X
রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
৮ আষাঢ় ১৪৩২

মনে আছে দুই বছর আগের এই ছবির কথা?

উদিসা ইসলাম
১৭ মার্চ ২০২৪, ২২:৩০আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:৪১

ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার বিচারের দাবিতে যখন উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঠিক তখন আবারও সামনে এসেছে ২০২১ সালের আরেকটি অভিযোগের কথা। যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। অভিযোগকারী বলছেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের নারাজির ভিত্তিতে একাধিকবার তদন্ত কমিটি পরিবর্তন করতে হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি শিক্ষাজীবন থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন, সহপাঠীরা ভয়ে পাশে ছিল না। আর অভিযুক্ত শিক্ষক বলছেন, অবন্তিকার মৃত্যুতে যে আন্দোলন তৈরি হয়েছে সেটার ‘ফায়দা’ লোটার চেষ্টা করছে সেই শিক্ষার্থী। কোথাও কিছু প্রমাণ হয়নি। এখন এই বিষয়টি তুলে এনে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে তাকে।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘যৌন হয়রানির বিচার চাই’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষক, নির্মাতা আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে। সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ছবিটি সামনে এলেও ভুক্তভোগীর দাবি অনুযায়ী এই যৌন হয়রানির ঘটনা ২০১৯ সালের এবং তার দুই বছর পরে ২০২১ সালে তিনি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ গ্রহণের পরে তিনি ওই অভিযোগকারীর ক্লাসের কোনও কিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়। প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বাংলাদেশের একজন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জালালের গল্প’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র পরিচালনার যাত্রা শুরু হয়।

সম্প্রতি শিক্ষক ও সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে অবন্তিকার আত্মহত্যার পর আবারও ২০২১ সালের সেই অভিযোগকারী সামনে আসেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, অভিযোগ দাখিলের পর থেকে তার জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তিনি অনেকটা গৃহবন্দি। পুরো লড়াইয়ে কাউকে পাশে না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। তিনি বলেন, বিভাগে এমন অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু হয়রানির শিকার হয়েও বেশিরভাগ মেয়ে চুপ থাকে। কারণ, তারা দেখেছে অভিযোগ করলে আমার মতো জীবন পাবে। প্রথমে অ্যাকাডেমিক জীবন বরবাদ, তারপর সহপাঠীদের থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের সামনে ভালো কোনও ফলাফল তো নেই, তারা কেন অভিযোগ করে আমার মতো বিপদে পড়বে।

