X
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩
১৩ চৈত্র ১৪২৯
৭ বছর পর হত্যারহস্য উন্মোচনের দাবি পিবিআই’র

জামাতাকে ফাঁসাতে মেয়েকে খুন!

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:০০আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৪২

টাঙ্গাইলের কালিহাতি গড়িয়ার বাসিন্দা পারুল আক্তার (১৫) ও নাছির উদ্দীন সরকার (১৯) একে অপরকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেন। পারুলের পরিবার প্রেমের বিয়ে মানতে পারেনি। তাই মেয়েকে নিজে হত্যা করে জামাতাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন বাবা আব্দুল কুদ্দুস খাঁ। সাত বছর তদন্ত করেও থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি এই ঘটনার কোনও কিনারা করতে না পারলেও পিবিআই এই তথ্য জানিয়েছে। 

রবিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার। আদালতে কুদ্দুসের দেওয়া জবানবন্দি তুলে ধরে তিনি বলেন, মেয়েকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে নিজের গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে ও গলাটিপে হত্যা করেন আব্দুল কুদ্দুস। পরে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে টাঙ্গাইলে চলে যান। মেয়ের কারণে অপমানবোধ করে রাগ থেকে তিনি এই কাজ করেন।

বনজ কুমার বলেন, তদন্তে নেমে একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে এগোতে থাকে পিবিআই। প্রথমে গফরগাঁওয়ে কর্মস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয় পারুলের স্বামী নাছিরকে। এরপর ডাকা হয় পারুলের পরিবারের ১৮ সদস্যকে। নাছিরসহ পারুলের পরিবারের সবাই অসংলগ্ন তথ্য দিতে থাকেন। দুই পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পারুলের বাবা তার বন্ধু মোকা মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ে পারুলকে নিজ হাতে হত্যার কথা স্বীকার করেন পিবিআইয়ের কাছে। এরপর আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তারা

নিজ হাতে মেয়েকে খুন করার পরেও নানা পর্যায়ে আইনি লড়াই কেন করলেন পারুলের বাবা– এমন প্রশ্নের জবাবে পিবিআই প্রধান বলেন, এটি একটি অনার কিলিংয়ের ঘটনা। মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা কুদ্দুস ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় ও সম্মানহানির শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। তাই শাস্তি হিসেবে মেয়েকে খুন করেছেন। কিন্তু এই সম্মানহানির পেছনে তার মেয়ের সঙ্গে জামাতা নাছিরেরও সমান হাত আছে। তাই মেয়ের মতো জামাতা নাছিরকেও শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন কুদ্দুস। তিনি (কুদ্দুস) চেয়েছেন এই খুনের মামলায় নাছিরের যেন ফাঁসি হয়। তাহলেই তার সম্মানহানির প্রতিশোধ সম্পূর্ণ হবে। এ জন্যই নিজে মেয়েকে খুন করেও বিভিন্ন পর্যায়ে আইনি লড়াই করেছেন তিনি।

এখন তাহলে পারুলের স্বামী নাছিরের কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করি আইনি জটিলতা কাটিয়ে নাসির দ্রুতই মুক্তি পাবেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। তিনি বলেন, জবানবন্দিতে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করায় কুদ্দুস ও তার বন্ধু মোকাদ্দেস ওরফে মোকা মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আদালতে তোলা হবে।

ঘটনা প্রবাহ

বিয়ের পরে পারুল ও নাসির সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে ভাড়া বাড়িতে সংসার পাতেন। সাংসারিক জীবনে শুরু হয় টানাপোড়েন। একপর্যায়ে পারুল তার বাবা আব্দুল কুদ্দুস খাঁকে মুঠোফোনে বিস্তারিত জানিয়ে সাহায্য চান। কুদ্দুস মেয়েকে সুন্দর ভবিষ্যৎ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে স্বামী নাছিরকে ছেড়ে যেতে বলেন। পরে পারুল ২০১৫ সালে ১৮ জুলাই স্বামীকে না জানিয়ে ফিরে আসেন বাবার কাছে।

