প্রবাসী ওমর ফারুকের স্ত্রী আঁখি আক্তার। ওমর ফারুক বিদেশে থাকা অবস্থায় প্রতিবেশী রুমান শিকদারের (৩৯) সঙ্গে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে আঁখি। পরে ফারুক দেশে ফেরার পর আঁখি সম্পর্কের বিষয়টি রুমানকে গোপন রাখতে অনুরোধ করে। কিন্তু সে বিষয়টি এলাকায় বিভিন্ন জনকে জানায়। এতে আঁখি ও ফারুক ক্ষিপ্ত হয়ে রুমানকে হত্যা করে। বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা এসব কথা বলেন।
ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাঘাশুর পশ্চিম পাড়া এলাকার সিংহ নদী থেকে রুমানের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গত ২২ নভেম্বর আঁখি আক্তার (২৪) ও আলাল মোল্লাকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় ওমর ফারুক আগেই থানা-পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এরা সবাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বাঘাশুর পশ্চিম পাড়া এলাকার বাসিন্দা। রুমান একই এলাকার আবু সিকদারের ছেলে।
গ্রেফতারকৃত ফারুক ও আঁখি এই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘আঁখি ও রোমানের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরে দেশে চলে আসে ফারুক। দেশে এসে আঁখিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে স্বজনদের মধ্যস্থতায় আঁখি ও ওমর ফারুক সংসার শুরু করে। কিছু দিন পর আঁখি আবারও রুমানেরব সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে রুমানের সঙ্গে পালিয়ে অন্যত্র কিছু দিন বসবাস করে আঁখি। খোঁজাখুঁজির পর আঁখি ও রুমানের সন্ধান পায় ফারুক। পরে আঁখিকে বিয়ে করার জন্য রুমানকে চাপ দেয় স্থানীয়রা। রুমান বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এতে আঁখি তার স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে সংসারে ফিরে যায়। এ সময় বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি রুমানকে গোপন রাখতে অনুরোধ করে আঁখি। কিন্তু সে এলাকায় বিভিন্ন জনকে বিষয়টি জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় আঁখি ও ফারুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ মার্চ গভীর রাতে মোবাইল ফোনে রুমানকে ঘরে ডাকে আঁখি। কথা বলার একপর্যায়ে পিছন থেকে লোহার রড দিয়ে রুমানকে আঘাত করে ফারুক। পরে প্রতিবেশী আলাল মোল্লার সহযোগিতায় বাড়ির পাশের সিংহ নদীতে মরদেহ মাটি দিয়ে চাপা দেয়।
লাশ উদ্ধার ও পরিচয় নিশ্চিত হয় যেভাবে
চলতি বছরের ২১ মে সিংহ নদীতে খনন কাজ কারার সময় ভেকুতে অজ্ঞাত ব্যক্তির কঙ্কাল উঠে আসে। বিষয়টা স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা ৯৯৯-এ জানায়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ কঙ্কালের সঙ্গে একটি অস্পষ্ট নেভিব্লু রঙের শার্টের অংশবিশেষ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে নিহতের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরা গিয়ে প্রাথমিকভাবে শার্টের অংশবিশেষ দেখে সেটি রুমানের বলে দাবি করেন।
পরে এস আই মাইদুল ইসলাম কঙ্কালের সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইলের জন্য কঙ্কালটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পাশাপাশি এস আই মাইদুল বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি পাঁচ মাস থানা-পুলিশ তদন্ত শেষে দায়িত্ব পায় পিবিআই। ২২ আগস্ট মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআইর ঢাকা জেলার একটি দল। কঙ্কাল উদ্ধারের পর নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন। পরে নিহতের মেয়ে নুছরাত (১২) ও ছেলে সাইফের (৬) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। ডিএনএ পরীক্ষায় রুমানের পরিচয় নিশ্চিত হয়।