X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

গাবতলী টার্মিনালের সড়কে গাছের অভাব, পথিক দাঁড়াবে কোথায়?

জুবায়ের আহমেদ
২২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০০আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৫

দেশজুড়ে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। অসহনীয় গরমে সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন রাজধানীবাসী। বড় বড় সড়ক ও কংক্রিটের দালানে ভরপুর এই নগরীতে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাছের উপস্থিতি। গাছের অভাবে সড়কগুলো যেন বিরান ভূমি। অথচ সড়কের পাশে গাছ থাকলে তীব্র গরমেও ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে স্বস্তি পেতো মানুষ। এই শহরে গাছের শূন্যতা যে কত প্রকট, তার অন্যতম দৃষ্টান্ত রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কটি।

রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে সরেজমিন দেখা যায়— টার্মিনালের সামনে ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ফুটপাতের ওপর ও সড়কঘেঁষা বিভিন্ন ভবনের ভেতরে থাকা গাছের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০টির বেশি নয়। সড়কের দক্ষিণ পাশে বাস টার্মিনালের আশপাশে ছায়া দেওয়ার মতো কয়েকটি গাছ থাকলেও বেশিরভাগ অংশে কোনও গাছ নেই। এই সড়কের উত্তর পাশে যেখানে যাত্রীরা বাস থেকে নামেন—সেই অংশে এক কিলোমিটারজুড়ে ছায়া দেওয়ার মতো গাছ রয়েছে দু-একটি। এছাড়া গাবতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে থাকা গাছের কিছু অংশ ফুটপাতের ওপর এসে পড়েছে। তবে গাছগুলো ছোট হওয়ায় পথচারীদের ছায়া দেওয়ার মতো নয়। এক ইঞ্চি জায়গায় ছায়া থাকলেও তাতেই স্বস্তি নিয়ে দাঁড়ান পথচারীরা। পরিবেশবিদরা বলছেন—নানা কারণে টার্মিনাল এলাকায় আরও বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন।

সড়কের উত্তর পাশে ছোট একটি বট গাছের নিচে থাকা শরবত বিক্রেতা রেঙ্গু শেখ বলেন, ১৫ বছর ধরে এই এলাকায় আছি। এখানে রাস্তাঘাট সবই উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু গাছ বাড়েনি, বরং কমছে। তিনি বলেন, এত বড় একটা রাস্তা, অথচ এই ছোট একটা গাছ ছাড়া আশপাশে আর কোনও গাছ নেই। গরমে টিকতে না পেরে মানুষজন একমাত্র এই গাছটির নিচে এসে একটু আরাম পায়।

সড়কের পাশে দুয়েকটি গাছ থাকলেও সেগুলো অনেক ছোট

ছোট এই বট গাছটি বাঁচাতে ৬ জনকে পাহারা দিতে হয়েছিল জানিয়ে গাছটির পেছনে থাকা শাকিব মোটরসের মালিক আবদুল খালেক বলেন, ‘এখানে আরও কিছু গাছ ছিল। রাস্তা ঠিক করার সময় ভাইঙ্গা দিছে। এই গাছটা টিকায়া রাখতে আশপাশের দোকানের ৬ জনকে তখন পাহারা দিতে হয়েছিল। কয় এইখান দিয়ে কারেন্টের লাইন গেছে। গাছ লাগান যাইবো না। কয়েকবার উঠায়া ফালাইতে চাইছিল। আমরা বাধা দিছি। আইজ দেহেন এই গাছটার নিচে দাঁড়ায়া মাইনসে কী আরামটা পাইতাছে।’

বট গাছ পেরিয়ে টেকনিক্যালের দিকে যেতে প্রায় ৩০০ মিটার পরে পাশাপাশি দুটি নিম গাছ দাঁড়িয়ে। এই গাছ দুটোর নিচে বাইক ও সিএনজি অটোরিকশার চালকরা দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বাস থেকে যাত্রীরাও নেমে এই গাছের ছায়ায় এসে দাঁড়ান।