অভিযোগকারী তার অভিযোগে বলেছেন কীভাবে শিক্ষকরা এক হয়ে তার বিরুদ্ধ পরিবেশ তৈরি করেছিল। অভিযোগ করার পর বিভাগে সেই শিক্ষকের সামনে থাকা কতটা কঠিন হতে পারে সেটা কেউ বিবেচনা করেনি। সেই শিক্ষক আমার গ্রামের বাড়িতে পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আমার বাবা-মা অসুস্থ, তাদের প্রেসার দিয়েছে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে। অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় আমাকে বিভাগের রুমে দরজা আটকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, একটি টেলিভিশনের জোর দেখিয়ে সেই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ দাপুটে অবস্থায় থাকেন। সেই অর্থে মেয়েটি কোনও সাপোর্ট পায়নি। বিভাগে কথা বলারই সুযোগ পায়নি, সাহস দূরে থাক।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অবন্তিকার দুঃখজনক মৃত্যুর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তাল অবস্থার ‘ফায়দা’ লোটার চেষ্টা করছে সেই ছাত্রী। সে হয়তো বিক্ষুব্ধতায় বঞ্চিত ফিল করছে। এতদিন হয়ে গেলো সুরাহা হলো না। তবে আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে এটার সুরাহা চেয়ে রিট করেছি। সেটার রায় হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে তার মতো করে ব্যবস্থা নিতে বলে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত সুরাহা করলে এটা বারবার উঠতো না। ঝুলিয়ে রেখে দীর্ঘসূত্রতার যে জটিলতা সেটা ভয়াবহ হয়েছে। আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। কেন ওই অভিযোগকারী আর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনে কেবল আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার আলাদা কোনও যোগাযোগ কখনোই হয়নি। নিয়মিত ক্লাস না করায় আমি হয়তো কখনও কড়া করে কিছু বলে থাকতে পারি। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে- তারপরও তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার আগেই তিনি গণমাধ্যমে কমেন্ট করেছেন। তদন্ত কমিটির কেউ কোনও প্রমাণ পায়নি, সারকামসটেন্সিয়াল এভিডেন্সের ভিত্তিতে কিছু প্রমাণ করা যায় না।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি যৌন হয়রানির প্রমাণ পেয়েছে। এবং সেটার ভিত্তিতে সিন্ডিকেট কী ব্যবস্থা নেবে সেই প্রক্রিয়া চলাকালে অভিযুক্ত শিক্ষক ‘ন্যায়বিচার পাবেন না’ শঙ্কা করে আবেদন করেন। সেই কমিটিতে এক্সটার্নাল মেম্বার হিসেবে ছিলেন জগন্নাথের বর্তমান উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম। তিনিই এখন আবার উপাচার্য হিসেবে সিন্ডিকেটে আছেন। যা আইন বিরুদ্ধ হবে জানতে পেরে এই আবেদনের উদ্যোগ নেন ইমন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আইন বিভাগের ডিন মাসুম বিল্লাহকে প্রধান করে আবারও নতুন একটি কমিটি করা হয়।

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান তদন্ত কমিটির প্রধান মাসুম বিল্লাহ বলেন, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল তাদের তদন্তে শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়। সেটা সিন্ডিকেটে রেফার করে। কিন্তু সেই শিক্ষক আপত্তি জানান, তিনি ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। কিছু রিজার্ভেশন দেন। এরপর দুই সপ্তাহ আগে আমার কাছে কেস এসেছে। আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি।

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
জবিতে শিক্ষার্থীদের গুণগত মানোন্নয়নে কাজ করবে ছাত্র সংসদ
মেসে যৌন নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের অভিযোগে শাবির দুই শিক্ষার্থী গ্রেফতার
গোপালগঞ্জে যৌন হয়রানির ঘটনায় সংঘর্ষে আহত ২৫
সর্বশেষ খবর
এক্সিম ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি আখতার হোসেনের পদত্যাগ
এক্সিম ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি আখতার হোসেনের পদত্যাগ
ইরান থেকে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী প্রথম গ্রুপকে আগামী সপ্তাহে দেশে আনার চেষ্টা
ইরান থেকে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী প্রথম গ্রুপকে আগামী সপ্তাহে দেশে আনার চেষ্টা
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
ইরানে মার্কিন হামলাজাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম আমদানিতে আগাম কর কমিয়ে ২ শতাংশ করলো সরকার
রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম আমদানিতে আগাম কর কমিয়ে ২ শতাংশ করলো সরকার
সর্বাধিক পঠিত
ইউরোপীয়দের প্রস্তাবকে অবাস্তব বললেন ইরানি কর্মকর্তা
ইউরোপীয়দের প্রস্তাবকে অবাস্তব বললেন ইরানি কর্মকর্তা
ইরানে মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে উচ্চ সতর্কতা জারি
ইরানে মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে উচ্চ সতর্কতা জারি
‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মারধরের অভিযোগে এসআই বরখাস্ত
‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মারধরের অভিযোগে এসআই বরখাস্ত
ঝুঁকিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা, বন্ধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান
ঝুঁকিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা, বন্ধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান
এবার আমের বাজারে ধস, ৫২ কেজিতে মণ দিয়েও মিলছে না দাম
এবার আমের বাজারে ধস, ৫২ কেজিতে মণ দিয়েও মিলছে না দাম