জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেছেন, উন্নতমানের গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন। এটি আগামীকাল (সোমবার) থেকেই বাস্তবায়ন হবে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেছেন, বাজারে অনেক ধরনের মাংস বিক্রি হয়। আগে যখন সিটি করপোরেশন দাম নির্ধারণ করতো, তখন শুধু গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করতো না। কারণ, মাংস এক রকমের না, অনেক রকমের মাংস আছে। আজ বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের মাংস যে দরে বিক্রি হচ্ছে সেটি আগামীকাল থেকে ৫০ টাকা কম দামে বিক্রি হবে। ভোক্তার মহাপরিচালকের এই দাবির সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করলাম এবং এই জিনিসটা আগামীকাল থেকে অবশ্যই প্রতিপালন করবো।
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর আয়োজিত মাংসের মূল্য কমিয়ে ভোক্তাদের ক্রয়সীমার মধ্যে আনার লক্ষ্যে অংশীজনের অংশগ্রহণে এক কর্মশালায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়। রবিবার (৩০ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কর্মশালাটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন।
মো. ইমরান হোসেন বলেন, মাংসে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও আমাদের দেশে মাংসের দাম এত বেশি কেন এই প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের প্রতিনিয়ত হতে হয়। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা সামনে গরুর মাংস পাঁচশ’ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকার মধ্যে নিয়ে আসবো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর দেশীয় জাতের গরু কৃত্রিম প্রজননের জন্য চার ধরনের সিমেন প্রস্তুত করে। যা হলো–আরসিসি, নর্থবেঙ্গল গ্রে, শাহিওয়াল ও মুন্সীগঞ্জের। আর এসব জাতের একটা গরু থেকে দুধ উৎপাদন করা সম্ভব না। শুধু মাংস উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত এই জাতের একটা দুই বছর বয়সী গরু থেকে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মাংস আহরণ করা সম্ভব। অপরদিকে দেশি গরুর সঙ্গে এসব জাত সংকরায়ণ না করে আমরা যদি ব্রাহমার মতো উন্নত জাতের সংকরায়ণ করি তাহলে সমপরিমাণ শ্রম ও ব্যয়ের পরিবর্তে আমরা দুই বছরের একটা গরু থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি মাংস আহরণ করতে পারবো। এই একটা মাত্র পদক্ষেপেই মাংসের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। যা সরাসরি মাংসের মূল্য হ্রাসে সাহায্য করবে।
এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন হাত ঘুরে পশুর মাংস যখন ভোক্তার কাছে আসে, তখন এই কয়েকটি ধাপের জন্য দাম বেড়ে যায়। তাই মাঝখানের মধ্যস্বত্বভোগীদের সরাতে হবে। উন্নত জাতের বীজ দিতে পারলে গরু এবং মাংসের উৎপাদনও বাড়বে। এছাড়াও কোরবানি এবং অন্যান্য সময় পশু জবাইয়ের পর রক্তগুলো বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে রফতানি করা যাবে। আর এ বিষয়ে একটি কার্যকর উদ্যোগ থাকা দরকার।
তিনি বলেন, পশুর চামড়া যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষণ করা গেলে তৈরি পোশাকের মতো এ খাত থেকে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, আমাদের দেশে একটি গরু মাংসের জন্য তৈরি করতে খাদ্যেই ৭০-৭৫ ভাগ খরচ হয়ে থাকে। অনেক সময় বলা হয় আমাদের দেশের থেকে ভারতে মাংসের দাম কম। এক্ষেত্রে কিন্তু ভিন্ন একটি ব্যাপার আছে। ভারত মূলত হিন্দুপ্রধান দেশ, তাই তাদের ওখানে মাংসের চাহিদা আমাদের দেশের মতো হবে না। তাই তারা কিন্তু মাংসের জন্য গরু উৎপাদন করে না। তাদের মূল থাকে দুধ উৎপাদন, কারণ সেখানে দুধের চাহিদা বেশি।
তিনি আরও বলেন, খামার থেকে কসাইখানা পর্যন্ত আনতে যে খরচ সেটা যদি কমিয়ে আনতে পারি তাহলে দেশে মাংসের দাম কমিয়ে আনা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও অংশ নেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।