X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

গাবতলী টার্মিনালের সড়কে গাছের অভাব, পথিক দাঁড়াবে কোথায়?

জুবায়ের আহমেদ
২২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০০আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৫

দেশজুড়ে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। অসহনীয় গরমে সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন রাজধানীবাসী। বড় বড় সড়ক ও কংক্রিটের দালানে ভরপুর এই নগরীতে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাছের উপস্থিতি। গাছের অভাবে সড়কগুলো যেন বিরান ভূমি। অথচ সড়কের পাশে গাছ থাকলে তীব্র গরমেও ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে স্বস্তি পেতো মানুষ। এই শহরে গাছের শূন্যতা যে কত প্রকট, তার অন্যতম দৃষ্টান্ত রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কটি।

রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে সরেজমিন দেখা যায়— টার্মিনালের সামনে ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ফুটপাতের ওপর ও সড়কঘেঁষা বিভিন্ন ভবনের ভেতরে থাকা গাছের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০টির বেশি নয়। সড়কের দক্ষিণ পাশে বাস টার্মিনালের আশপাশে ছায়া দেওয়ার মতো কয়েকটি গাছ থাকলেও বেশিরভাগ অংশে কোনও গাছ নেই। এই সড়কের উত্তর পাশে যেখানে যাত্রীরা বাস থেকে নামেন—সেই অংশে এক কিলোমিটারজুড়ে ছায়া দেওয়ার মতো গাছ রয়েছে দু-একটি। এছাড়া গাবতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে থাকা গাছের কিছু অংশ ফুটপাতের ওপর এসে পড়েছে। তবে গাছগুলো ছোট হওয়ায় পথচারীদের ছায়া দেওয়ার মতো নয়। এক ইঞ্চি জায়গায় ছায়া থাকলেও তাতেই স্বস্তি নিয়ে দাঁড়ান পথচারীরা। পরিবেশবিদরা বলছেন—নানা কারণে টার্মিনাল এলাকায় আরও বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন।

সড়কের উত্তর পাশে ছোট একটি বট গাছের নিচে থাকা শরবত বিক্রেতা রেঙ্গু শেখ বলেন, ১৫ বছর ধরে এই এলাকায় আছি। এখানে রাস্তাঘাট সবই উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু গাছ বাড়েনি, বরং কমছে। তিনি বলেন, এত বড় একটা রাস্তা, অথচ এই ছোট একটা গাছ ছাড়া আশপাশে আর কোনও গাছ নেই। গরমে টিকতে না পেরে মানুষজন একমাত্র এই গাছটির নিচে এসে একটু আরাম পায়।

সড়কের পাশে দুয়েকটি গাছ থাকলেও সেগুলো অনেক ছোট

ছোট এই বট গাছটি বাঁচাতে ৬ জনকে পাহারা দিতে হয়েছিল জানিয়ে গাছটির পেছনে থাকা শাকিব মোটরসের মালিক আবদুল খালেক বলেন, ‘এখানে আরও কিছু গাছ ছিল। রাস্তা ঠিক করার সময় ভাইঙ্গা দিছে। এই গাছটা টিকায়া রাখতে আশপাশের দোকানের ৬ জনকে তখন পাহারা দিতে হয়েছিল। কয় এইখান দিয়ে কারেন্টের লাইন গেছে। গাছ লাগান যাইবো না। কয়েকবার উঠায়া ফালাইতে চাইছিল। আমরা বাধা দিছি। আইজ দেহেন এই গাছটার নিচে দাঁড়ায়া মাইনসে কী আরামটা পাইতাছে।’

বট গাছ পেরিয়ে টেকনিক্যালের দিকে যেতে প্রায় ৩০০ মিটার পরে পাশাপাশি দুটি নিম গাছ দাঁড়িয়ে। এই গাছ দুটোর নিচে বাইক ও সিএনজি অটোরিকশার চালকরা দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বাস থেকে যাত্রীরাও নেমে এই গাছের ছায়ায় এসে দাঁড়ান।

