গত নভেম্বরে দেশে ৫৪১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৬৭ জন নিহত এবং ৬৭২ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে নারী ৫৩, শিশু ৬৬ জন।
এ মাসে ২০৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৮১ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার। দুর্ঘটনায় ১০৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, নভেম্বরে পাঁচটি নৌ-দুর্ঘটনায় পাঁচ জন নিহত, তিন জন আহত হয়েছেন। ২২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ এবং আহত হয়েছেন ১৬ জন।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৮১ জন (৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ), বাস যাত্রী ৮ জন (১ দশমিক ৭১ শতাংশ), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপভ্যান-পুলিশভ্যান আরোহী ২০ জন (৪ দশমিক ২৮ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো জিপ আরোহী ১৩ জন (২ দশমিক ৭৮ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১০৬ জন (২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-চান্দের গাড়ি-টমটম-পাওয়ারটিলার-ইট ভাঙার মেশিন গাড়ি) ১৪ জন (২ দশমিক ৯৯ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান আরোহী ১৯ জন (৪ দশমিক ৬ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৭টি (৩৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ) মহাসড়কে, ২৩২টি (৪২ দশমিক ৮৮ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৮১টি (১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৩৩টি (৬ দশমিক ৯ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে আটটি (১ দশমিক ৪৭ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর ৮১টি (১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৫৪টি (৪৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৫টি (১৯ দশমিক ৪০ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৯০টি (১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১টি (২ দশমিক ৩ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-পুলিশভ্যান-অক্সিজেনবাহী ট্যাঙ্কার-মিকচার মেশিন গাড়ি-চাষের ট্রাক্টর ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো জিপ ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-লাটাহাম্বা-টমটম-পাওয়ারটিলার-ইট ভাঙার মেশিন গাড়ি-আখমাড়াই মেশিন গাড়ি) ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ২ দশমিক ১৩ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৯৬টি। এর মধ্যে বাস ৮৩, ট্রাক ১২৬, কাভার্ডভ্যান ৩৩, পিকআপ ২৯, ট্রাক্টর ১২, ট্রলি ১৩, লরি ১৫, ড্রামট্রাক চার, পুলিশভ্যান এক, অক্সিজেনবাহী ট্যাঙ্কার এক, মিকচার মেশিন গাড়ি এক, চাষের গাড়ি এক, মাইক্রোবাস ১২, প্রাইভেটকার ২২, অ্যাম্বুলেন্স পাঁচ, পাজেরো জিপ চার, মোটরসাইকেল ২১১, থ্রি-হুইলার ১৩৯ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩৪ (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-লাটাহাম্বা-টমটম-পাওয়ারটিলার-ইট ভাঙার মেশিন গাড়ি-আখমাড়াই মেশিন গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান ৩৩ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ১৭টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সকালে ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, দুপুরে ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বিকালে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং রাতে ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, প্রাণহানি ২৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ১২ শতাংশ, প্রাণহানি ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, প্রাণহানি ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, প্রাণহানি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ১৩৮টি দুর্ঘটনায় ১১৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগে। ২১টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ৩৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৪৯ জন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে খাগড়াছড়ি জেলায়। দুইটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও প্রাণহানি ঘটেনি।