পরদিন কুদ্দুস মেয়েকে নিয়ে যান ভুঞাপুরে তার বন্ধু মোকাদ্দেস ওরফে মোকা মণ্ডলের বাড়িতে। মোকা মণ্ডল আশ্বাস দেয়, ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবে, এর জন্য কিছু দিন তার স্বামী নাছিরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে। এই আশ্বাস দিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশে রওনা দেয় তারা।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় তুলসীগঙ্গা নদীর পাশে রাতের অন্ধকারে  হাঁটতে থাকে তারা তিন জন (পারুল, কুদ্দুস ও মোকা)। একপর্যায়ে একটি নির্জন স্থানে পারুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তার বাবা। এরপর মোকা মণ্ডলের সহযোগিতায় পারুলের ওড়না দুই টুকরো করে হাত-পা বেঁধে ফেলে তার। এরপর গলা টিপে হত্যা করে।

মোকাদ্দেস ওরফে মোকা মণ্ডল

এরপর জামাতা নাছির ও তার পরিবারকে ফাঁসাতে একটি গুমের মামলা করেন পারুলের বাবা। মামলার তদন্তে কালিহাতি থানা পুলিশ প্রেমের বিয়ের সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু ভুক্তভোগী পারুলকে না পাওয়ায় এবং ঘটনাস্থল কালিহাতী থানার আওতাধীন না হওয়ায় এই মামলা তাদের এখতিয়ারের বাইরে বলে প্রতিবেদন দাখিল করে। এবার মামলার বাদী পারুলের বাবা কুদ্দুস বারবার নারাজি দিলে টাঙ্গাইলের ডিবি পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডি তদন্তে নামে। তারাও কোনও কিনারা করতে না পেরে প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে। এরপরও ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না কুদ্দুস। সবশেষে আদালত জুডিসিয়াল তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারেন।

এবার কুদ্দুস খাঁ আগের তদন্তের রেফারেন্সসহ  মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে। অভিযোগ করা হয়, নাছির উদ্দীন যৌতুকের জন্য তার মেয়ে পারুলকে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। গত ডিসেম্বরে দায়ের করা এই মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

 

/এএইচ/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মাদক কারবারির কাছে বকেয়া, ৪৭০০ টাকার জন্য গেলো প্রাণ
চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে প্রবাসীকে হত্যা
চুরি হওয়া অন্তঃসত্ত্বা ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি, কারাগারে কসাই
সর্বশেষ খবর
রমজানেই সৌদি-ইরানের বৈঠক
রমজানেই সৌদি-ইরানের বৈঠক
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
রাজধানীতে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
রাজধানীতে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
মঞ্চের অভাবে ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জের থিয়েটার শিল্প
মঞ্চের অভাবে ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জের থিয়েটার শিল্প
সর্বাধিক পঠিত
স্যার না ডেকে ভাই বলায় শিক্ষকের ওপর খেপলেন সরকারি কর্মকর্তা
স্যার না ডেকে ভাই বলায় শিক্ষকের ওপর খেপলেন সরকারি কর্মকর্তা
সোমবার থেকে সরকারি অফিস ও ব্যাংক চলবে নতুন সময়সূচিতে
সোমবার থেকে সরকারি অফিস ও ব্যাংক চলবে নতুন সময়সূচিতে
ইফতার-সেহরি বিক্রিতে ব্যস্ত ওমর সানী ও মাহিয়া মাহি
ইফতার-সেহরি বিক্রিতে ব্যস্ত ওমর সানী ও মাহিয়া মাহি
চলন্ত মোটরসাইকেলে ফণা তুলে বসলো বিষধর সাপ
চলন্ত মোটরসাইকেলে ফণা তুলে বসলো বিষধর সাপ
চেকিংয়ের আগেই আনসার সদস্যকে লাথি মেরে লাগেজ নিয়ে পালিয়েছেন যাত্রী
চেকিংয়ের আগেই আনসার সদস্যকে লাথি মেরে লাগেজ নিয়ে পালিয়েছেন যাত্রী