X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলেকজান্ডার মেঘনা পাড় যেন আরেক কক্সবাজার

আতিক হাসান শুভ
১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:০০আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:১৪

লক্ষ্মীপুরের একেবারে উপকূলীয় অঞ্চল রামগতি উপজেলা। মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষেই এর অবস্থান। অব্যাহত ভাঙনে পৌর শহর চর আলেকজান্ডারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। উপজেলা পরিষদের বারান্দা থেকে মাত্র ১০০ গজের দূরত্বে মেঘনা পাড়। ভাঙন রোধে এ পাড়ে হয়েছে বাঁধ। সেই বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। জোয়ার-ভাটার উঁচু নিচু ঢেউ আঁচড়ে পড়ে কিনারে। বাঁধের ওপর সবসময় যেন পিনপতন হাওয়া লেগেই থাকে। সবাই দাঁড়িয়ে সেই হাওয়া উপভোগ করেন।

বিকাল গড়ালে নদীর ওপারে পশ্চিমের সূর্যাস্তসহ এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। এমন মনোরম পরিবেশ কার না ভালো লাগে। তাই তো প্রতিনিয়ত একটু শান্তির খোঁজে অসংখ্য মানুষের ঢল নামে। এখানকার নতুন বালুর বেলাভূমি, নদীর ঢেউ, জলের মিষ্টি সুর- এসবে মুগ্ধ হন আগতরা। এখানে এলে বাতাসের দোলে শরীর ও মন ভালো হয়ে যায়। তাই তো সবাই বারবার ছুটে আসেন এই মেঘনার পাড়ে।

এই জনপদে বিনোদনের আর তেমন কোনও মাধ্যম নেই বললেই চলে। তাই তো দলবেঁধে পরিবারের সবাই মিলে ভিড় জমান এখানে। ঈদকে ঘিরে এখানে প্রাণের উচ্ছ্বাস বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে বিনোদনপ্রেমীরা। নদী পাড়ে এসে নৌকায় চড়ে ঘুরছেন মেঘনায়। পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে আসা ছোট্ট শিশুরাও উল্লাসে মাতে এখানে এসে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।

স্পিড বোটে চড়ে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটকরা

বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ঢল নামা মেঘনা নদীর পাড় যেন এই অঞ্চলের মানুষের কাছে আরেক কক্সবাজার। নোয়াখালী থেকে ঈদ উপলক্ষে মেঘনা নদীর পাড়ে ঘুরতে এসেছেন তিন বন্ধু তুষার, রাজু ও রাকিব। বাংলা ট্রিবিউনকে তারা জানান, শহরের বন্দিজীবন থেকে নদীর পাড়ে এসে অনেক স্বস্তি লাগছে। তাদের মতে, আলেকজান্ডার মেঘনা পাড়ের প্রকৃতি সত্যিই ভালো লাগার।

লিজা নামের এক তরুণী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেঘনা পাড়ে এসে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার স্বাদ মিটেছে। এখানে জেলেরা রুপালি ইলিশ ধরে। তার সৌন্দর্য নিজ চোখে উপভোগ করা যায়। জীবিত ইলিশ মাছ দেখতে পাওয়া যায়, যা সচরাচর দেখা যায় না। ট্রলারে করে দূরে জেগে ওঠা নতুন চরে ঘোরা যায়। পরিবারসহ এসে বেশ ভালোই লাগছে।

ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বিনোদনের আরও নানান ব্যবস্থা

ঈদ উপলক্ষে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেলে-বুড়ো সবাই আলেকজান্ডার মেঘনা পাড়ে ঘুরতে আসছেন। ছেলে ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নদীর পাড়ে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ নেসার মিয়া। তিনি বলেন, এই উপজেলায় বিনোদনের জন্য আর তেমন কোনও জায়গা নেই। ঈদে যে নাতি-নাতনিদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবো সেই সুযোগটুকুও নেই। তবে মেঘনা পাড় আমাদের বিনোদনের খোরাক মেটায়। এখানে কিছু সংস্কার কাজ করা প্রয়োজন। দূর থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা দরকার। এদিকে কর্তৃপক্ষের ভালোভাবে নজর দেওয়া উচিত।

বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা মেঘনা পাড় সম্পর্কে আবদুল আলিম নামের এক প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক বলেন, মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে আলেকজান্ডার শহর যখন মারাত্মক হুমকির মুখে, ঠিক তখন সেনাবাহিনী নদীর পাড় রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করে। এ বাঁধের ফলে পলি জমে নদীর পাড়ে বেলাভূমি তৈরি হয়ে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। মেঘনার ভাঙন এখনও থামেনি। পড়ে থাকা মেঘনার বাঁধ নির্মাণের বাকি কাজটুকু শেষ করার জোর দাবি জানান এই শিক্ষক।

নদী পাড়ে ঘুরতে আসা বিভিন্ন বয়সী মানুষ

মেঘনা পাড়ের সবচেয়ে ভীতিকর বিষয় হচ্ছে নদীতে কোনও ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই ট্রলার এবং স্পিডবোটে দেদার ঘোরাফেরা করছেন পর্যটকরা। এতে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আজগর আলী বলেন, নিজ জেলার আশপাশে মোটামুটি সব জায়গায় পরিবার নিয়ে ঘোরা হয়েছে। ঈদে মনে হলো মেঘনা পাড়ে আসাটাই উত্তম। সবাই মিলে ট্রলারে করে নদীতে ঘুরলাম। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় ট্রলারে কোনও ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না। তাছাড়া যাত্রীও অনেক বেশি ছিল। এ জন্য কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম।

নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই ট্রলার চালানোর বিষয়ে মাঝি মতিন মিয়া বলেন, এই নদীতে আমার ২২ বছর ধরে ট্রলার চালানোর অভিজ্ঞতা। কখনও কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে দেখিনি। আমরা জোয়ার ভাটা বুঝে ট্রলার চালাই। জোয়ারের সময় কোনও পর্যটক বা যাত্রী ট্রলারে উঠাই না।

মেঘনা পাড়ের সার্বিক বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আমজাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই উপজেলার অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে মেঘনা পাড়। ঈদ উপলক্ষে এখানে আগের তুলনায় ভিড় অনেক বেড়েছে। তাই কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মীরা নিয়োজিত আছেন। এছাড়া ট্রলার এবং স্পিডবোটে পর্যটকদের ঘোরানোর সময় নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে ৫ লাখ পর্যটক, হোটেলে কক্ষ না পেয়ে ভোগান্তি
সর্বশেষ খবর
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে