ভারত থেকে ফেন্সিডিল’সহ বিভিন্ন ধরনের কাশির সিরাপ বিদেশে রফতানির প্রক্রিয়াকে অনেক কঠিন করে তোলা হলো। এর ফলে চোরাপথে যে ফেন্সিডিল বা অন্যান্য কাফ সিরাপ বাংলাদেশে পাচার হয় তার পরিমাণ অনেক কমে যাবে বলে মনে করছেন ভারতের ফার্মা সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারতের কোনও ওষুধ কোম্পানি যদি বিদেশে কাশির সিরাপ রফতানি করতে চায়, তাহলে তার আগে প্রতিটি কনসাইনমেন্ট থেকে নমুনা পাঠাতে হবে সরকার অনুমোদিত নির্দিষ্ট কিছু ল্যাবে। সেই ল্যাব থেকে ছাড়পত্র (সার্টিফিকেট অব অ্যানালাইসিস) মেলার পরই তারা সে সিরাপ রফতানির অনুমতি পাবে।
নতুন এই নিয়ম বলবৎ হতে যাচ্ছে আগামী ১ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে।
ভারতে ফেন্সিডিল তৈরি করে থাকে বহুজাতিক সংস্থা অ্যাবট
এর আগে গত বছর আফ্রিকার দেশ গ্যাম্বিয়া আর মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে কয়েকটি শিশুমৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে ভারতীয় কাফ সিরাপের নাম জড়িয়ে গিয়েছিল। গ্যাম্বিয়ায় তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) পক্ষ থেকেও ভারতে তৈরি কাফ সিরাপকে ওই মৃত্যুগুলোর জন্য দায়ী করা হয়েছিল।
সেই ঘটনার পর সারা বিশ্বে ওষুধের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক দেশ হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তি বিরাট হোঁচট খেয়েছে। পৃথিবীতে এখন মোট ওষুধের এক-তৃতীয়াংশই তৈরি হয় ভারতে। নরেন্দ্র মোদী সরকার সারা বিশ্বের ‘ফার্মেসি’ বা ‘ওষুধের দোকান’ হিসেবেও ভারতকে তুলে ধরতে চাইছে। কিন্তু গ্যাম্বিয়া ও উজবেকিস্তানের ঘটনাগুলোর পর ভারতের ওষুধ শিল্প নিয়ে যে একটা আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা অনস্বীকার্য।
ভারতে ডিজিএফটি’র এই নতুন পদক্ষেপ যে প্রধানত সেই সঙ্কট দূর করার চেষ্টাতেই, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ঢালাও রফতানি বন্ধ করে তারা ভারতে তৈরি কাশির সিরাপের গুণগত মান ও নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করতে চাইছে, যাতে বিদেশে রফতানি করা কাশির সিরাপের জন্য ভারতকে কোনও ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় না-পড়তে হয়।
এদিকে বাংলাদেশে পাচার হওয়া ফেন্সিডিল যে বহু দিন ধরেই সে দেশে একটি বড় সমস্যা, তা অজানা নয়। কোডিন ফসফেট-যুক্ত এই কাশির সিরাপটিকে সে দেশে অনেকেই নেশার দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করেন। বস্তুত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ এই ওষুধটির এতই চাহিদা যে ভারতের সীমান্তঘেঁষা অঞ্চলে ব্যাঙের ছাতার মতো অজস্র জাল ফেন্সিডিল ওষুধ তৈরির কারখানাও গজিয়ে উঠেছে।
এবং মাঝখানে কয়েক বছরের বিরতির পর ফেন্সিডিলের ক্রমবর্ধমান চোরাকারবার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বড় মাথাব্যথার কারণও হয়ে উঠেছে।
এই পটভূমিতে ভারতের এই নতুন পদক্ষেপ কাশির সিরাপের চোরাকারবারে রাশ টানতে পারবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ভারতে ‘ফেন্সিডিল’ প্রস্তুত করে বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাবট। সেই অ্যাবটের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, কাশির সিরাপ রফতানিতে নতুন কড়াকড়ি বসানোতে তারা খুশি, কারণ এর ফলে বিদেশে জাল বা নিচু মানের ওষুধ রফতানির প্রবণতা কমবে। ‘অ্যাবটের নাম ব্যবহার করে যারা এতদিন জাল ওষুধ তৈরি করছিলেন, তাদের পক্ষে রফতানির জন্য সরকারি সার্টিফিকেট জোগাড় করা কঠিন হবে বলেই আমাদের ধারণা’, বলছিলেন কোম্পানির একজন শীর্ষস্থানীয় এক্সিকিউটিভ।
ভারতে ফার্মা সেক্টরের বিশেষজ্ঞ পার্থ সান্যালও মনে করেন, সরকারি ল্যাবে পরীক্ষা না করেই এতদিন যেভাবে ভারত থেকে কাশির সিরাপ ঢালাও রফতানি হচ্ছিল সেটা বন্ধ হওয়াতে নিচু মানের ওষুধ বিদেশে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি চোরাকারবারও কমবে।