X
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
২৭ বৈশাখ ১৪৩২

ওয়াশ খাতে ঢাকায় মাথাপিছু ব্যয় বেশি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ অক্টোবর ২০২৩, ২২:৫৫আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ২২:৫৫

২০২০ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু ওয়াশ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৪৯১ টাকা। এর মধ্যে ঢাকায় জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টাকা। রবিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস (বিএনডব্লিউএ) প্রতিবেদন প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয়। সেখানে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) খাতের সামগ্রিক ব্যয়ের গতিপ্রকৃতি ট্র্যাকিংয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস ২০২০ প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন ওয়াটারএইড দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ড. খায়রুল ইসলাম এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান।

ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস প্রণয়ন কার্যক্রমের ফোকাল পয়েন্ট ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার পর ওয়াশ খাতে চট্টগ্রামে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৯১ টাকা। এ ছাড়া বরিশালে ৩ হাজার ৪৩, খুলনায় ২ হাজার ৯৮৫, ময়মনসিংহে ৩ হাজার ৬৭, রাজশাহীতে ২ হাজার ৯৭২, রংপুরে ২ হাজার ৪০৭ ও সিলেটে ২ হাজার ৮৩৬ টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে ওয়াশ খাতের ব্যয় মোট জিডিপির ২ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশে খানাপ্রতি গড় বার্ষিক ওয়াশ বাবদ ১১ হাজার ৫৭৪ টাকা (পানি বাবদ ১ হাজার ৫০২ টাকা, স্যানিটেশন বাবদ ১ হাজার ৯৮৫ ও স্বাস্থ্যবিধি বাবদ ৮ হাজার ৮৭ টাকা) খরচ করে, যা তাদের বার্ষিক খানার আয়ের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আয়ের পরিমাণ অনুসারে খানার ওয়াশ ব্যয়ের বিভাজন থেকে দেখা যায় যে শহর ও পল্লি উভয় ক্ষেত্রেই দরিদ্র ও দরিদ্রতম আয়ের খানাগুলো তাদের আয়ের বড় অংশ ওয়াশ খাতে ব্যয় করে। এসব তথ্য বিবেচনায় নিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ভবিষ্যতে শহর ও গ্রামীণ এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও অর্থায়নের উদ্যোগ নিতে পারবে বলে আশা করেন বক্তারা।

বাংলাদেশের পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিন (ওয়াশ) খাতের মোট ব্যয়ের হিসাব নির্ধারণের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) আওতাধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস (বিএনডব্লিউএ) প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এলজিডির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় প্রস্তুতের জন্য জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিবিএস ২০২০ সালের খানাভিত্তিক ওয়াশ খাতের ব্যয় নিরূপণের জন্য দেশব্যাপী খানা জরিপ পরিচালনা করে। পাশাপাশি স্থানীয় পরামর্শক সংস্থা, ডাটা ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) লিমিটেড, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ওয়াশ খাতের ব্যয়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে।

আলোচকরা জানান, উদ্যোগটি ওয়াশ-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের প্রবণতা পরিবীক্ষণের জন্য একটি মানদণ্ড বা বেজলাইন পরিমাপক হিসেবে কাজ করবে এবং ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া এটি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬ অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পরিবীক্ষণে সহায়তা করবে।

ওয়াশ খাতের তিনটি উপাদানের (পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিন) মাথাপিছু ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিনে মাথাপিছু ব্যয় (টাকা ২ হাজার ৯৩), পানির (৫০০ টাকা) ও স্যানিটেশন (৮৯৮ টাকা) ব্যয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। মোট ওয়াশ খরচের প্রায় ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যবিধিতে, এরপর ২৬ শতাংশ স্যানিটেশনে ব্যয় হয়। মোট ওয়াশ খরচের ১৪ শতাংশ ব্যয় হয় পানীয় জলের জন্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে অনুযায়ী বাংলাদেশের মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ জনসংখ্যার নিরাপদ পানীয় জলে সরাসরি প্রবেশাধিকার নেই বা সুবিধাবঞ্চিত। জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য নলকূপ ব্যবহার করে। আনুমানিক ১০ শতাংশ জনসংখ্যার ট্যাপ বা পাইপযুক্ত পানীয় জলে সুবিধা রয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শহরে বসবাস করে। শহরে বসবাসকারীদের বেশির ভাগই বড় নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভর করে। ২০২০ সালে শহর এলাকায় বসবাসকারীদের ওয়াশের ব্যয় ছিল ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। একই সময়ে, গ্রামীণ জনসংখ্যা এ খাতে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যেখানে ব্যয়ের ৭৯ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে হস্ত বা মোটরচালিত পাম্প দিয়ে পানি তোলার জন্য।

