X
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে এয়ারলাইনে চাকরির নামে প্রতারণা

চৌধুরী আকবর হোসেন
১২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:১৯আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৩৩

রাজধানীর উত্তরায় আলিশান অফিস। সেখানে কাজ করেন বেশ কয়েকজন কর্মী। বেসরকারি অফিস হলেও এর কর্তা মো. জিয়াউর রহমান নিজেকে পরিচয় দেন কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে, অফিসে আসেন কোট-টাই পরে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সাঁটিয়ে দেন চাকরির বিজ্ঞপ্তি। আর সেখান থেকে ঠিকানা পেয়ে তার অফিসে আসেন অনেকেই। চাকরি প্রত্যাশীদের তিনি আশ্বাসও দেন, বিমানবন্দরে কাজ করার সুবাদে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন তিনি। পরে লাখ লাখ টাকা খুইয়ে চাকরি প্রত্যাশীরা বুঝতে পারেন তারা প্রতারকের পাল্লায় পড়েছেন।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতারক জিয়াউর রহমান ইতোমধ্যে আটক হয়েছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের হাতে। আটক হওয়ার পর জানা গেছে, সে প্রকৃতপক্ষে কাস্টমসের কর্মকর্তাই নয়, কাজ করে বিমানবন্দরে লোডার হিসেবে।

বিমানবন্দরে যেকোনও ধরনের চাকরি করার ইচ্ছা ছিল সিরাজগঞ্জের তরুণ মো. শরিফুল ইসলামের (২৬)। তিনি ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। রাস্তার পাশে দেয়ালে চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে টেলিফোন করলে তাদের উত্তরায় অফিসে যেতে বলা হয়। সেই অফিসের ডেকোরেশন, সার্বিক পরিবেশ আর ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানের চলাচল দেখে বিশ্বাস করেন মো. শরিফুল ইসলাম। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে শরিফুলকে লোডার পদে চাকরি পাইয়ে দেবেন জিয়াউর। তবে এজন্য অগ্রিম কোনও টাকা নেবেন না, নিয়োগপত্র পেলে নগদ ৩ লাখ টাকা দিতে হবে জিয়াউরকে। 

প্রতারণার শিকার মো. শরিফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা দুই জন গিয়েছিলাম তার (জিয়াউর) অফিসে। আমাদের বললো কাস্টমসের কর্মকর্তা সে (জিয়াউর), তার সঙ্গে সব এয়ারলাইনের মালিকদের পরিচয় আছে। সে বলে দিলে যেকোনও এয়ারলাইনে চাকরি হয়ে যাবে। সে কোনও অগ্রিম টাকাও দাবি করেনি, নিয়োগপত্র দিলে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। এজন্য তাকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। জিয়াউর আমাদের বলেছিল, ইউএস-বাংলায় লোডার হিসেবে চাকরি, মাসে বেতন ২৫ হাজার টাকা, সপ্তাহে ২ দিন ছুটি। ইউএস-বাংলা আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে, বাসা থেকে গাড়ি দিয়ে নিয়ে যাবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটে যেকোনও জায়গায় ঘুরতে পারবো। আমাদের নিয়োগপত্র দেওয়ার পর টাকা দেই। 

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি তাকে। নিয়োগপত্র দিলেও কবে জয়েন করবো, সেই কথা আর বলে না জিয়াউর। আজ না কাল বলে আমাদের ২ মাস ধরে ঘোরাতে থাকে। কিছু দিন আগে তার অফিসে গিয়ে দেখি তালা। পরে কাস্টমসে এসে খোঁজ নিলে জানতে পারি জিয়াউর রহমান নামে কোনও কর্মকর্তা নেই।

শরিফুল ইসলামের মতো অনেকেই প্রতারিত হয়ে বিমানবন্দরে এলাকায় কাস্টমস হাউজে এসে খোঁজ নিতে থাকে জিয়াউর রহমানের। তার ছবি দেখানোর পর অনেকেই জানায়, সে কাস্টমস কর্মকর্তা নয়, বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্রেইড ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশনে (বাফা) কাজ করে সে।

