X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামীণ সড়কে ‘অপরিকল্পিত’ ব্রিজ-কালভার্ট: পরিবীক্ষণে উঠে এলো নানা ত্রুটি

এমরান হোসাইন শেখ
১৫ জুলাই ২০২৩, ২২:৩০আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১৭:৪২

বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা না করে সারা দেশের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে একই ডিজাইন করা হয়েছে। এগুলোর উচ্চতাও দেওয়া হয়েছে একই মাপের। এতে করে অনেক জায়গায় রাস্তার চেয়ে সেতুর উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ায় গাড়ি উঠতে সমস্যা হচ্ছে। সেতু ও কালভার্টগুলোর সড়কের চারদিকের মাটি ধরে রাখার উইং ওয়ালও খুবই ছোট। এ কারণে ভবিষ্যতে অ্যাপ্রোচ রোড অংশটি ধসে পড়তে পারে।

এমন বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ সম্প্রতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চলমান এ প্রকল্পটির নিবিড় পরিবীক্ষণ করেছে। তাদের ফাইন্ডিংস-এ বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। প্রকল্পটি গ্রহণে সম্ভাব্যতা যাচাই না করার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। বলা হয়েছে— এ প্রকল্প গ্রহণের আগে কোনও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি।

পরিবীক্ষণের সুপারিশে বলা হয়েছে— সেতু ও কালভার্টের জন্য শুধু একটি করে ডিজাইন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নদী বা খালের তুলনায় এই সেতু বা কালভার্ট কোথাও ছোট হয়েছে, আবার কোথাও বড়। প্রকল্প চলমান অবস্থায়ই কার্যাদেশ না দেওয়া সেতু বা কালভার্টগুলোর ডিজাইন পরিবর্তনের সুপারিশ এসেছে।

এছাড়া সেতু ও কালভার্টের ডিজাইনে গ্রামীণ রাস্তার বর্তমান গড় প্রশস্থতা আমলে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে রাস্তাগুলো চওড়া হওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করে সেতুগুলোর প্রস্থও কিছুটা বাড়ানো যেতো। প্রকল্পের নির্ধারিত প্রস্থ অনুযায়ী নির্মাণ হলে ওই সব জায়গায় নতুন ব্রিজ তৈরির প্রয়োজনীতা দেখা দেবে।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে নির্মিত সেতু

রাস্তার উচ্চতা বিবেচনায় না নিয়ে প্রকল্পের ডিজাইন অনুযায়ী সব সেতুর উচ্চতা একই করা হয়েছে। এতে করে গাড়ি উঠতে অসুবিধা হচ্ছে। এ কারণে নিবিড় পর্যবেক্ষণের সুপারিশে প্রকল্পের যে সেতুগলো এখনও নির্মাণ হয়নি—স্থান বিবেচনায় বাস্তবতার নিরিখে সেগুলোর ডিজাইন পরিবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়াও নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া এবং চলমান বেশকিছু ব্রিজ ও কালভার্টে দৃশ্যমান নির্মাণ ত্রুটির জন্য ঠিকাদারকে জবাবদিহির আওতায় আনা ও মনিটনিং জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। তাদের সুপারিশে ভবিষ্যতে ৫০ কোটি টাকার অধিক প্রকল্প গ্রহণে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও পেশাদারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাঁচার পাশাপাশি স্থান ভেদে ডিজাইনে অসামঞ্জস্যতাসহ বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হবে।

গত ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক অনুমোদিত ৬ হাজার ৫৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাল ছিল জানুয়ারি ২০১৯ হতে জুন ২০২২ পর্যন্ত। কিন্তু করোনার কারণে কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৪ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ৬ হাজার ৫৪৫ কোটি ২৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা করা হয়। প্রাক্কলিত ব্যয়ে জানুয়ারি ২০১৯ হতে জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি কর হয়।

প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪৯২টি উপজেলায় ১৩ হাজার ব্রিজ নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়। যার মোট দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৫৬ হাজার মিটার। প্রকল্প অনুযায়ী ১২ মিটার পর্যন্ত কালভার্ট ৭ হাজার ৮০০টি এবং ১২ মিটারের অধিক ১৫ মিটার পর্যন্ত গার্ডার সেতু ৫ হাজার ২০০টি। ব্রিজগুলো নির্মাণের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৩৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯০৯ কোটি ৫৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা (২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ), বাস্তব অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ০০ শতাংশ। প্রকল্পটির এপ্রিল, ২০২৩ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা বা ৩০ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। সময় বিবেচনায় প্রকল্পের অগ্রগতি অনেকাংশে পিছিয়ে আছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পে ধীরগতির তথ্য উঠে এসেছে। প্রকল্প মেয়াদে কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সেতুগুলো দুই ধরনের-গার্ডার টাইপ এবং বক্স টাইপ। মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়, অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ প্রয়োজন হলেও ১৫ মিটার পর্যন্ত বাধ্যবাধকতা থাকায় সেতুটি এ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে অত্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্মিত রাস্তায় মাত্র কয়েক ফুটের জন্য সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পরিবীক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে- কিছু স্থানে বক্স কালভার্ট বা গার্ডার টাইপ সেতুতে দেখা যায়, অ্যাপ্রোচ রোড দেবে গিয়েছে, রেলিং বা রেলিং পোস্ট-এর কার্স্টি মসৃণ হয়নি, কাস্টিং-এর ক্ষেত্রে বালু এবং সিমেন্টের রেশিও সঠিক ছিল না। কিছু ব্রিজের অতি উচ্চতার কারণে যানবাহন সহজে উঠতে পারে না।

প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি বলে তথ্য উঠে এসেছে নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়- প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুর্বলতা ছিল, যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব, স্থান ভেদে ডিজাইনে অসামঞ্জস্যতাসহ বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। প্রকল্পের ডিপিপিতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের একটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করা আছে। তবে প্রকল্পটির জন্য কোনও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি বলে ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘের সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে। এ সমজাতীয় প্রকল্পের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে স্পষ্ট যে, এ প্রকল্প গ্রহণের আগে কোনও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি।

/আরআইজে/ইউএস/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