শনিবার (১৫ জুলাই) থেকে সব বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে এই কর্মসূচি দিয়েছে সংগঠনটি। শুক্রবার (১৪ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এই ঘোষণা দেন।
সংগঠনের সভাপতি মো. বজলুর রহমান বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসবভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে। উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। কয়েক বছর ধরে কোনও প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে। তাই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। গত ৮ মার্চে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ মার্চ সারাদেশের জেলা সদরে ও কেন্দ্রীয়ভাবে প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক-বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ১৪ মার্চ বেসরকারি সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনসহ ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং জাতীকরণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
তাছাড়া গত অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে শিক্ষা বাজেটে বরাদ্দ কম রাখায় ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনও আশ্বাস কিংবা যোগাযোগ না করায় আগামীকাল শনিবার থেকে সারাদেশের বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে এবং লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
শেখ কাওছার আহমেদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বাবু রঞ্জিত কুমার সাহা, দাশগুপ্ত আশিষ কুমার, সহ-সভাপতি আলী আসগর হাওলাদার ও বেগম নূরুন্নাহার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মো. সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, অর্থ সম্পাদক মোস্তফা জামান খান, দফতর সম্পাদক মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর হোসেন, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শাহানা বেগম, অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক প্রমুখ।