২০২০ সালে, মোট ওয়াশ ব্যয়ের আনুমানিক ২৬ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা স্যানিটেশন পরিষেবায় ব্যয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা গ্রামীণ এলাকায় এবং ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা শহর এলাকায় ব্যয় করা হয়েছে।

হাত ধোয়া ও মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ব্যয় মোট স্বাস্থ্যবিধি ব্যয়ের ৯৬ শতাংশ। ২০২০ সালে, পরিচ্ছন্নতা পরিষেবার জন্য ব্যয় ছিল ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা, এরপর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির জন্য ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা খানাসমূহ সাবান ও ডিটারজেন্ট সংগ্রহের জন্য ব্যয় করেছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবসান, সবার জন্য সুস্বাস্থ্য, জেন্ডার সমতা, জলবায়ু, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শোভন কর্মসংস্থান এবং গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি এসডিজি ৬ অর্জনে সবার জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের প্রাপ্যতা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) খাতে অগ্রগতি অর্জনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের অংশ হিসেবে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে তথ্য-প্রমাণভিত্তিক পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণের পাশাপাশি ওয়াশ খাতে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নিয়মিতভাবে ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ হালনাগাদ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

ড. খায়রুল ইসলাম বলেন, ওয়াশ খাতের যথাযথ পরিকল্পনার বিভিন্ন চালেঞ্জ মোকাবিলায় ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টসে খানাভিত্তিক ব্যক্তিগত ব্যয় নিরূপণের জন্য খানার ওয়াশ ব্যয় জরিপ পরিচালনা করে প্রাথমিক তথ্য নেয়ার পাশাপাশি ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক জরিপও পরিচালনা করা হয়েছে। প্রাথমিক উপাত্তের সঙ্গে সেকেন্ডারি উপাত্ত সমন্বয় করে সমন্বিত ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রণীত বেঞ্চমার্ক উদ্যোগটি ওয়াশ ব্যয়ের গতিপ্রকৃতি চিহ্নিতকরণ ও এ খাতে অর্থায়নের অবস্থা ট্র্যাকিং করার মাধ্যমে তথ্যপ্রমাণভিত্তিক দূরদর্শী পরিকল্পনা প্রণয়নে সক্ষমতা বাড়াবে।

হাসিন জাহান বলেন, ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস প্রণয়ন ও গ্রহণের মাধ্যমে সর্বজনীন ওয়াশ পরিষেবা নিশ্চিতে সরকার, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সহজতর হবে। সম্ভব হবে ওয়াশ খাতের বর্তমান উন্নয়ন ধারাকে বেগবান করতে যথাযথ অর্থায়নসহ টেকসই ও ন্যায়সংগত পানিসম্পদের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে।

/এসও/এনএআর/
সম্পর্কিত
আব্দুল হামিদের পালিয়ে যাওয়া সরকারের সিগন্যালে হয়েছে: নুর
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে খেলাফত মজলিসের আলোচনাআর যেন কেউ গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়: আলী রীয়াজ
মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের যেসব বিষয়ে আলোচনা হলো
সর্বশেষ খবর
বাড়ির পাশের কৃষিজমিতে পড়ে ছিল স্কুলছাত্রীর মরদেহ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন
বাড়ির পাশের কৃষিজমিতে পড়ে ছিল স্কুলছাত্রীর মরদেহ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন
জাতীয় সনদ নাগরিকের সব অধিকার সুরক্ষিত করতে পারে: আলী রীয়াজ
জাতীয় সনদ নাগরিকের সব অধিকার সুরক্ষিত করতে পারে: আলী রীয়াজ
নোয়াখালীতে অটোরিকশায় ট্রাকের ধাক্কা, মা-মেয়ের মৃত্যু
নোয়াখালীতে অটোরিকশায় ট্রাকের ধাক্কা, মা-মেয়ের মৃত্যু
আব্দুল হামিদের দেশত্যাগে আরও কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 
আব্দুল হামিদের দেশত্যাগে আরও কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক শিবির নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
সাবেক শিবির নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
কলকাতায় যুদ্ধের প্রস্তুতি মমতা সরকারের
কলকাতায় যুদ্ধের প্রস্তুতি মমতা সরকারের
আ.লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে বিরতি ঘোষণা, শাহবাগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন হাসনাত
আ.লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে বিরতি ঘোষণা, শাহবাগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন হাসনাত
আ.লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপি সুস্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায় ছাত্রদল নেতার পদত্যাগ
আ.লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপি সুস্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায় ছাত্রদল নেতার পদত্যাগ