হেমায়েতপুর থেকে যাত্রী নিয়ে আসা বাইকচালক মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘আমাদের পথেঘাটে কাজ। কোনও স্টেশন নাই, অফিসও নাই। তাই আশপাশে কোনও গাছপালা থাকলে তার নিচে গিয়ে দাঁড়াই। গাবতলীর পুরো রাস্তাজুড়ে গাছ লাগানো যেতো। অথচ এই একটা জায়গা ছাড়া আর কোথাও দাঁড়ানোর সুযোগ নাই।’

একটু ছায়া চাই জানিয়ে রংপুর থেকে আসা যাত্রী আলম বলেন, ‘বাড়ির বাস (দূরপাল্লার বাস) থেকে নেমে নতুন আরেকটা বাস উঠে মিরপুর যাবো। বাস না আসা পর্যন্ত দাঁড়ায়া থাকতে হবে। আশপাশে কোনও ছায়া জায়গা নাই। এই গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালাম। কিছুটা তো শান্তি লাগছে।’

যাত্রীদের গণপরিবহনের জন্য দাঁড়াতে হয় গাছের নিচে

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কগুলোতে যে পিচ ঢালাই দেওয়া হয়—সেখানে কালো বিটুমিন ব্যবহার হয়, যা সূর্য থেকে অধিক তাপমাত্রা গ্রহণ করে এবং সড়কে তাপ বাড়ায়। এছাড়া রাস্তায় চলাচল করা গাড়ির ইঞ্জিনের হিট, রাস্তায় গাড়ির চাকার ঘর্ষণেও সড়কে অন্যান্য জায়গায় তুলনায় তাপ বেশি থাকে। বিশেষ করে বাস টার্মিনাল এলাকায় এটা লক্ষণীয়। এসব এলাকায় আমাদের বেশি করে গাছের প্রয়োজন ছিল। অথচ আমরা এসব জায়গা গাছশূন্য করে ফেলছি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় প্রবেশমুখগুলোতে যেসব টার্মিনাল রয়েছে, সেখানে গাছ না থাকায় বাইরে থেকে কেউ এসে এখানে নামলে, অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের নিশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে। হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। এমনিতে সড়কের তাপেও পথচারীরা অসুস্থ হয়ে যান।’

প্রতি তিন মিটার পর পর গাছ থাকা প্রয়োজন জানিয়ে পরিবেশবিদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা খেয়াল করে দেখেছি ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনালের আশপাশে গাছের সংখ্যা কম। তাই অতি দ্রুত পরিকল্পনা নিয়ে এসব এলাকায় গাছ রোপণ করে গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এর মাঝে যাত্রী ও পথচারীদের জন্য যাত্রী ছাউনিরও ব্যবস্থা করতে হবে। যেন তীব্র গরমের সময় তারা কোথাও গিয়ে ছায়ায় বসতে পারেন।

/এপিএইচ/এমওএফ
সম্পর্কিত
হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যু: ময়নাতদন্তে বিষক্রিয়ার সন্দেহ
আবু সাঈদ হত্যা মামলাঅভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল, সাবেক ভিসিসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
ঢাকায় চিকিৎসায় এসে একই পরিবারের ৩ জনের রহস্যজনক মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
মৃত ও প্রবাসীর নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, নোয়াখালী বিএডিসি কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
মৃত ও প্রবাসীর নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, নোয়াখালী বিএডিসি কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
মিরাজের বাংলাদেশকে সমীহ করছেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক
মিরাজের বাংলাদেশকে সমীহ করছেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক
নতুন শুরুর অপেক্ষায় পঞ্চপাণ্ডবহীন বাংলাদেশ
নতুন শুরুর অপেক্ষায় পঞ্চপাণ্ডবহীন বাংলাদেশ
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট