X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২
ক্যাম্পে পাঁচ বছরের অগ্নিকাণ্ড বিশ্লেষণ

আগুন বেশি লেগেছে বালুখালিতে, রাতের বেলায়

উদিসা ইসলাম
০১ জুন ২০২৪, ২১:০৭আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ২১:১২

এক সপ্তাহের ব্যবধানে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ফের আগুন লেগেছে। শনিবার (১ জুন) বেলা একটার দিকে উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১৩ নম্বর তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। ক্যাম্পে আগুন লাগার ঘটনাকে সব সময়ই ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করছে রোহিঙ্গারা। তবে কারা আগুন লাগায় বা কীভাবে লাগে, সে প্রশ্নে বরাবরই ‘অচেনা লোক’ বলে অভিযোগ তাদের।

গত ৫ বছরে ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশিরভাগ আগুন লেগেছে রাতে। বেশকিছু বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বালুখালি ও উখিয়াজুড়ে। ক্যাম্পে ভেতরে কাজ করা বাইরের লোকেরা বেলা ৪টার পর আর থাকে না। সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ‘অচেনা লোক’ কারা সে প্রশ্ন রয়েই যায়। 

চলতি বছরে (পাচঁ মাসে) উখিয়া শরণার্থী শিবিরে ৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে যায় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উখিয়া স্টেশনের কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম। তার দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ৬০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও রোহিঙ্গাদের হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি।

কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন, ১২ মে ২০২০ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত দুই বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মোট ২২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৩টি আগুন নাশকতামূলক বা ইচ্ছে করে লাগানো হয়েছে। ৯৯টি অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনাজনিত কারণে হয়েছে, আর ৬৩টির কারণ জানা যায়নি। ২০২৩ সালে ৬০টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।’

প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আগুনের উৎসের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছুই বলা হয়নি। তবে আগুন লাগার পরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ছড়ানোর কথা প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই উল্লেখ করা হয়েছে। ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় ঘর, হাসপাতাল ও লার্নিং সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে ক্যাম্পের মাঝিদের দাবি— চারপাশে দাহ্য পদার্থ বেশি থাকায় আগুন ঠেকাতে বেগ পেতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালুখালি ক্যাম্পের এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগুনের ঘটনা সব দুর্ঘটনা বলে আমরা মনে করি না। অনেক আগুন লাগানো হয় শত্রুতাবশত। এলাকায় প্রভাব বিস্তারের ঝামেলাও আছে। এখানে ত্রিমুখী রাজনীতি আছে। আরসা ও আরএসও’র সমর্থক আছে। বনিবনা না হলেও আগুন লাগে।’

বাতাসের কারণে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে, ৮ মার্চ ২০২২ আগুন আসলে লাগায় কারা প্রশ্নে লাম্বাশিয়া ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে বড় বড় আগুন লেগেছে।’ এত নিরাপত্তার ভেতরে এটা কী করে সম্ভব, তা আমাদের জানা নেই। আমাদের বিবেচনা বলে— আগুন অচেনা লোক লাগায়।’ সন্ধ্যার পরে ক্যাম্পে বাইরের মানুষ থাকে না, তখন আগুন লাগায় যারা, তারা অচেনা কেন হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সাধারণত এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য এখানে যে সংগঠনগুলো সক্রিয় এবং আমরা যাদের নাম বলি, কিন্তু তাদের চেহারায় চিনি না, তাদের কথাই বলছি।’

ক্ষতি বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উখিয়া স্টেশনের কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে যে অলিগলি ও রাস্তার যে ধরন— সে কারণে ভেতরে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার পানির উৎসের সংকটও আছে। সেটা শুরু থেকেই বলা হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমেছে। বড় ঘটনার ক্ষেত্রে এই বহুল ঘনবসতিতে কী পরিস্থিতি হতে পারে, তা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই। এমনিতেই দুর্গম পাহাড়ে অবস্থানের কারণে আগুন লাগলে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৫ মার্চ বিকালে উখিয়ার বালুখালি ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় আগুন দ্রুত পার্শ্ববর্তী ৯ এবং ১০ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তদন্ত কমিটি বেশকিছু সুপারিশ দিয়েছিল। যদিও ক্যাম্প তদারকিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মনে করেন— এসব সুপারিশের কোনোটিই বাস্তবায়নের যৌক্তিক পরিবেশ নেই।

 ২০২৩ সালের ৬ মার্চ ক্যাম্পে আগুন লাগার পরের চিত্র সুপারিশের মধ্যে ছিল— রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল উপযোগী করা, ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু ব্যবহার কার— যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি। এছাড়া ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট ও বড় রাস্তার পাশ ছাড়া অন্য স্থানে দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি আউটলেট করা থেকে বিরত থাকা, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ক্যাম্পের প্রবেশমুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের অংশ নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি, ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে পালানো রোধে নিরাপত্তাবেষ্টনী স্থাপন করা।

ক্যাম্পে চাইলেই প্রশস্ত রাস্তা তৈরির সুযোগ নেই উল্লেখ করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নিজেদের মতো করে কিছু উদ্যোগ নিয়ে থাকি। আগুন লাগলে স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে আশেপাশের ঘর ভেঙে ফেলে জায়গা করে দেওয়া হয়। শনিবারের (১ জুন) আগুনের ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে। ক্যাম্প ঘনবসতি ও পাহাড়ি এলাকা, চাইলেও এই রাস্তা চওড়া করা যাবে না। আর বাঁশ ও প্লাস্টিক এত বেশি যে, পানির ব্যবস্থা রেখেও লাভ হয় না। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
আগুনে পুড়ে গেছে রাজবাড়ীর এক ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার
কালীগঞ্জে ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন, চার ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
বলছেন রোহিঙ্গা নেতারাকরিডরের চেয়ে রাখাইনে সেফজোন করলে কাটবে রোহিঙ্গা সংকট
সর্বশেষ খবর
মৌলভীবাজার সীমান্তে দুই দিনে আটক ৫৯ জনকে পুলিশে হস্তান্তর
মৌলভীবাজার সীমান্তে দুই দিনে আটক ৫৯ জনকে পুলিশে হস্তান্তর
লেভারকুসেনকে বিদায় বললেন জাবি, যাচ্ছেন রিয়ালে!
লেভারকুসেনকে বিদায় বললেন জাবি, যাচ্ছেন রিয়ালে!
অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক: ডা. জাহিদ
অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক: ডা. জাহিদ
‘আ.লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা, বিএনপি নয় জনগণ ঠিক করবে’
‘আ.লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা, বিএনপি নয় জনগণ ঠিক করবে’
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
পুলিশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা প্রত্যাহার, দুই জন বরখাস্ত
আবদুল হামিদের দেশত্যাগপুলিশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা প্রত্যাহার, দুই জন বরখাস্ত