হেমায়েতপুর থেকে যাত্রী নিয়ে আসা বাইকচালক মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘আমাদের পথেঘাটে কাজ। কোনও স্টেশন নাই, অফিসও নাই। তাই আশপাশে কোনও গাছপালা থাকলে তার নিচে গিয়ে দাঁড়াই। গাবতলীর পুরো রাস্তাজুড়ে গাছ লাগানো যেতো। অথচ এই একটা জায়গা ছাড়া আর কোথাও দাঁড়ানোর সুযোগ নাই।’

একটু ছায়া চাই জানিয়ে রংপুর থেকে আসা যাত্রী আলম বলেন, ‘বাড়ির বাস (দূরপাল্লার বাস) থেকে নেমে নতুন আরেকটা বাস উঠে মিরপুর যাবো। বাস না আসা পর্যন্ত দাঁড়ায়া থাকতে হবে। আশপাশে কোনও ছায়া জায়গা নাই। এই গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালাম। কিছুটা তো শান্তি লাগছে।’

যাত্রীদের গণপরিবহনের জন্য দাঁড়াতে হয় গাছের নিচে

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কগুলোতে যে পিচ ঢালাই দেওয়া হয়—সেখানে কালো বিটুমিন ব্যবহার হয়, যা সূর্য থেকে অধিক তাপমাত্রা গ্রহণ করে এবং সড়কে তাপ বাড়ায়। এছাড়া রাস্তায় চলাচল করা গাড়ির ইঞ্জিনের হিট, রাস্তায় গাড়ির চাকার ঘর্ষণেও সড়কে অন্যান্য জায়গায় তুলনায় তাপ বেশি থাকে। বিশেষ করে বাস টার্মিনাল এলাকায় এটা লক্ষণীয়। এসব এলাকায় আমাদের বেশি করে গাছের প্রয়োজন ছিল। অথচ আমরা এসব জায়গা গাছশূন্য করে ফেলছি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় প্রবেশমুখগুলোতে যেসব টার্মিনাল রয়েছে, সেখানে গাছ না থাকায় বাইরে থেকে কেউ এসে এখানে নামলে, অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের নিশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে। হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। এমনিতে সড়কের তাপেও পথচারীরা অসুস্থ হয়ে যান।’

প্রতি তিন মিটার পর পর গাছ থাকা প্রয়োজন জানিয়ে পরিবেশবিদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা খেয়াল করে দেখেছি ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনালের আশপাশে গাছের সংখ্যা কম। তাই অতি দ্রুত পরিকল্পনা নিয়ে এসব এলাকায় গাছ রোপণ করে গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এর মাঝে যাত্রী ও পথচারীদের জন্য যাত্রী ছাউনিরও ব্যবস্থা করতে হবে। যেন তীব্র গরমের সময় তারা কোথাও গিয়ে ছায়ায় বসতে পারেন।

/এপিএইচ/এমওএফ
সম্পর্কিত
মোহাম্মদপুরে দিনব্যাপী পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৯
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শোকে-শ্রদ্ধায় রাজনীতিক মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে স্মরণ
সর্বশেষ খবর
সিটিটিসির আয়োজনে সাইবার অপরাধ তদন্তে সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মশালা শুরু
সিটিটিসির আয়োজনে সাইবার অপরাধ তদন্তে সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মশালা শুরু
বিগ ব্যাশের ড্রাফটে মোস্তাফিজ-রিশাদসহ বাংলাদেশের ১১ ক্রিকেটার
বিগ ব্যাশের ড্রাফটে মোস্তাফিজ-রিশাদসহ বাংলাদেশের ১১ ক্রিকেটার
চট্টগ্রামে আরও ১০ জন করোনায় আক্রান্ত
চট্টগ্রামে আরও ১০ জন করোনায় আক্রান্ত
খুলনায় দুজনের শরীরে করোনা শনাক্ত
খুলনায় দুজনের শরীরে করোনা শনাক্ত
সর্বাধিক পঠিত
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
জয়ের পথে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
জয়ের পথে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে কবে
রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে কবে