ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের বিরুদ্ধে গৃহপরিচারিকার ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাদের চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর নাজমুল হাসান আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী চৈতন্য চন্দ্র হালদার ও আশরাফ উল আলম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
মোহাম্মদপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সাব-ইন্সপেক্টর হেলাল উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত।
ওইদিন সকালে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন গৃহপরিচারিকা প্রীতির বাবা লুকেশ ওড়াং। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪(ক) ধরায় অভিযোগ করা হয়েছে।
শুনানির সময় বিচারক বলেন, আসামিদের কাছ থেকে সেদিনের ঘটনার বিষয়ে শুনি। তখন আশফাকুল হক বলেন, এ ঘটনার একদিন আগে আমার মেয়ে দেশে আসে। সে দেশের বাইরে থাকে। তাকে দেখতে আত্মীয়-স্বজন আসে। আগে একটা মেয়ে ওই জায়গা থেকে পড়ে যে আহত হয় সেই বিষয়টা আমাদের আলাপে উঠে আসে। রাতে গল্প করে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।
তিনি আরও বলেন, সকাল ৮টার দিকে চিৎকার শুনি। আমাদের বাসা জেনেভা ক্যাম্পের পাশে। ছেলেরা বাসার পাশে মাঠে খেলাধুলা করে। আমার স্ত্রী বলে, হয়তো তারা চিৎকার করছে। পরে দেখি অনেক লোক। ওই জায়গার গ্লাস খোলা। মেয়েটা নেই। এরইমধ্যে শত শত লোক জমা হয়ে যায়। আমি রেডি হয়ে নিচে নামতে যাই। তখন গার্ডের সঙ্গে পাশের বিল্ডিংয়ের এক প্রতিবেশী আসে। বলে, আপনার বাসা থেকে একটা মেয়ে পড়ে গেছে। অনেক লোক জমে যাওয়ায় আর নিচে যেতে পারিনি।
এরপর তানিয়া খন্দকার বলেন, মেয়েটা অনেক চঞ্চল ছিল। ওর বড় বোন আমার বাসায় কাজ করতো। আমি ও সে ওকে বারবার নিষেধ করেছি সেখানে না যেতে। আমি বলেছি, ওখানে কুফা আছে, যাবি না। ওর বোন বলেছে, শয়তান আছে যাবি না। ঘটনার দিন সকালে ও পানি খেয়েছে, ফ্রিজ থেকে পিঠাও বের করে খেয়েছে। ওই বিষয় নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল। হয়তো এই কারণে সেখানে গেছে। আর পড়ে গেছে।
তখন আদালত সিসি ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চান। আশফাকুল হক বলেন, ক্যামেরা ছিল। তবে খুব সস্তা। আমার স্ত্রী এটা অনলাইন থেকে কিনেছে। কোনও মেমোরি ছিল না। পরে আদালত বলেন, তাদের উত্তরে সন্তুষ্ট না। প্রত্যেকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো।
জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবাসিক ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে প্রীতি ওড়াং নামে এক কিশোরী গৃহপরিচারিকার মৃত্যু হয়। ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরী ভবনের বাসিন্দা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজ করতো। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামে। বাবার নাম লুকেশ ওড়াং। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
আরও পড়ুন-
প্রীতি উড়ানের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও তার পরিবারের নিরাপত্তা দাবি দুই সংগঠনের
ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আশফাকের বাসায় গৃহকর্মীদের সঙ্গে বারবার একই ঘটনা কেন?
গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার, স্ত্রীসহ সাংবাদিককে নেওয়া হলো থানায়
গৃহকর্মীর মৃত্যু: ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ
গৃহপরিচারিকার মরদেহ উদ্ধার: স্ত্রীসহ সাংবাদিক আশফাকের বিরুদ্ধে মামলা