অনেক কথা বলার সময় সেসব বলছেন। মেয়ে মরিয়ম চেষ্টা করছেন মাকে একটা স্থিরতার মধ্যে আনতে। মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘আমরা মায়ের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, তার সব রাগ সন্তানদের ওপর। তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে গেছেন। মাকে খোঁজা নিয়ে আমাদের যদি কোনও অন্যায় দেখে থাকেন, তবে ক্ষমা করবেন।’

গল্পের ফাঁকে জিজ্ঞেস করি, তিনি কেন ফিরে এলেন না? তখনই সন্তানদের প্রতি তার রাগ বেরিয়ে আসে।

রহিমা বেগম কেন বাসার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি

রহিমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে খুঁজছে সেটা আমি জানতাম না। ওরা সবাই ব্যস্ত। আমাকে খুঁজবে কে?’ মেয়ে মরিয়ম বলেন, ‘‘মা বলেছে, তিনি যে বাসায় ছিলেন সেখানে টিভি ছিল না। পরে যেদিন অজ্ঞাত লাশকে আমি ‘মা’ বলে শনাক্ত করি, সেদিন কুদ্দুসের আত্মীয় জয়নালসহ অনেকে মাকে বিষয়টি জানায়। তারা তাকে বুঝায়, আমরা যেহেতু ওই লাশকে মা বলে মেনে নিয়েছি, তাহলে এখন আর তিনি ফিরতে পারবেন না। সে কারণে তিনি নতুন করে জন্মনিবন্ধন বানাতে যান। তবে মায়ের কোনও কথা স্টেটমেন্ট আকারে নিচ্ছি না এখনও। তার মানসিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হোক। তারপরে আরও বিষয় জানা যাবে। আমরা যার যার জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়াটা—তার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে এটুকু বুঝতে পারছি।’’

আমারে খোঁজার জন্য পোলা-মাইয়ারা দোষী হবে কেন?

সন্তানদের ছোটবেলার নানা গল্প বলতে পছন্দ করেন রহিমা বেগম। হাসপাতালের বেডে বসে স্মৃতি হাতড়ে যা বলছেন—কখনও চোখে আনন্দ, কখনও জল গড়িয়ে পড়ছিল। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মেয়ের (মরিয়ম) কথোপকথন শোনেন, ঘাড় নাড়েন, কোনোটায় দ্বিমত করেন। তিনি একফাঁকে বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে খুঁজবে সেটাই স্বাভাবিক। তারা আমাকে পায়নি বলে থানায় গেছে। এখন আমাকে পাওয়া গেছে বলে তারা কেন দোষী হবে? চলে যাওয়ার পরে কি আমি কাউকে আঘাত করেছি? আমি কারোর কোনও ক্ষতি করেছি? তাহলে আমাকে পাওয়া গেছে বলে আমার সন্তানদের কেন দোষী করা হচ্ছে?’

জমি ও সম্পত্তি কাল হলো

১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয় রহিমা বেগমের। বয়স্ক এক লোকের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরপরই কয়েক বছরে ৭ সন্তানের জন্ম দেন। স্বামীর আগের পক্ষের ৫ সন্তান ছিল। মেয়ে মরিয়মের বয়স যখন ১৪, তখন রহিমার স্বামী মারা যান। এরপর অনেক কষ্টে ৫ মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি। মেয়েরা সবাই আজ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ভালো চাকরি করছেন। ছেলেমেয়ে মানুষ হয়ে গেলে রহিমা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর আগের স্বামীর সন্তানরা যাদের কাছে জমি বিক্রি করেছে তাদের সঙ্গে জমির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে জড়িয়ে পড়েন বিরোধে। বিরোধের পরপরই নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকায় ভাড়া বাসায় ওঠেন। যে বাড়ি থেকে রহিমা ‘নিখোঁজ’ হয়েছিলেন, সেখানে তিনি সবসময় থাকেন না, মাঝে মধ্যে আসেন, এ তথ্য জানান মরিয়ম।

মায়ের সঙ্গে মরিয়ম মান্নান

মরিয়ম বলেন, আমার মা আমাকে বলেছেন, তার মুখই তার দলিল। একটাও ভুল কথা বের হবে না। তার রাগ আমাদের ভাইবোনদের ওপর। যাদের তিনি বড় করেছেন শত বাধার মুখে। তার রাগ কেন, আমরা কেউ তার ওপরে একাধিকবার হামলা হলেও ব্যবস্থা নিইনি। বারবারই বলছেন, ‘আমার জন্য কারোর কোনও সময় ছিল না। বাড়িতে আইসা হামলা করে, আমার মাথা ফাটায়ে দেয় এই জমির জন্য, কেউ আগায়ে আসে নাই।’

মরিয়ম বলেন, ‘আমার মায়ের স্মৃতিশক্তি ঠিক আছে। কিন্তু গত প্রায় এক মাস তিনি যেহেতু অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছেন, সেহেতু মানসিক প্রশান্তির জন্য একটু কাউন্সেলিং দরকার বলেই আমরা হাসপাতালে এসেছিলাম।’

তবে কর্তব্যরত নার্স বলেন, ‘উনি ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু এখানে থাকতে চাইছেন না। উনি ডা. আহসানের অধীনে ভর্তি হলেও চিকিৎসক দেখতে আসার আগেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে নেন।’ কেন থাকতে চান না প্রশ্নে রহিমা বলেন, ‘আমি ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে যাবো বলে এসেছি। এখানে আমি থাকবো না।’

ছবি: উদিসা ইসলাম

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!