রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় শিরিন ম্যানশনে বিস্ফোরণে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু দ্বিতীয় তলার একজন ব্যবসায়ীর অর্ধকোটি টাকার বেশি মালামাল নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। আর ভবনটির তৃতীয় তলার পুরোটাই ধসে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা অবশিষ্ট মালামাল খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক ব্যবসায়ী সেখানে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। সামনে রমজান ও ঈদ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দেখা গেছে হতাশা। তবে ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে প্রবেশ করতে অনুমতি দিচ্ছে না প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, শিরিন ম্যানশন ভবনটিতে ১৫টি কক্ষে অফিস ও দোকান ছিল। এরমধ্যে নিচতলায় ছয়টি কাপড়ের দোকান রয়েছে। একই তলায় ধানমন্ডি ক্যাফে-২ নামে একটি খাবারের হোটেল এবং একটি ডেকোরেটরের দোকান রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় একটি লন্ড্রি দোকান, সেলুন, বেস্ট টেইলার্স, বেস্ট টেইলার্সের গোডাউন ও একটি ইনস্যুরেন্সের অফিস ছিল। তৃতীয় তলায় ছিল ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানির অফিস এবং নিউ জেনারেশন নামের একটি দোকান। বিস্ফোরণের সূত্রপাতও এই তলা থেকেই হয়েছে বলে জানান তারা।
বেস্ট টেইলার্সের মালিক আব্দুর রশিদ জানান, তার দোকানে এক কোটি টাকার মালামাল ছিল। সব মিলিয়ে তার অর্ধকোটি টাকার বেশি মালামাল নষ্ট হয়েছে। একই তলার সেলুনের গ্লাস ভেঙেছে। এ ছাড়া নিচতলার হোটেলে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেলের মালিক শামীম চৌধুরী। নিচতলার অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
আব্দুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমার দোকানে তিন কর্মচারী ছিল, একজন ক্রেতাও ছিল। ঘটনার পর আমি ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসি। এসে দেখি সব ভেঙে পড়েছে। আমার দোকানে এক কোটি টাকার মালামাল আছে। শুধু কাপড়ই আছে ৭৫ লাখ টাকার। এরমধ্যে এক পাশে ১৫ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া যে পাশে আমার সবচেয়ে বেশি মালামাল রয়েছে, সেটি এখনও খোলা হয়নি। সেদিকে আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। কারণ, ফায়ার সার্ভিস ওই পাশেই পানি দিয়েছে বেশি। সব মিলিয়ে আমার অর্ধকোটি টাকার বেশি মালামাল নষ্ট হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ দোকানে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। রমজান-ঈদ সামনে রেখে এখন কোথায় দাঁড়াবো বুঝতে পারছি না। সিটি করপোরেশন থেকে জানিয়েছে, আমাদের দ্রুত মালামাল বুঝিয়ে দেবে। তারপর ভবনটি ভেঙে ফেলবে।’
ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কোনও গ্যাসের সংযোগ নেই। তাহলে গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের বিষয়টি তার কাছে রহস্যজনক বলে মনে করেন তিনি।
ওই এলাকার বাসিন্দা ভবন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম লিটন পাশের ভবন সুরাইয়া ড্রিমের ১১ তলায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে নিচে নামার চেষ্টা করি। বিস্ফোরণে তাদের ভবনের ছয়তলা পর্যন্ত ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়।’
ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক সেকেন্ডের জন্য আমি বেঁচে গেছি। পরপর তিনটা আওয়াজ হয়েছে। প্রথমে পূর্ব পাশে। পরে দক্ষিণ ও উত্তরে তিনটা বিকট শব্দ হয়েছে। অল্পের জন্য বেঁচে যাই।’
এ ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত কোনও মামলা হয়নি বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ। তবে সাধারণ ডায়েরি করে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন তারা।
শিরিন ম্যানসনের কেয়ারটেকার আবুল কালাম ৪০ বছর ধরে আছেন সেখানে। অসুস্থ থাকায় ঘটনার সময় ছিলেন না। তিনি জানান, বিধ্বস্ত ওই ভবনটির মালিক শিরিন শারমিন ইংল্যান্ড প্রবাসী। তার বোন জাকিয়া ভবনটির প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আবুল কালামের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন। এই জায়গার মালিক ছিলেন শিরিন শারমিনের বাবা। শিরিন পৈতৃক সূত্রে এই জায়গার মালিক হন। এখানে আগে টিনের ঘর ছিল।
প্রসঙ্গত, এর আগে রবিবার (৫ মার্চ) সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে ওই ভবনের তিনতলায়। এতে তিন জন নিহত এবং আহত হন ১৫ জন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিস্ফোরণে আশপাশের ভবনও কেঁপে ওঠে। ভূমিকম্প হচ্ছে মনে করে অন্যান্য ভবনের লোকজন নিচে নেমে আসে। বিস্ফোরণের পরপর আগুন ধরে যায় শিরিন ম্যানশনে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের চেষ্টায় বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।