X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক টুকরো গরম কাপড়ের অপেক্ষায় রাত কাটে তাদের

আবিদ হাসান
২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৮আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৮

সারা দেশের মতো রাজধানীতেও ঝেঁকে বসেছে তীব্র শীত। এর সঙ্গে বাড়ছে শীতকালীন রোগের প্রকোপ। দেশের হাসপাতালগুলোয় দেখা যায় সেই দৃশ্য। শীতের এই তীব্রতা থেকে বাঁচতে যখন সবাই ব্যস্ত থাকে গরম কাপড় নিয়ে, তখন নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষের কাছে তা অধরা।

সারা দেশ থেকে অনেক নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষ ক্ষুধা নিবারণ বা একটু আয় করার আশায় প্রতিনিয়ত আসছে ঢাকায়। তাদের মধ্যে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও, বেশির ভাগই থাকে বাসস্থানহীন। কেউ কেউ নানা জায়গা থেকে গরম কাপড় পেলেও, অনেকের শীতের রাত কাটে গরম কাপড়ের অপেক্ষায়।

ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এই এলাকায় রাত-বিরাতে দেখা যায় অনেক ছিন্নমূল মানুষ। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফুটপাত, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ, শহীদ মিনারসহ জড়ো হন তারা। খোলা জায়গায় ছেঁড়া ও অপরিষ্কার কাপড় মুড়ে শুয়ে থাকেন তারা। আবার কারও কারও সেটিও নেই। কারও পক্ষে সম্ভব হয় প্লাস্টিক বা ত্রিপল দিয়ে তাঁবু করে শুয়ে থাকা। এই দলে আছে শিশু, বৃদ্ধসহ সবাই।

কারও পক্ষে সম্ভব হয় প্লাস্টিক বা ত্রিপল দিয়ে তাঁবু করে শুয়ে থাকা

শাহবাগ এলাকায় শীতের রাতে ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে বসে ছিল ১১ বছর বয়সী বাবুল। তার মা পরের দিনের ফুল বিক্রি করার জন্য ফুল কিনতে গেছেন। তাই আপাতত ছোট ভাইকে সামলানোর দায়িত্ব তার।

ছলছল চোখে বাবুল বলে, আমগো মতো গরিবের লাইগা কিছুই না। ঢাহা শহরে মেলা মানুষ, মেলা বড়লোক, কিন্তু কেউ তো দুই টাকা দেয় না। কিছু চাইলে কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে উল্টো গালি দেয়, ঝাড়ি দেয়। আবার কিছু লোক আছে ভালা। হ্যারা মাঝে মাঝে কম্বল-টম্বল দেয়। এবার এহনো কেউ কিছু দেয় নাই। তয় মনে হয় এবারও কেউ না কেউ দিবো। গরিব হয়ে জন্ম নিছি, ঠান্ডা ছোটবেলা থেকেই সহ্য করতেছি। এখন আর তেমন কিছু মনে অয় না। বড়লোক গো দিক চাইলে মাঝে মাঝে কষ্ট অয় আরকি!

টিএসসির পাশে ফুটপাতে প্লাস্টিকের বস্তা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন হাসন মিয়া। ৭৫ বছর বয়স হলেও নিজের খাবার নিজেকেই জোগাতে হয়। তার স্ত্রী মারা গেছেন, আছেন দুই মেয়ে। মেয়ের সংসারে দারিদ্র্য থাকায় মেয়ের ওপর বোঝা হতে চাননি বলে চলে আসেন ঢাকায়। তাই মানুষের কাছে ভিক্ষা করে চলেন।

ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে মায়ের অপেক্ষায় বাবুল

হাসান মিয়া বলেন, মানুষের কাছে চাই। তারা যা দেয় তা দিয়ে কোনোমতে খাওয়া-দাওয়া আর ওষুধ কিনে খাই। এই কয়েক দিন যা শীত বাড়ছে। সহ্য করা খুব কষ্টকর। শীত বেশি লাগলে মনে ভাবি, কেউ আইসা কম্বল দিয়ে যাইবো। গরম কাপড় হলে ভালো ঘুম যাইতে পারতাম। কথা শেষ করেই আবার প্লাস্টিকের বস্তা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়েন তিনি।

টিএসসি এলাকায় আগে চুড়ি বিক্রি করতেন শাবনুর (৩৮)। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ সব দোকান নিষিদ্ধ করায় এখন আর বসতে পারেন না। তবে প্রায়ই রাতে থাকেন টিএসসি এলাকায়। দুই শিশু সন্তানসহ ছোট দুটি কম্বল নিয়ে শীত পার করছেন তিনি।

শাবনুর জানান, নিজেরটা বাদ দিয়েছেন। বাচ্চাদের এখনও শীতের জামা কিনে দিতে পারেননি তিনি। এখানে প্রতিবছর অনেকেই শিশুদের শীতের কাপড়-কম্বল দেয়। এখনও সেই অপেক্ষায় আছেন বলে জানান তিনি।

তাদের আশা, আবারও কেউ আসবেন সহযোগিতার হাত বাড়াতে

সারা দিন ফুল বিক্রি করে দুই মেয়েকে নিয়ে শহীদ মিনার চত্বরে ঘুমান সাহেদা খাতুন। তিনি জানান, সারা দিন ফুল বিক্রি করে পেট চলে তিন জনের। রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই কোথাও। পদ্মার ভাঙনে সহায়-সম্পত্তি সব হারিয়েছেন। স্বামী ছেড়ে গেছে চার বছর আগে। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকায় আসেন।

তিনি আরও জানান, কোনও কাজ পান না। তাই ফুল বিক্রি করছেন। এতেই নেভে তিন জনের ক্ষুধা। তাই শীতের কাপড় কেনার কোনও ব্যবস্থা করতে পারেননি। প্রতিবছর কিছু শিক্ষার্থী তাদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। তার আশা, আবারও তারা আসবেন সহযোগিতার হাত বাড়াতে। তবেই শান্তির ঘুম দেবেন মেয়েদের নিয়ে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
মুগদায় তীব্র গরমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মৃত্যু
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নারীর মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
মার্কিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায়
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ অব্যাহতমার্কিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায়
বালুবাহী বলগেট থেকে নদীতে পড়ে শ্রমিক নিখোঁজ
বালুবাহী বলগেট থেকে নদীতে পড়ে শ্রমিক নিখোঁজ
পিনাকীসহ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র, মুশফিককে অব্যাহতি
পিনাকীসহ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র, মুশফিককে অব্যাহতি
৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে বান্দরবানে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ
৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে বান্দরবানে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে