সংসদ নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, বিদেশি তৎপরতাও তত বাড়ছে। ভালো নির্বাচনি পরিবেশের পাশাপাশি নির্বাচনে জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা দরকার। তাই জনগণের আস্থা ফিরিয়ে এনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে বর্তমান সংবিধানের আলোকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। এ সময় তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সংকট সমাধানে রাজপথে না থেকে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন।
শনিবার (৫ আগস্ট) ‘নির্বাচনের পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক এডিটরস গিল্ডের সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু।
অর্থনীতি ও রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটের কারণে আজ এই সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারি দলের অধীনে নির্বাচনে সরকার আস্থা আনতে পারেনি। সংবিধানে পরিবর্তন এনে আগামী দুই থেকে তিন বার তত্ত্বাবধায়ক থাকা দরকার।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী (বীর বিক্রম) বলেন, ভোটের অধিকারকে কেন্দ্র করেই সমাবেশ, সহিংসতা। জনগণ সঠিকভাবে ভোট দিতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে, তার দায়িত্ব সরকারের। আর সেটা প্রয়োগ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের যে ক্ষমতা আছে, তার যদি অর্ধেকও পালন করতে পারে, তবে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরবে। কমিশন সঠিকভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারলে, তবেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সংবিধানকে রেখেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথে সমাধানের চেষ্টা না করে বৈঠক করে সমাধান করা সম্ভব।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু তা প্রয়োগ করতে হবে। ক্ষমতা প্রয়োগে অনেক সময় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দোষ সামনে আসে। প্রশাসনকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য তা কঠিন হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন করে না, তাকে প্রশাসন নিয়ে কাজ করতে হয়।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ, এমন মন্তব্য করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আজ যে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা যে আচরণ করছে আমাদের সঙ্গে, যে বিবৃতি দিচ্ছে, আমাদের ওপর ভিসানীতি যেভাবে আরোপ করেছে এবং যেভাবে এটা কার্যকর করার চেষ্টা করছে; এগুলো করে তারা সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।
রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করেছিল, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারাই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা বিপক্ষে অবস্থান করছে, তারা কি কোনও পরিকল্পনা দিয়েছেন, কীভাবে আগামী নির্বাচন হবে?
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কথা বলার সুযোগ আমরাই দিয়েছি মন্তব্য করে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এমন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যে ভিন্নমতের স্থান নেই। সরকার যদি চায়, তাহলে কিছুটা আস্থা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা হতেও পারে।
মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশি কবীর বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের কি এই দেশের নাগরিকদের কাছে দায়বদ্ধতা বেশি নাকি সরকারের প্রতি বেশি? এই বিষয়টা যদি তারা সঠিকভাবে চিন্তা না করে, তাহলে সব সময় এই একই প্রশ্ন, একই আলোচনা রয়েই যাবে।
আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, বিদেশি দেশগুলোকে আমরাই উসকানি দিচ্ছি। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।