রবিবার জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার মো. রাসেল আহমেদ (২৬), আরজু আহমেদ (৩৪), মোস্তাক আহমেদ (৫৭) ও মো. শরিফুল ইসলাম (২৬) কাস্টমস এলাকায় তাকে খুঁজতে আসে। পরবর্তী সময়ে তাকে শনাক্ত করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে অভিযোগ দেয়। রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে মো. জিয়াউর রহমানকে আটক করে আর্মড পুলিশ।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, জিয়াউর রহমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্রেইড ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) লোডার হিসেবে কাজ করে। চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, প্রতারক জিয়াউর রহমান বিমানবন্দরের একজন কাস্টমস অফিসার পরিচয় দেন। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে বিভিন্ন পথে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন।

ব্যাংক থেকে কোটি টাকার লোনের নামেও প্রতারণা

শুধু এয়ারলাইনে চাকরি নয়, কারও কারও কাছ থেকে ব্যাংকের লোন পাইয়ে দেওয়ার নাম করেও টাকা নিয়েছে প্রতারক জিয়াউর রহমান। ৫৭ বছর বয়সী মোস্তাক আহমেদের বাড়ি রাজশাহী। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর নিজের গ্রামে মাছের চাষের পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। রাস্তায় ব্যাংক লোন পেতে সহায়তার বিজ্ঞাপন দেখে তিনিও যান প্রতারক জিয়াউর রহমানের অফিসে। সেখানে জিয়াউরের বন্ধু হাসানকে বাংলাদেশে ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সেই হাসান চাইলেই যেকোনও ব্যাংক থেকে লোনের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। ২০ কোটি টাকা লোনের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন অনায়াসে। এজন্য খরচ করতে হবে ১০ লাখ টাকা। তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান মোস্তাক আহমেদ।

মোস্তাক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি তাদের অফিস দেখে ভেবেছি আসলেই তারা হয়তো বড় অফিসার। আর তারা আমার কাছে অগ্রিম কোনও টাকাও চায়নি। এ কারণে বিশ্বাসও করেছি। লোন পাওয়ার পর ১০ লাখ টাকা তারা কমিশন নেবে বলেছিল, আমি রাজি হয়েছিলাম। শুধু লোন ছাড়াতে গেলে বিভিন্ন জায়গায় কিছু টাকা দেওয়া লাগে, এ কারণে তারা আমার কাছে খরচ বাবদ ৩ লাখ টাকা চায়। সেটা আবার কমিশন থেকে সমন্বয় করবে বলেছিল। টাকা দেওয়ার কিছু দিন পর দেখি তাদের অফিসে তালা, ফোনও বন্ধ।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ভুক্তভোগীরা আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন, জিয়াউরের সহযোগী হাসানকেও আটকে অভিযান চলমান আছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
অনলাইনে মোটরসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন ছিনতাই করতো তারা
১৯ দিন পর জামিনে কারামুক্ত মডেল মেঘনা আলম
সর্বশেষ খবর
কাঁচা আম দিয়ে ছোট মাছের তরকারি রান্নার রেসিপি জেনে নিন
কাঁচা আম দিয়ে ছোট মাছের তরকারি রান্নার রেসিপি জেনে নিন
নতুন কোচের নাম জানাতে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে ব্রাজিল
নতুন কোচের নাম জানাতে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে ব্রাজিল
দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন: ডা. জাহিদ
দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন: ডা. জাহিদ
ফেনীতে আওয়ামী লীগের ২ নেতা কারাগারে
ফেনীতে আওয়ামী লীগের ২ নেতা কারাগারে
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক শেষ, কিস্তি ছাড়ে কী সিদ্ধান্ত হলো?
আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক শেষ, কিস্তি ছাড়ে কী সিদ্ধান্ত হলো?
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস