কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে মা, মেয়ে ও ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বারের প্রত্যক্ষ ইন্ধনের প্রমাণ পেয়েছে র্যাব। ঘটনাটিকে পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে র্যাব জানিয়েছে, হামলার আগে বৈঠক, হুমকি ও দলবদ্ধ প্রস্তুতির মাধ্যমে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় নতুন করে আরও ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা হলেন— বায়েজ মাস্টার, মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আউয়াল, আতিকুর রহমান, দুলাল ও আকাশ।
শুক্রবার (৫ জুলাই) রাতে ঢাকার বনশ্রী ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে যৌথবাহিনীর অভিযানে এ ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার (৫ জুলাই) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি বলেন, মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সৃষ্ট উত্তেজনা কাজে লাগিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। ১ জুলাই বোরহান নামে এক তরুণ স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষকের মোবাইল চুরি করে ধরা পড়ে। এরপর তার বাবা পাশের বাড়ির মনির হোসেনের স্ত্রী জোনাকি আক্তার ও তার পরিবারকে অনুরোধ করেন, যেন তারা বিষয়টি মীমাংসায় সাহায্য করে।
জোনাকি আক্তার, তার মা রোকসানা আক্তার রুবি এবং ভাই রাসেল মিয়া বোরহানকে জনরোষ থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা চালান। ২ জুলাই একটি সালিশ বৈঠক ডাকা হয়, যেটি পরিচালনা করেন মেম্বার বাচ্চু মিয়া। বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরে ওই রাতেই স্থানীয়দের নিয়ে একটি গোপন বৈঠক হয়, যেখানে রুবি আক্তারের পরিবারকে ‘শায়েস্তা’ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় বলে জানায় র্যাব। পরদিন ৩ জুলাই সকাল ৭টার দিকে শতাধিক ব্যক্তি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও মেম্বার বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে রুবি আক্তারের বাড়িতে হামলা চালায়। বচসার একপর্যায়ে রুবি, তার মেয়ে জোনাকি ও ছেলে রাসেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় পরিবারের আরও দুই মেয়ে গুরুতর আহত হন, যারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হত্যাকাণ্ডের আগের রাতেই নিহত রাসেল মিয়াকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। এই ঘটনায় নিহত রোকসানা আক্তারের মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মুরাদনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। র্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাতে আরও ছয়জনকে গ্রেফতার করে।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুরো হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত এবং এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। তবে এতে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না বলেও মন্তব্য করেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক। তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যারা প্রকৃত অপরাধী, তারাই গা ঢাকা দিয়েছে। সাধারণ মানুষকে কোনোভাবেই হয়রানি করা হচ্ছে না, এবং ভবিষ্যতেও করা হবে না।”